ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গান ও কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বিজয় উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

গান ও কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বিজয় উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেষ হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে গানের সুরে কিংবা কবিতার শব্দমালায় ধ্বনিত হলো একাত্তরের চেতনাস্নাত অনুরণন। এমনই আবহ ছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত মানবাধিকার থেকে বিজয় দিবস শীর্ষক বিজয় উৎসবে। শনিবার উৎসবের তৃতীয় দিনে অনুষ্ঠানসূচীর আরেক বৈশিষ্ট্য ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংস্কৃতিক সংস্থার পরিবেশনা। এদিনের আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতের আগরতলায় প্রতিষ্ঠিত দলটির এখনও বেঁচে থাকা শিল্পী পরিবেশন করেন সমবেত সঙ্গীত। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলীর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর রাষ্ট্র ও সমাজে মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক রীতা ভৌমিক। স্বরচিত্র আবৃত্তিচর্চা ও বিকাশ কেন্দ্রের বৃন্দ আবৃত্তির মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মাহিদুল ইসলামের গ্রন্থনায় পরিবেশিত হয় ‘আর কত রক্তের দরকার হবে’ শীর্ষক আবৃত্তি প্রযোজনা। কবিতার উচ্চারণ শেষে নৃত্য-গীতের পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসে মুক্ত বিহঙ্গ একাডেমি ও কমলাপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীরা। এরপর ছিল বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সংস্থার সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনা। স্বদেশের বন্দনায় উদ্দীপ্ত কণ্ঠগুলো এক সুরে গেয়ে শোনায় ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা/ তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা...। এ দলের পক্ষে একক কণ্ঠে গান শোনান মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন। শহীদদের স্মরণ করে পরিবেশন করেন যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা...। সব শেষে ছিল পথনাটকের পরিবেশনা। সগীর মোস্তফার রচনা ও নির্দেশনায় সাত্ত্বিক নাট্য সম্প্রদায় উপস্থাপন করে পথনাটক পাংশু। নাসিমা খানের চিত্রপ্রদর্শনী শিফটিং স্যান্ড ॥ রূপসী বাংলার রূপে বিভোর চিত্রশিল্পী নাসিমা খান। রং-তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে মেলে ধরেন আবহমান বাংলার সবুজ-শ্যামল রূপটি। আর তেমনই সব চিত্রপটে আঁকা ছবি নিয়ে গুলশানের বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে শুরু হলো শিল্পীর চিত্রপ্রদর্শনী। ড্রইং ও পেইন্টিংয়ে সাজানো প্রদর্শনীর শিরোনাম শিফটিং স্যান্ড। শনিবার হেমন্ত সন্ধ্যায় দুই সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন খ্যাতিমান স্থপতি শামসুল ওয়ারেস। শিল্পীর জলরংয়ে চিত্রিত অনেক ল্যান্ডস্কেপ ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। নাসিমা খানের চিত্রকর্মে মিনিমালিস্টিক যে উপস্থাপন তা দর্শককে দেয় বাংলার প্রকৃতির শোভাময় আবেদন। তুলির হাল্কা আঁচড়ের সঙ্গে রঙের সামান্য ব্যবহার আহ্বান জানায় এই বদ্বীপ অঞ্চলের অসামান্য ক্ষমতা আর বিশাল ব্যাপ্তির। নিজের চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে শিল্পীর ভাষ্য, আমার প্রতিটি শিল্পকর্ম আমার কাছে একটি গান অথবা কবিতার মতো। নদীতীরের মালভূমি, স্থল অঞ্চলের যে একঘেয়ে বিষণœতা, ভারি বর্ষণে কৃষ্ণাভ কর্দমাক্ত পুরো অঞ্চল, বাস্তুভিটের স্নিগ্ধ আঁধার বাসা বাঁধে সূর্যের উজ্জ্বল আলোয় ভেসে যাওা সবুজ মাঠের মধ্যখানেÑএ সবই আমার মনে এমন এক দৃশ্যেকল্প রচনা করে যার শেকড় গভীরভাবে নিহিত এই বাংলার শব্দ, গন্ধ ও দৃশ্যে। শিল্পী নাসিমা খানের চিত্রকর্মে কম্পোজিশনের স্বতন্ত্র পরিচিতি খুঁজে পাওয়ার কারণ খুঁজতে গেলে হয়তবা পাওয়া যাবে স্থাপত্য শিল্পে তাঁর পড়াশোনা এবং পেশাদার জীবনে তিনি একজন স্থপতি বলেই। স্থাপত্যশিল্পের প্রভাব, স্থাপত্য নির্মাণের নকশা ও নির্মাণ বিষয়ক কোন কিছু খুব একটা স্পষ্ট আকারে ধরা পরে না নাসিমা খানের চিত্রকর্মে। আবার শিল্পীর ক্যানভাসে অনেক সময়েই ফুটে ওঠে মরুভূমির ল্যান্ডস্কেপও। তবে তঁাঁর কাজে আনুভূমিক এবং উলম্ব রেখার যে নিগূঢ় মেলবন্ধন প্রগতিশীলতার সঙ্গে ধীরগতিতে তিনি ফুটিয়ে তোলেন তা পরিষ্কারভাবেই নির্দেশ করে তঁাঁর স্থাপত্যশিল্পের নৈপুণ্য। বাংলাদেশের অপরিবর্তনশীল ল্যান্ডস্কেপের দৃশ্যগাথা এ প্রদর্শনী চলবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা। তারেক মাসুদ উৎসবের সমাপ্তি ॥ দেশের স্বাধীন বা বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের অনন্যতম এক চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ। আপন মেধায় সেলুলয়েডে রেখেছেন স্বকীয়তার স্বাক্ষর। চলচ্চিত্র আন্দোলনে নতুনত্বের বীজ বুনে সিনেমার ফেরিওয়ালা হয়ে চষে বেড়িয়েছেন দেশজুড়ে। গত ৬ ডিসেম্বর ছিল প্রয়াত এই বরেণ্য নির্মাতার জন্মদিন। আর এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় দুই দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করে তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালা মিলনাতনে তারেক মাসুদ নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী, গানের পরিবেশনা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্মারক বক্তৃতাসহ নানা আয়োজনে সাজানো হয় উৎসব। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া উৎসবের শেষ দিন ছিল শনিবার। সমাপনী দিনে বেলায় তিনটায় শুরু হয় উৎসব কর্মসূচী। সুরে সুরে শুরু হয় আয়োজন। অনুষ্ঠিত হয় মিউজিক ভিডিও কানার হাটবাজারের প্রথম প্রদর্শনী। এরপর ছিল তারেক মাসুদ ও অন্য গীতিকবিদের গানের পরিবেশনা। সুরে সুরে শ্রোতাদের হৃদয়ে স্নিগ্ধতার পরশ ছড়িয়ে দেন শাহ আলম বয়াতী ও তানভীর আলম সজীব। বিকেল সাড়ে চারটায় ছিল তারেক মাসুদ স্মারক বক্তৃতা। তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র, বাঙালী জাতীয়তার নতুন মানচিত্র শীর্ষক বক্তৃতা করেন সাজ্জাদ শরিফ। সেলিনা বাহার জামান স্মারক বক্তৃতা ॥ বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সেলিনা বাহার জামানের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি ও সেলিনা বাহার জামান স্মৃতি পরিষদ শনিবার বিকেলে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে নবম সেলিনা বাহার জামান স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ১৫ বছর পূর্তিতে শালুকের আনন্দ আড্ডা ॥ নবীন-প্রবীণের কথায়, কবিতায়, গানে, পুঁথি পাঠে, স্মৃতিচারণায় ও আলোচনায় ১৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে ছোটকাগজ শালুক। শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর.সি মজুমদার মিলনায়তনে এ আনন্দ আড্ডার আয়োজন করে শালুক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শালুক সম্পাদক কবি ওবায়েদ আকাশ। এরপর বক্তব্য রাখেন এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, কবি রফিক আজাদ, কবি রবিউল হুসাইন, কবি রুবী রহমান, সিদ্দিকুর রহমান। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে কবিতা পাঠ করেন শিহাব সরকার, আলম তালুকদার, চঞ্চল আশরাফ, সরকার আমিন, শাহনাজ মুন্নী, মাহমুদ হাফিজ, মুরশিদ আনোয়ার, রহিমা আফরোজ মনজু, রবী রহমান ও আব্দুল মান্নান প্রমুখ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন মনিকা চক্রবর্তী, পুঁথি পাঠ করেন কাব্য কামরুল।
×