ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শৈত্যপ্রবাহ ধেয়ে আসছে, কনকনে ঠাণ্ডার আভাস

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

শৈত্যপ্রবাহ ধেয়ে আসছে, কনকনে ঠাণ্ডার আভাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তীব্র শীতে বেড়েছে শীতবস্ত্রের দাম এবং শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। শনিবার দিনাজপুরে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এক শিশুর মৃত্যু ঘটে। কুয়াশার কারণে পাঁচ ঘণ্টা বন্ধ থাকে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথে ফেরি চলাচল এবং মুন্সীগঞ্জের লৌহজং চ্যানেলে ফেরির ধাক্কায় পাথরবাহী একটি ট্রলার ডুবে যায়। কুয়াশায় ভিজে যাচ্ছে গাছপালা, রাস্তাঘাট, মাঠ-প্রান্তর। দেশের অনেক জেলায় সরকারী উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাস, ঘন কুয়াশা, সূর্যের লুকোচুরি খেলা এবং উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয়ের নিচে নেমে আসার কারণেই শীতের তীব্রতা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। শীতে ও কুয়াশায় বিপর্যস্ত দেশ। সূর্য ছিল সারা দিন কুয়াশায় ঢাকা। অনেক স্থানে সারা দিনেও সূর্যের আলোর দেখা মেলেনি। শিশুদের পাশাপাশি বৃদ্ধরাও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঝুঁকিপূর্ণ বলে রাতে যান চলাচলও কম। ফেরি ও লঞ্চ চলাচল যাত্রা প্রতিদিনই বিলম্বিত হচ্ছে। ঘন কুয়াশায় বিমান চলাচলেও বিঘœ ঘটছে। দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য অনেক হ্রাস পেয়েছে। এই পার্থক্য যতই হ্রাস পাবে, শীতের তীব্রতা ততই বাড়বে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তাঁরা বলছেন, উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয়ের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর আশপাশের বাংলাদেশের কয়েকটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে বলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। উচ্চ চাপ বলয় বয়ে নিয়ে আসে হিমশীতল ঠা-া হাওয়া। এই হাওয়া সাধারণত ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে। কিন্তু কোন কোন সময় এটি আরও নিচে নেমে গেলে ঠা-ার মাত্রা বাড়ে। মূলত উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয় ভারতের বিহার রাজ্য বরাবর পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ এবং সেই সঙ্গে যশোর অঞ্চলকে ছুঁয়ে বাংলাদেশ ঢুকেছে। ফলে এ অঞ্চলগুলোতে প্রচ- শীত পড়েছে, শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যশোরে ১০ ডিগ্রী। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকাতেই তাপমাত্রা কিছু বেশি ছিল। ঢাকা বিভাগের অন্যান্য অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে ছিল। শীতের মাত্রা আরও বেশি অনুভূত হওয়ার আরও একটি কারণ হলো সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান কমে গেছে। দেশের অধিকাংশ জেলাতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে বিরাজ করছে। সূর্যালোক না থাকাও শীতের মাত্রা বেশি অনুভূত হওয়ার আরও একটি কারণ। আবার কুয়াশা থাকায় ভূ-উপরিতলের তাপমাত্রা দ্রুত শোষিত হয়ে যাচ্ছে। শীতের মাত্রা কমে-বেশি অনুভূত হওয়ার এটিও আরেকটি কারণ বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। শনিবারও রাজধানীতে দিনভর তীব্র শীত অনুভূত হয়। অধিকাংশ সময় সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য সূর্য উঠলেও তেমন তেজ ছিল না। হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা বিরাজ করে দিনভর। বিকেল সাড়ে তিনটার পর রাজধানীর আকাশ যেন কুয়াশার পুরো দখলে চলে যায়। পাশাপাশি বইতে থাকে ঠা-া বাতাস। অধিকাংশ লোকজনকে দিনভর গরম কাপড় ব্যবহার করতে দেখা গেছে। নগরীর শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। শীতবস্ত্রের দামও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। গরম কাপড় দোকানগুলোতে মানুষের ঢল নামে। এ সুযোগে বেড়ে যায় গরম কাপড়ের দাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতা যেন বাড়তে থাকে। কমতে থাকে পথচারীদের সংখ্যাও। স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট থেকে জানান, স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত দু’দিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। মধ্যাহ্ণ পর্যন্ত কুয়াশা থাকায় যানবাহন চলাচল করছে খুবই কম। সন্ধ্যা হতেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। দিনমজুর ও হতদরিদ্র মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে। হাসপাতালগুলোতে ঠা-াজনিত রোগীল চাপ বাড়ছে। অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে বরজের পান হলুদ বর্ণ এবং ঝরে পড়ছে। ঘন কুয়াশায় এ অঞ্চলে লঞ্চ ও বাসের নির্ধারিত সমসূচীতে বিপর্যয় ঘটেছে। নিজস্ব সংবাদদাতা রাঙ্গামাটি থেকে জানান, তীব্র শীতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। প্রত্যন্ত পাহাড়ী পল্লীতে দেখা দিয়েছে শীতজনিত রোগ। কনকনে শীতের কারণে হ্রদে মাছ কম ধরা পড়ছে। এলাকায় শীতবস্ত্রের বিতরণ শুরু হয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও ওষুধ না থাকায় যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না শীতজনিত রোগে আক্রান্তরা। এলাকাবাসীর স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে। স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শনিবার সকালে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলাধীন দগদমা গ্রামের আব্দুর রহমানের ১০ মাসের এক শিশুপুত্র আজিজের মৃত্যু ঘটে। দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে সে মারা যায়। হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ ওয়াহেদ জানান, তীব্র শীতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুটি মারা গেছে। নিজস্ব সংবাদদাতা লালমনিরহাট থেকে জানান, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে হয়ে পড়েছে উত্তরের জনপদ। তুষারের মতো গুঁড়ি গুঁড়ি শিশির পড়ে। খড়কুটায় আগুন জ্বালিয়ে উত্তাপ নিয়েছে মানুষ। মানুষের পাশাপাশি গৃহপালিত পশুও ঠা-ায় কষ্ট পাচ্ছে। পশুদের গায়েও চটের ছালা জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, করতোয়া নদীর চরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকের দফতরের সহকারী কমিশনার মোঃ আব্দুল করিম জানান, শীতার্ত অসহায় মানুষদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ২৬শ’ ৬০ পিস গরম কম্বল প্রেরণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বিতরণ করেছে। রবিবার আরও ১০ হাজার শীতবস্ত্রের চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পাশে রয়েছে সরকার। তবে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বৃত্তশালীরা শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে এলে কাজটি সফলতা পাবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। নিজস্ব সংবাদদাতা লাকসাম (কুমিল্লা) থেকে জানান, কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চল লাকসাম, সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। গত ৫ দিন ধরে সূর্যের আলোর দেখা নেই। ১৮ দিন ধরে ঝরছে ঘন কুয়াশা। জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শত শত মানুষ। লাকসাম সবুজ ছাতা প্রাইভেট ক্লিনিকের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আনোয়ারুল ইসলাম মাসুম জানান, শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সাবধান থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
×