ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাটির উর্বরতা রক্ষায় জৈব সার ব্যবহারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

মাটির উর্বরতা রক্ষায় জৈব সার ব্যবহারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতিরিক্ত মাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহারে বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করে তোলার প্রতি গুরুত্বারোপ এবং কৃষির সকল ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও সমন্বিত পতঙ্গ ব্যবস্থাপনা চালু করতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন। জৈবসার ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাটির উর্বরতা, মৎস্য ও মিঠাপানির উৎসসমূহ রক্ষায় এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। শনিবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার-১৪১৯’ বিতরণকালে পেশা হিসেবে কৃষিকে উপেক্ষা না করার জন্য শিক্ষিত কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল আধুনিক প্রযুক্তি ও সংশ্লিষ্ট তথ্যজ্ঞান প্রয়োগ করে পৈত্রিক খামারে শিক্ষিত যুবকরা আত্মকর্মসংস্থান খুঁজে নেবে এটি একটি গর্বের বিষয়। শেখ হাসিনা ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, তাঁর সরকার বর্তমান মেয়াদের আগামী ৪ বছরে দারিদ্র্য ১০ শতাংশ কমিয়ে আনবে। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম নাজমুল ইসলাম পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। কৃষি খাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৩০ ব্যক্তি ও সংস্থাকে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪১৯’ প্রদান করা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ, আট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে রুপা ও ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ব্রোঞ্জ পুরস্কার দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যে কোন সম্ভাব্য দুর্যোগকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার লক্ষ্যে তাঁর সরকার কৃষি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এই লক্ষ্যে তাঁর সরকার সার, সেচ, জ্বালানী এবং কৃষি যন্ত্রপাতি জনগণের কাছে সহজলভ্য করাসহ কৃষি খাতকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে আমাদের কৃষি খাতে যে কোন সহায়তা করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থাগুলো অনাগ্রহী। তাদের অসম্মতির বিষয়টি বুঝতে পেরেই কৃষির বিষয়টিকে জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছে সরকার। শেখ হাসিনা বলেন, গত ছয় বছরে কৃষি খাতের উন্নয়নে ৪৩ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, উপরন্তু কৃষি যন্ত্রপাতির জন্য ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। কৃষকদের কৃষি সহায়তা কার্ড দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কোন জামানত দিতে না পারার কারণে সাধারণত বর্গাচাষীদের কোন ব্যাংক ঋণ দেয়া হতো না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সেই নিয়ম বাদ দিয়ে বর্গাচাষীদেরও খুবই স্বল্প সুদে ঋণ নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি সহায়তা শুধু ধানেরই নয়, বরং শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ডিম, মাছ এবং মাংস উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মিঠা পানির মাছ উৎপাদনকারী রাষ্ট্র বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। যাঁরা পদক পেলেন ॥ কৃষিতে নারীদের অবদানের জন্য বান্দরবানের মাসিং নু মার্মা, কৃষি গবেষণায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৎস্য চাষের জন্য কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মোঃ সামছুউদ্দিন (কালু), কৃষি সম্প্রসারণে অবদান রাখায় কিশোরগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ছাইদুন্নেছা এবং কৃষি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারকে স্বর্ণপদক দেয়া হয়েছে। স্বর্ণ পদকপ্রাপ্তদের ২৫ গ্রাম ওজনের একটি করে সোনার পদক, ২৫ হাজার টাকা ও সনদ দেয়া হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণে অবদান রাখায় রংপুর ক্যান্টনমেন্টের জিওসি মেজর জেনারেল মোঃ সালাহ উদ্দিন মিয়াজী ও দিনাজপুরের ডাঃ মোঃ আনোয়ার হোসেন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারে বিশেষ সাফল্যের জন্য ঝিনাইদহের মর্জিনা বেগম, কৃষক পর্যায়ে উচ্চ মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য খুলনার মোঃ আবু হানিফ মোড়ল, সামাজিক বনায়নের জন্য চট্টগ্রামের মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি চাষের জন্য গাইবান্ধার আব্দুল গফুর এবং বাণিজ্যিকভিত্তিক খামার স্থাপনের জন্য চিটাগাং মেরিডিয়ান এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও নাটোরের মোঃ সেলিম রেজা রূপার পদক পেয়েছেন। এদের সবাই ২৫ গ্রাম ওজনের একটি রূপার পদক, ১৫ হাজার টাকা ও একটি সনদ নেন প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে। রংপুরের বাঘের বাজার লাইভলিহুড ফিল্ড স্কুল ও ওহিদ শেখ, সাতক্ষীরার ফরিদা পারভীন ও অল্পনা রানী মিস্ত্রী, কুমিল্লার ডাঃ মানবেন্দ্র নাথ সরকার, জাহেদুল হক ও মনজুর হোসেন, পাবনার আঁখি মনি কৃষি খামার ও হাফিজুর রহমান, নওগাঁর মোঃ সালাহ উদ্দিন উজ্জ্বল, যশোরের অঞ্জু সরকার, মৌলভীবাজারের হুমায়ুন কবীর, নীলফামারীর রাজেন্দ্র নাথ রায়, ফেনীর আজিজুল হক, ময়মনসিংহের ইন্তেখাবুল হামিদ, রাঙ্গামাটির জ্যোজিসার মহাস্থবির এবং বগুড়ার বেলাল হোসেন সরদার ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন। এদের সবাইকে ২৫ গ্রাম ওজনের একটি ব্রোঞ্জের পদক, সাড়ে সাত হাজার টাকা ও সনদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
×