ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাম্পার ও ন্যায্য মূল্য

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

বাম্পার ও ন্যায্য মূল্য

রাজধানীতে এখন তরি-তরকারির দাম সর্বনিম্নে। ঢাকাবাসীর জন্য পৌষ মাস বৈকি। কিন্তু কৃষকের জন্য সমূহ সর্বনাশ। ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষকরা হতাশ। চলতি শীত মৌসুমে শাকসবজি ও তরি-তরকারির বাজার নিম্নগামী। ক্ষেতে ফসলের সমারোহ দেখে কৃষকের চোখে স্বপ্ন ছড়ানো দ্যুতি কখনও কখনও গ্রামীণ আবাসস্থল যাপিত জীবনে অনাবিল আনন্দের পোস্টার হয়ে ওঠে। কিন্তু সেই ফসল ওঠার পর কৃষক যখন অতি উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থায় চিরাচরিত ফড়িয়া দৌরাত্ম্যের কারণে উৎপাদন মূল্যের চেয়ে কম দামে ঘাম নিংড়ানো ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হন, তখন কৃষকের হাসিমাখা মুখ মিলিয়ে যায়। সেখানে দেখা দেয় স্বপ্নভাঙ্গার বিবর্ণতা ও দীর্ঘশ্বাসের বার্তাপ্রবাহ। যুগ যুগ ধরে গ্রামীণ কৃষিজীবনের এ চিত্র অনেকটাই একুশ শতকে এসেও প্রায় একই থেকেছে। সবজিচাষীরা বেশি বঞ্চনার শিকার। সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করলে খরচ উঠে আসবে সেই নিশ্চয়তা নেই। রক্তঝরা পরিশ্রমের মূল্য তাঁরা পান না। গ্রামে উৎপাদিত পণ্য কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হয় রাজধানীতে। কয়েক হাত ঘুরে পণ্য আসে। পণ্য মূল্যের সঙ্গে পরিবহন ব্যয় যুক্ত হবার পাশাপাশি পথে পথে নানাজনের জন্য চাঁদা দান ব্যয় বাড়ায়। পর্যাপ্ত হিমাগার না থাকা, বাজার ব্যবস্থায় ফড়িয়াদের দাপট, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, সর্বোপরি স্থানীয় কাঁচাবাজারের প্রতি সংশ্লিষ্টদের দক্ষ দৃষ্টি না থাকায় প্রতি বছর কৃষককে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। সবজি সংরক্ষণের যথেষ্ট ব্যবস্থা কৃষকের নেই, বাজারে দাম নেই। তাই কৃষকরা চায় তার পণ্য হিমাগারে রাখতে। কিন্তু দেশব্যাপী হিমাগার অপর্যাপ্ত হওয়ায় কৃষক দিশেহারা। দেখা গেছে উৎপাদিত সবজি অন্যত্র নিয়ে গিয়ে সংরক্ষণের উদ্যোগও অপ্রতুল। ফলে কৃষকের শ্রমে উৎপাদিত ফসল তার চোখের সামনেই নষ্ট হচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে না। উৎপাদিত ফসলের এই বেহাল দশায় কৃষক চিন্তাগ্রস্ত, বিষণœœ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, চলতি মৌসুমের শুরুতে যে মুলা বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকায় সেই মুলা এখন মাত্র এক টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলে সংবাদপত্রে খবর ছাপা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদির কৃষকরা বিক্রি করতে না পেরে বাজারেই মুলা ফেলে যাচ্ছে। কোথাও তা গো-খাদ্যে পরিণত হয়েছে। ওই অঞ্চলে মুলার বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ব্যাপক ফলন হলেও বাজারদর নেই। ফলে তাদের আহাজারি বেড়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের জন্য নানা রকম সুযোগ-সুবিধা, ভর্তুকি চালু করলেও কৃষি পণ্য সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি আজও। কৃষককে সরাসরি বাজারের অংশীদার করার উদ্যোগ দীর্ঘদিনেও হয়নি। ‘কৃষি বিপণন ও কৃষি ব্যবসা অধিদফতর’ করার পদক্ষেপটিও ফাইলবন্দী। কৃষি বিপণন কেন্দ্রগুলো সঠিকভাবে কাজ করলে উপকৃত হতো কৃষক। কৃষক বাজারগুলো চালু থাকলে দুর্ভোগ লাঘব হতো। বর্তমান সরকার কৃষকবান্ধব। এই সরকারের পক্ষেই সম্ভব কৃষি পণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণকে আরও সুষ্ঠু ও নির্বিঘœ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এতে বন্ধ হতে পারে কৃষকের আহাজারি।
×