ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশের বিভিন্ন স্থানে কনকনে ঠাণ্ডা, জনজীবন বিপর্যস্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪

দেশের বিভিন্ন স্থানে কনকনে ঠাণ্ডা, জনজীবন বিপর্যস্ত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ হিমেল বাতাস, ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। মাত্রাতিরিক্ত কুয়াশার কারণে প্রতিদিনই কমছে দিনের তাপমাত্রা। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন বৃদ্ধ ও শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণীর শ্রমজীবী মানুষ। কুড়িগ্রামে শীতের কারণে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নীলফামারীতে ছিন্নমূল মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে পুরো রাজশাহী অঞ্চল। নওগাঁয় গত ৩ দিন ধরে সূর্যের উদয় হয়নি। চট্টগ্রামে ঘন কুয়াশার কারণে সকাল ও রাতে বিমান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে কর্ণফুলী চ্যানেল, অভ্যন্তরীণ নৌরুট এবং বহির্নোঙ্গর। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চ ও বাসের নির্ধারিত সময়সূচীতেও চরম ঘটেছে বিপর্যয়। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার কুড়িগ্রাম ॥ হিমেল বাতাস, কনকনে ঠাণ্ডা আর ঘন কুয়াশার কারণে কুড়িগ্রামের সর্বত্র জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিনদিন থেকে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়েছে দিনভর। শীত বস্ত্রের অভাবে হত-দরিদ্ররা খড়কুটো জ্বালিয়ে ঠা-া নিবারণের চেষ্টা করছেন। ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মুসাব্বের আলী জানান, তীব্র শীতের কারণে বৃহস্পতিবার রাতে বালাটারী গ্রামের মৃত ওমেদ আলীর পুত্র তমিজ উদ্দিন (৭৫) নামের এক দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কুড়িগ্রাম অঞ্চলের তাপমাত্রা ১৪ থেকে ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা শীতজনিত নানা রোগে। নীলফামারী ॥ হিম শীতল বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছে স্থানীয় জনজীবন। হাত-পা যেন কুঁকড়ে যাচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। চারদিন পর শুক্রবার দুপুরের পর সূর্য উঠলেও কুয়াশার কারণে কিরণের ছটা ছিল মলিন। রাজশাহী ॥ প্রতিদিন সকাল থেকে বইছে উত্তর থেকে আসা হিমশীতল হাওয়া। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে পুরো অঞ্চল। জরুরী কাজ ছাড়া শীতে মানুষ বাড়ির বাইরে না হওয়ায় রিক্সা ও অটোচালকরা পড়েছেন বিপদে। প্রতিদিনই কমছে দিনের তাপমাত্রা। শুক্রবার দুপুরের পর কিছু সময়ের জন্য সূর্যের মুখ দেখা গেলেও উত্তাপ কমিয়ে দেয় হিমেল বাতাস। নগরীর ছিন্নমূল মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে নবজাতক শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলা ও অন্যান্য ফসলে কোল্ড ইনজুরির আশঙ্কা করছেন কৃষক। রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের সূত্র জানায়, গত তিনদিন থেকে রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে পারে। নওগাঁ ॥ ৩ দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই নওগাঁ অঞ্চলে। ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠা-া বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত। বিকেল থেকেই শহরের রাস্তা-ঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। শীতার্ত মানুষ ফিরে যায় নিজ গৃহে। আকাশে রোদ না থাকায় জেলার বয়লার চাতালে ধান শুকানোর কাজ বন্ধ রয়েছে। দুর্ভোগ বেড়েছে চাতাল শ্রমিকদের। শুক্রবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশাও বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় শীতের তীব্রতা। চট্টগ্রাম ॥ চট্টগ্রামেও বাড়ছে শীতের প্রকোপ। সে সঙ্গে কুয়াশাও জেকে বসেছে। সকাল ১০টার আগে সূর্যের দেখা মেলেনি শুক্রবার। এতে বিঘিœত হচ্ছে বিমান চলাচল এবং কর্ণফুলী চ্যানেলে জাহাজ চলাচল। দুটি ক্ষেত্রেই আবহাওয়া বিভাগ সতর্কতা নোটিস জারি করেছে। আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন থেকে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। রাতে পশ্চিম দিক থেকে বইছে হিমেল বাতাস। নগরীতে তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১৮ থেকে ১৯ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। শীত সহনীয় মাত্রা হলেও দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কুয়াশা। ঘন কুয়াশার কারণে জীবনযাত্রা বিঘিœত হচ্ছে। সকাল ও রাতে ফ্লাইট চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে কর্ণফুলী চ্যানেল, অভ্যন্তরীণ নৌরুট এবং বহির্নোঙ্গর। ভোর থেকে কুয়াশার প্রাদুর্ভাব থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলী চ্যানেলে চলাচলকারী নৌযানগুলোকে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বন্ধ রাখা হচ্ছে বড় জাহাজের মুরিং। বহির্নোঙ্গরেও সাবধানতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। কর্ণফুলী নদী মোহনায় কুয়াশার কারণে হালকা নৌযানগুলো চলাচল বিঘœ হচ্ছে। কুয়াশার কারণে নৈশ কোচগুলোও গতিহীন হওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে বিলম্বে। আবহাওয়া অফিস জানায়, আরও কয়েকদিন এ ধরনের তাপমাত্রা থাকবে। কুয়াশাও সহজে কাটবে না। কুয়াশার কারণে শ্রমিকদের কাজে বিঘœ ঘটছে। কৃষক কিষানীরা পড়েছেন দুর্ভোগে। শীত অনুভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের শীতবস্ত্রের দোকানগুলো জমে উঠেছে। বরিশাল ॥ স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানায়, এ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কুয়াশা ছিল শুক্রবার। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুয়াশার স্থায়িত্ব ছিল। ঘন কুয়াশা আরও দুই থেকে দিন থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চ ও বাসের নির্ধারিত সময়সূচীতে চরম বিপর্যয় ঘটে। শুক্রবার জাতীয় দৈনিকের পত্রিকাবাহী গাড়ি বরিশালে এসে পৌঁছে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা পর।
×