ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাধারণ মানুষের মিলনমেলা

দৃষ্টিনন্দন সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

দৃষ্টিনন্দন সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ বিজয়ের মাস। প্রাণের আবেগ বেড়ে গেছে বহুগুণ। এযে চেতনায় লালিত শহীদ মিনার। নজর কাড়া নতুন এই রূপ। একবার দেখতে ছুটে আসছেন সকল শ্রেণীপেশার মানুষ। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এখন মানুষের মিলনমেলা। বুধবার দেশের সবচেয়ে নান্দনিক শহীদ মিনারের উদ্বোধন হয়েছে সিলেটে। অপরূপ নান্দনিকতার সঙ্গে সিলেটের ঐতিহ্যকে মিশিয়ে নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনারটি। ছোট-বড় পাহাড়- টিলা বেষ্টিত সিলেটের চা বাগানগুলোর ফাঁক দিয়ে প্রতিটি নতুন ভোরে নবদিগন্তে রক্তিম সূর্য যেভাবে উঁকি মারে, সেই রূপ ধারণ করে আবহমান বাংলার সংগ্রামী চেতনাকে সমুন্নত রেখে নির্মিত হয়েছে এই শহীদ মিনার। নকশা অনুযায়ী শহীদ মিনারের মূল স্তম্ভের পেছনে অনেকটা সবুজ টিলার মতোই ভাঁজ ভাঁজ আন্দোলিত ভূমি। মূল স্তম্ভের ঠিক মধ্যখানে লাল গোলাকৃতি বস্তুটি অবিকল সূর্যোদয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সিলেট শহরের চৌহাট্টা এলাকায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এখন যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। অপরূপ স্থাপনায় সড়কের পশ্চিমপাশে ঠায় দাঁড়ানো শহীদ মিনার দেখলেই প্রাণের আকুতি কিলবিল করে। কয়েকদিন আগে কাজ সমাপ্তি পর্যায়ে পুনঃনির্মিত শহীদ মিনার উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণার পর পরই উৎসবের আমেজ দেখা দেয় সিলেটজুড়ে। পুরো শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আঁকা হয় দৃষ্টিনন্দন আল্পনা। গত বুধবার সকাল থেকেই লোকারণ্য হয়ে পড়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। সকাল থেকেই চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের গান, লোকগীতি। সন্ধ্যা ৬টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রধান অতিথি হিসেবে শহীদ মিনার উদ্বোধনকালে পুরো শহীদ মিনার এলাকায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। এ সময় মানুষের চাপে বন্ধ হয়ে যায় প্রধান সড়কের যান চলাচল। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী ও সাংস্কৃতিকমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলার সভাপতি আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিসিক’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব। গত বছর হেফাজতে ইসলামীর মিছিল থেকে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয় শহীদ মিনারটি। পরে শহীদ মিনার পরিদর্শনে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এটি পুনঃনির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সিসিক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। এক শ’ ফুট চওড়া ভূমির উপর ৪৫ ফুট উচ্চতার স্তম্ভটির মাধ্যমে আন্দোলিত ভূমি থেকে জেগে ওঠা বাঙালীর আবহমান সংগ্রামী চেতনাকে উপলক্ষ করে শহীদ মিনারটির অনন্য দৃষ্টিনন্দন নকশা আঁকেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক শুভজিৎ চৌধুরী। তাঁর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন আরো কয়েকজন। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর প্রায় ৩কোটি টাকা ব্যয়ে শহীদ মিনার পুনঃনির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। শহীদ মিনারের আগের ১৯ শতক জমির সঙ্গে শহীদ সামসুদ্দীন হাসপাতাল থেকে আরো ১৭ শতক জমি নিয়ে নির্মিত হয় নতুন শহীদ মিনারটি। বুধবার শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তির উত্তরসূরিরা আমাদের প্রাণের শহীদ মিনারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। ওরা পরাজিত শক্তি। তারা জানে না বিজয়ী জাতিকে কখনও রুখে দেয়া যায় না। শহীদ মিনারের পুনঃনির্মাণ থেকে পরজিত শক্তির শিক্ষা নেয়া উচিত বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন আমাদের চেতনা সমুজ্জ্বল থাকবে সর্বদা।
×