ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এরশাদের মোনাজাত

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১১ ডিসেম্বর ২০১৪

এরশাদের মোনাজাত

‘দেশে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই’ বলে সে কী আক্ষেপ তাঁর। অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ শুনে কষ্টে-বেদনায় বুঝি ফেটে যায় তাঁর বুক। চোখে জল আসে নেমে। অসহনীয় হয়ে ওঠেন যখন সড়ক দুর্ঘটনা, সাপের কামড়, পানিতে ডুবে বা আগুনে পুড়ে মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যু বা অপমৃত্যু ঘটে। কেন স্বদেশবাসী স্বাভাবিক মৃত্যুর স্থান থেকে দূরে সরে গিয়ে অপমৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেÑ সে নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ জাগে অন্তরে তাঁর। প্রায় ক্রন্দনমথিত হয়ে ওঠে কণ্ঠস্বর। তাই তিনি চাইছেন স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দিতে। ঘরে বা বাড়িতে শয্যায় শুয়ে মৃত্যুকে বরণ করবে মানবকুলÑ তেমনটাই তাঁর চাওয়া। অবশ্য সব মানুষই চায় অপমৃত্যু থেকে রেহাই। কে চায় তার নিজের বা পরিবার পরিজন স্বজন কারও অস্বাভাবিক মৃত্যু হোক? শত্রুও হয়ত চাইবে না এমনটা। সেই না চাওয়ার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন তিনি। অথচ গত ২৪ বছরেও মুছে যায়নি তাঁর ন’বছরের শাসনামলে অস্বাভাবিক মৃত্যুর কাফেলার দৃশ্য। গুলি করে পাখির মতো মানুষ মারার দুঃসাহসিক কাজটি তাঁর শাসনকালে উল্লেখ করার মতো কৃতিত্ব। অজস্র অস্বাভাবিক মৃত্যুর দায়ভার বহন করছেন তিনি আজও। চট্টগ্রামে গণহত্যা চালানো, মিছিলে ট্রাক চড়াও করে ছাত্র হত্যা এরকম অজস্র অস্বাভাবিক মৃত্যুর কৃতিত্ব তাঁর। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সময়ে কত খুন, কত দুর্ঘটনা, কত ফাঁসি হয়েছে, সে সব পরিসংখ্যান সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় মুদ্রিত হয়ে আছে। ২৪ বছর পর অনুতাপ, আক্ষেপ, অনুশোচনায় ভারাক্রান্ত হয়ে এবার স্বাভাবিক মৃত্যু যাতে হয়, সেই ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আর তা করার জন্য মুনাজাত করেছেন, ‘হে আল্লাহ আমাকে আরেকবার ক্ষমতায় বসান, আমি স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দেব।’ শুনে পিলে চমকে উঠতে পারে যে কারও। বিশেষত যাঁরা তাঁর শাসনকাল দেখেছেন, ভুক্তভোগী হয়েছেন, অপমৃত্যুকে বরণকারীর স্বজনরা। জীবন-মরণের সীমানায় দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর দেশবাসীকে আর অপমৃত্যুর কোলে ঠেলে দিতে চাইছেন নাÑ চাইছেন জীবনের শেষ সময়ে একবার দেশ পরিচালনার সুযোগ। আর তা পেলে দেশবাসীকে এমনই শান্তির বিছানায় শুইতে দেবেন, যেখানে তারা স্বাভাবিকভাবেই মরণকে করতে পারবে বরণ। বলবে না কেউ ‘মরণরে তুহু মম শ্যাম সমান।’ বরং মৃত্যুকে ডেকে বলবে, ‘বলো তারে শান্তি, শান্তি!’ একদা রাষ্ট্রপতি ও গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ তাঁর সময়কালে গুলিতে নিহত নূর হোসেনের কথা বলে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চেয়েছেন। নূর হোসেনকে নিয়ে স্মৃতিসৌধ না হওয়ার বেদনার কথাও বলেছেন। ‘স্বৈরাচারের পতন হোক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ বুকে পিঠে লেখা নূর হোসেন যে এরশাদ পতনকে ত্বরান্বিত করেছিলেন, সে বেদনার ভার এরশাদকে পীড়িত করে বলেই অমন আক্ষেপ। এরশাদ দেশজুড়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু, নির্বিচারে মানুষ হত্যার ঘটনাকে সামনে এনেছেন, আর উচ্চারণ করেছেন, প্রতিদিনই আজ শোক দিবস। অথচ তাঁর শাসনামলে গুম, খুনের ঘটনার বিচারে আজকের পরিসংখ্যান অনেক নিচে। তদুপরি তিনি সে পথে আর যেতে চান না। তাই পড়ন্ত বেলায় ক্ষমতার খেলায় শাসনের মেলায় প্রবেশ করতে চান, স্রেফ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি প্রদানে।
×