ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এডিপি বাস্তবায়নের বিশেষ মিশন

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ১১ ডিসেম্বর ২০১৪

এডিপি বাস্তবায়নের বিশেষ মিশন

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়ন বাড়ানোর বিশেষ দায়িত্ব পেয়ে বিশেষ মিশন নিয়ে মাঠে নামছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এজন্য চলতি অর্থবছরের ছয় মাসের মাথায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই হবে এ ধরনের প্রথম বৈঠক। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন তিনি। এতে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিববৃন্দ এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই এ বৈঠক হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা পরিকল্পনা সচিব ভুঁইয়া সফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে এখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কেই দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। কালকের (আজ) বৈঠকের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নলেজে রয়েছে। এ বৈঠকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগুলোর কোনটির কি অবস্থা, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারছে না কেন, সেগুলোর সমস্যা কি, কি কারণে এরকম হচ্ছে এবং এর সমাধান কি হবে এসব বিষয়ে আলোচনার পর দিকনির্দেশনা দেবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। সেই সঙ্গে এডিপি বাস্তবায়ন বাড়ানোর বিষয়েও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা সচিব বলেন, এর আগে বিভিন্ন সময় বৈঠক হলেও এ বৈঠকটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কেননা আমরা সবাই চাই চলতি অর্থবছরের সর্বোচ্চ এডিপি বাস্তবায়ন হোক। এডিপির বাস্তবায়ন বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অবহেলার কারণে অর্থবছরের শুরুতেই এডিপি বাস্তবায়ন স্থবির হয়ে পড়েছে। দৃশ্যমান কোন সমস্যা না থাকলেও শুধু আন্তরিকতার অভাবে অর্থ ব্যয়ে গতি আসছে না। তা ছাড়া বছরের শুরুতে এডিপি বাস্তবায়ন না করে শেষের দিকে তাড়াহুড়ো করে ব্যাপক অর্থ ব্যয়ের একটি ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে বলেও আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের ৫ মাসে (জুলাই-নবেম্বর পর্যন্ত) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়ন হার ছিল সমান। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে। অর্থবছরের পাঁচ মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করতে পেরেছে ১৫ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১৩ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। এ প্রেক্ষাপটে বৈঠকে বসছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। অথচ চলতি অর্থবছরের শুরুতে বিশাল আকারের মোট ৮৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫২ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা ব্যয় করার কথা রয়েছে। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশী উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ২৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর বাইরে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখতে এডিপি বাস্তবায়নের ওপর তাগিদ দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট আপডেট শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় এ তাগাদা দিয়েছিল সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ সময় বলেন, ২০১৫ সালে সার্বিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ব্যাংক ঋণের বেশিমাত্রার সুদের হার, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে ভ্যাট আইন দ্রুত পাস করতে হবে। সেই সঙ্গে রাজস্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) গুণগত বাস্তবায়ন বাড়ানো একটির অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত) তিন মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বাস্তবায়ন হার দাঁড়িয়েছিল ৯ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছিল ১১ শতাংশ। তার আগের ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ব্যয় হয়েছিল বরাদ্দের ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে গত তিন মাসে বরাদ্দ পাওয়া সবচেয়ে বড় দশ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নে বেহাল দশা ছিল। যা ছিল গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন। আইএমইডির সর্বশেষ হিসেবে তিন মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ৭ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। বিদেশী সহায়তার তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। আর সংস্থাগুলোর তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকের তিন মাসেও চারটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে পারেনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ৪৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের অনুকূলে একটি টাকাও ব্যয় হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনও এডিপি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে পারেনি। ২ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ব্যয় করতে পেরেছে মাত্র ১০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের হার শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নও এক শতাংশের মধ্যে। ১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় ব্যয় করতে পেরেছে এক শতাংশ অর্থ। এক শতাংশের মধ্যে অর্থ বয় করেছে মোট চারটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।
×