ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ বছরও শীত সংক্ষিপ্ত হতে পারে

জানুয়ারিতে শৈত্যপ্রবাহ

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ১০ ডিসেম্বর ২০১৪

জানুয়ারিতে শৈত্যপ্রবাহ

মহসিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ এই শীতেও অব্যাহত থাকবে। এ বছর সংক্ষিপ্ত হতে পারে শীতকাল। দেশের শুধু উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে জানুয়ারি মাসেই একদফা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময় তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের কমে নেমে আসতে পারে। এছাড়া চলতি মাসে বয়ে যেতে পারে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। মধ্য ফেব্রুয়ারিতেই শীত বিদায় নেবে। তবে এবার শীতে কুয়াশার প্রাদুর্ভাব তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে এমন তথ্য দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বর্ষা পরবর্তী সময়ে বঙ্গোপসাগরে আচরণ ছিল কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। পর পর বেশ কয়েকটি লঘুচাপ এবং নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় সাগরে। পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ সাগরেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে পুরো নবেম্বর মাসে বৃষ্টিপাতই হয়নি। স্বাভাবিকের চেয়ে ৯৮ ভাগ বৃষ্টি কম হওয়ায় শীতের ভাব সৃষ্টি হয়েছিল ওই মাসে। গত কয়েকদিন ধরে পশ্চিমা বায়ুর বিস্তার শুরু হয়েছে। এতে সারাদেশে তাপমাত্রা কমছে ধীরে ধীরে। ভারতের উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি প্রদেশে তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ৭-৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলেও। এখানেও তাপমাত্রা এখন নিম্নমুখী। তবে শৈত্যপ্রবাহের জন্য অপেক্ষা করতে হবে শেষার্ধ পর্যন্ত। এ সময় দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’টি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আর তীব্র শৈত্যপ্রবাহের জন্য অপেক্ষা করতে হবে মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত। আবহাওয়ার প্রতিকূল অবস্থা অব্যাহত থাকলেও তীব্র শৈত্যপ্রবাহটি মাঝারিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে জানুয়ারি মাসে বেশ কয়েকটি মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আর শীত বিদায় নিতে শুরু করবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহান্তেই। সে সময় মৃদু একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবার পর তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তে শুরু করবে। আবহাওয়ার বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে সতর্কীকরণ বিভাগ জানিয়েছে, এ বছর শীতের দৈর্ঘ্য স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ঘন কুয়াশা বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশার প্রাদুর্ভাব চলতি ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়ে যেতে পারে। আর তা কাটবে ফেব্রুয়ারিতে। জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন নদী অববাহিকায় চলবে কুয়াশা। স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশা পড়তে শুরু করায় শীত বাড়ছে। সূর্যের দেখা মিললেও নেই খরতাপ। গত তিন দিন ধরে নীলফামারীসহ রংপুর, দিনাজপুরের তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া, কাঞ্চন, ঘাঘট ও মহানন্দা নদীবিধৌত আট জেলায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। শীতের ফলে বোরো মৌসুমে কৃষক মাঠে কাজ করতে পারছে না, বোরো বীজতলার ক্ষতি হচ্ছে। ছত্রাক রোগ ও গাছমরা রোগ থেকে ক্ষেত বাঁচাতে ছত্রাকনাশক ¯েপ্র করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে কৃষকদের। দেখা দিয়েছে হাঁপানিসহ নানা শীতকালীন রোগ। শিশুদের দেখা দিয়েছে নিউমোনিয়া। জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিদিন। স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, প্রচ- ঠা-া আর ঘন কুয়াশায় কুড়িগ্রাম ও তার আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কনকনে ঠা-া আর হিমেল বাতাসে কাহিল হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। রাত থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বৃষ্টির মতো টপটপ কুয়াশা পড়ে। ঠা-ার কারণে দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ জমিতে কাজে যেতে পারছে না। জেলার হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। প্রচ- শীতের কারণে চর-দ্বীপচরের দরিদ্র মানুষরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা শীতের কাপড়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে। অপরদিকে তীব্র শীতে আগাম জাতের আলু ও ধানের চারায় কোল্ড ইনজুরি রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের বীজতলায় সম্পূরক সেচ ও ওষুধ ¯েপ্র করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
×