ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-জাপান ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ

ঢাকায় জাপানকে মোকাবেলায় প্রস্তুতি শুরু

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৯ ডিসেম্বর ২০১৪

ঢাকায় জাপানকে মোকাবেলায় প্রস্তুতি শুরু

রুমেল খান ॥ ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কারর পর এবার জাপানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। তাদের বিপক্ষে জাপান অনুর্ধ-২১ ফুটবল মুখোমুখি হবে ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে, বিকেল ৫টায়। এ উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আসছে জাপান ফুটবল দল। এ লক্ষে শনিবার ২৩ সদস্যের প্রাথমিক জাতীয় দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এই ২৩ ফুটবলারকে নিয়ে সোমবার থেকে বাফুফে ভবনে শুরু হবে জাতীয় দলের ক্যাম্প। যদিও প্রথমে ঠিক ছিল বিকেএসপিতে হওয়ার। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। ডাক পাওয়া ফুটবলাররা দুপুর ১২টার মধ্যে বাফুফে ভবনে রিপোর্ট করে ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবুর কাছে। ছিলেন কোচ সাইফুল বারী টিটুও। দ্রোণাচার্য্য শরণে যেসব শিষ্য হাজির ছিলেন, তারা হলেনÑ লিটন, মাজহার, রায়হান, লিংকন, নাসির, ইয়াসিন, ইয়ামিন মুন্না, রাজু, সোহেল রানা, তকলিস, রনি, মিশু, নাসিরুল, শহিদুল, জাহিদ, তপু, ওয়াহেদ, আরিফুল, এমিলি, হেমন্ত এবং মিঠুন। মামুনুল ইসলাম ও জামাল ভুঁইয়া বাদে সবাই রিপোর্ট করেন। বাফুফে জানিয়েছে মামুনুলকে পাওয়ার বিষয়ে তারা চিঠি দিয়েছে এ্যাটলেটিকো ডি কলকাতাকে। আইএসএলে’র সেমিফাইনালে ওঠায় মামুনুলকে জাপানের বিপক্ষে ম্যাচে পাওয়া একটু কঠিন। তার সঙ্গে কলকাতার চুক্তি ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঠিক সেদিনই আইএসএলের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে। তবে মামুনুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি ১৫ ডিসেম্বর ক্যাম্পে যোগ দিতে যাচ্ছেন। যেহেতু এখনও কলকাতার জার্সি গায়ে মাঠে পা রাখেননি, তাই দেশের হয়েই খেলতে ব্যাকুল হয়ে আছেন। আর ঢাকায় ড্যানিশ দূতাবাসে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার জন্য জামাল ভুঁইয়া সময় মতো উপস্থিত হতে পারেনি। ক্যাম্পে বাংলাদেশ দলে নিয়মিত সব ফুটবলারই রয়েছেন। বাদ পড়েছেন দুজন। ইউসুফ সিফাত ও আতিকুর রহমান ফাহাদ। তাদের পরিবর্তে দলে ঢুকেছেন আতিকুর রহমান মিশু ও সাখাওয়াত হোসেন রনি। কোচ সাইফুল বারী টিটু জানান, অনুশীলন হবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সকালে ও বিকেলে। যদিও বলা হয়েছে এটা প্রাথমিক দল, কিন্তু আসলে এটাই চূড়ান্ত দল। কেউ ইনজুরিতে না পড়লে আর কোন খেলোয়াড়কে নেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, ‘জাপানের বিরুদ্ধে এ ধরনের ম্যাচে আমরা এর আগে কখনও খেলিনি। তাই তাদের খেলার ধরন সম্পর্কে জানি না। তবে তারা যে এশিয়ার প্রতিষ্ঠিত ফুটবল শক্তি, এটা সবাই জানে। যে দলটা আসছে, তারা অবশ্য অনুর্ধ-২১ দল। কিন্তু যতদূর জানি, এই দল থেকে আগামী ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে বেশ কজন প্লেয়ার নেয়া হবে। তাদের সঙ্গে যদি আমরা কমপক্ষে ড্র-ও করতে পারি, তাহলে সেটাই হবে আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। জাপানের মতো দলের বিরুদ্ধে আমাদের আক্রমণাত্মক খেলাটা ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য কাউন্টার এ্যাটাক পদ্ধতিতেই দলকে খেলানোর চেষ্টা করব।’ এ ম্যাচ থেকে শিষ্যরা অনেক কিছুই শিখবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন টিটু, ‘এগুলো হলো হাই কনসেন্ট্রেশন, লেভেল বিল্ডআপ, অপরচুনিটি কাজে লাগানো ... এসব।’ হাতে যদিও সময় খুবই কম, মাত্র ১০ দিন অনুশীলনের সময় পাবেন টিটু। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতীয় দল নিয়ে কোন দেশেই লম্বা সময় অনুশীলন করা সম্ভব নয়। এটা সব দেশেরই সমস্যা। তারপরও আমরা চেষ্টা করব এই সময়ের মধ্যে প্লেয়ারদের ফিটনেস ও ম্যাচ টেম্পারমেন্ট নিয়ে কাজ করতে। দুটি কারণে জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হতে দেরি হয়েছে। একটি ব্যক্তিগত কোচিং কোর্স করে বিদেশ থেকে টিটু ফেরেন ২৯ নবেম্বর, আর ভুটানে কিংস কাপে খেলতে যায় শেখ জামাল ও আবাহনী। যশোর ও রাজশাহীতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ফিফা ফ্রেন্ডলি সিরিজ খেলার সময়ই বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন জাপান ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জাপান-বাংলাদেশ ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচের ব্যবস্থা করেন। রিপোর্টিংয়ের দিনে বাফুফে ভবনে কথা হয় জাতীয় ফুটবল দলের একাধিক ফুটবলারের সঙ্গে। জাহিদ হাসান এমিলি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ে আমার গোল ছিল। তবে জাপান খুবই শক্তিশালী দল। তাদের সঙ্গে জেতা কঠিন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে গোলের সুযোগ পেলে তা কাজে লাগাতে সচেষ্ট থাকব। তবে আমাদের হয়তো কাউন্টার এ্যাটাকে যেতে হবে। মাত্র একটি ম্যাচ খেলে জাপানকে রিড করা সম্ভব নয়। যদি ওদের সঙ্গে দুটি ম্যাচ হতো, তাহলে আমাদের খেলার মান আরও উন্নত হতো। তবে সামনেই আমাদের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেলতে হবে। এই ম্যাচটা খেলে আমাদের প্রস্তুতিটা মন্দ হবে না।’ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা খেলব দেশের জন্য। সর্বাত্মক চেষ্টা করব ভাল খেলতে। যদিও জাপান খুবই শক্তিশালী দল। আমাদের মাইনাস পয়েন্ট হচ্ছে আমাদের দলের অনেকেই প্র্যাকটিস বা খেলার মধ্যে ছিলাম না। তারপরও চেষ্টা করব। মনোবলটাই আসল।’ মিঠুন চৌধুরী বলেন, ‘জাপান হচ্ছে বিশ্বকাপে খেলা দেশ। সুযোগ পেলে আমাদের গোল করতে হবে এবং তার লিড ধরে রাখতে। স্ট্রাইকার হিসেবে আমি চাইব অন্তত একটা গোল করতে।’ তকলিস আহমেদ বলেন, ‘ক্লাব বা জাতীয় পর্যায়ে কখনও জাপানের বিরুদ্ধে খেলিনি। ওরা খুবই স্ট্রং। তারপরও টার্গেট থাকবে ভাল রেজাল্ট করার। এটা হলে আমাদের ফুটবল আরও এগিয়ে যাবে। কদিন আগেই ভুটানে গিয়ে শেখ জামালের হয়ে কিংস কাপের শিরোপা জিতে এসেছি। খেলার মধ্যেই ছিলাম। কদিন আগে বাফুফে ভবনে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ফিফা ফ্রেন্ডলি জেতার পর আমাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেখানে বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন কিন্তু আমাদের খেলায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি। প্রকাশ্যেই সমালোচনা করেছিলেন। জাপানের বিরুদ্ধে খেলার সময় এটা আমাদের ভাল খেলতে ও উদ্দীপনা যোগাতে সাহায্য করবে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে দর্শকরা আমাদের সমর্থন দেবে, এটাও আমাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে ভাল খেলতে।’ ম্যাচ শুরুর ৩-৪ দিন আগে টিকেট বিক্রি শুরু হবে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট কেনা যাবে। ম্যাচের দিনও স্টেডিয়ামের কাউন্টারে টিকেট পাওয়া যাবে। টিকেটের দাম ধরা হয়েছে ৫০, ১০০ ও ২০০ টাকা।
×