ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন মোড়কে আসছে ইয়াবা

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

নতুন মোড়কে আসছে ইয়াবা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের কড়াকড়ি অভিযান ও ইয়াবাবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে বছরের শুরুতে মরণনেশা ইয়াবা সরবরাহ কাজ কিছুটা হ্রাস পেলেও বর্তমানে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে সংঘবদ্ধ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। এখন ছোট ছোট প্যাকেটে আর নয়, কৌশল পাল্টিয়ে ‘গ্রিন টি অফ প্যান্ডাস অনলি আর’ নামে মিয়ানমার থেকে এবার নতুন মোড়কে আসছে ওই সর্বনাশা ইয়াবার চালান। দেখতে বিস্কুটের প্যাকেটের মতো হলেও ঐ প্যাকেটভর্তি করা হয়েছে এক হাজার পিস ইয়াবা। বিজিবির একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, ইতোপূর্বে মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে এ রকমের প্যাকেট ভর্তি ইয়াবার একাধিক চালান উদ্ধার করেছে বিজিবি। ইয়াবার বিস্তার রোধকল্পে সীমান্ত এলাকায় বিজিবির কড়াকড়ি অবস্থা দেখে চোরাচালানিরা তাদের কৌশল পাল্টে গ্রিন টি অফ প্যান্ডাস অনলি আর প্যাকেটজাত করে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছে। তবে বিজিবি সদস্যরা এ নতুন মোড়কের ব্যাপারে গোপন সংবাদ জেনে যাওয়ায় আপাতত থমকে গেছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। তিনি আরও জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের যে কোন প্রকারে হোক আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবাসহ প্যাকেটজাতকৃত ওই নতুন মোড়কের গায়ে ইংরেজীতে লেখা রয়েছে ‘গ্রিন টি অফ প্যান্ডাস অনলি আর’। ওইসব প্যাকেটে এক হাজার করে ইয়াবা ট্যাবলেট রয়েছে। প্যাকেটের ভেতর থাকা হালকা কমলা রংয়ের ট্যাবলেটগুলোর গায়ে ‘আর’ শব্দ লেখা আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমারের বাসিন্দা কক্সবাজার সৈকতে চরাঞ্চলে (ফদনার ডেইল) বসবাসকারী রোহিঙ্গা রশিদ মাঝির নেতৃত্বে প্যাকেটজাতকৃত বিস্কুট হিসেবে ওপার থেকে ইয়াবা নিয়ে আসছে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষরা। নতুন মোড়কে ইয়াবা সরবরাহ কাজে ওই প্যাকেটগুলো দেখলে অনেকের ধারণা জন্মে হয়ত বিস্কুটের প্যাকেট। সূত্র জানায়, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বিজিবির তল্লাশি ও সমুদ্রপথে কোস্টগার্ড ও র‌্যাবের অভিযান দেখে চোরাচালানিরা এবার নতুন কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে। সাগরপথে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ফিশিং ট্রলারে ভিজা জালে মুড়ানো ৩০ হাজার ইয়াবাসহ পাঁচ ব্যক্তিকে আটক ও রোহিঙ্গা রশিদ মাঝির একটি ট্রলার জব্দ করে। ইয়াবা গডফাদার রেঙ্গুনে বসবাসকারী টেকনাফের সাইফুল, রোহিঙ্গা রশিদ মাঝি, জিয়াবুলসহ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা সাগরপথকে নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিলেও বর্তমানে গ্রিনটি অফ প্যান্ডাস অনলি আর, কফি মেক্স ও এ্যানার্জি ড্রিংক্স প্যাকেটের ভিতর করে ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে মিয়ানমার থেকে। টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন সূত্র মতে, ওপার থেকে যেসব পণ্য বৈধপথে স্থলবন্দর হয়ে আমদানি করা হচ্ছে, ওইসব প্যাকেটে করে সীমান্ত বাণিজ্যের পণ্য হিসেবে ইয়াবার চালান প্রবেশ করছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। ইতোপূর্বে কক্সবাজার টেকনাফে প্রশাসনের ইয়াবাবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে চলে গেলেও বর্তমানে আবারও নিজ নিজ এলাকায় ফিরে এসে আগের মতো ইয়াবা ব্যবসায় ঝুঁকে পড়ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই ইয়াবাসহ বিক্রেতা ও বহনকারীদের অনেকে আটক হলেও বরাবরই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে গডফাদাররা। গত বুধবার রোহিঙ্গা মহিলার শরীরে বেঁধে নিয়ে আসার পথে প্রায় ৫ হাজার এবং বৃহস্পতিবার কাঁকড়ার বস্তার ভেতর থেকে ৬ হাজার, মাছধরার ভান করে ভিজা জালে মোড়ানো ৩০ হাজার পিস ইয়াবার চালান আটক করেছিল বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা। সূত্রে প্রকাশ, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালীন টেকনাফের সাইফুল করিম প্রকাশ ইয়াবা সাইফুল প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীসহ পাত্তা দেয়নি কাউকে। টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি মোঃ আবদুল্লাহর ভগ্নিপতি হওয়ার সুবাদে দাপটে সাইফুল টেকনাফে নিজের বিলাসবহুল দালানের ভেতর বসিয়েছিল ইয়াবা তৈরির কারখানা। ওইসময় সাইফুল-জুবায়েরের ইয়াবা কার্যক্রম চালানো হয় জোরেশোরে। বর্তমান সরকার ইয়াবা গডফাদারদের তালিকা তৈরি করায় সাইফুল পালিয়ে যায় ইয়াঙ্গুনে। ওখান থেকে সাইফুল বিভিন্ন কৌশলে ইয়াবার চালান পাঠাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। রোহিঙ্গা রশিদ মাঝি এবং সন্ত্রাসী জিয়াবুল ওইসব চালান তাদের গন্তব্য স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে। কক্সবাজারে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকা এখন মাদক ইয়াবার ভয়াবহতায় চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। মিয়ানমারের নাগরিক ও বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের ধনাঢ্যশালী আত্মীয়রা মিলে ইয়াবা চালানের শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কারণে কোনভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না ইয়াবা সিন্ডিকেটের এ অপকর্মকা-। নাফ নদী ও টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে অভিনব কায়দায় ইয়াবা নিয়ে আসা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য মতে, বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ইয়াবা বেচাকেনা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এসব ইয়াবা কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও কয়েক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক এবং আর্থিক সুবিধা দিয়ে চোরাচালানিরা টেকনাফ খায়ুকখালীঘাট ও স্থলবন্দরসহ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট ব্যবহার করে অহরহ ইয়াবার বড় বড় চালান দেশে প্রবেশ করে চলছে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বাণিজ্যের আওতায় টেকনাফ বন্দরে বরইয়ের বস্তার ভিতর করে ৯ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান র‌্যাব সদস্যরা টেকনাফ বন্দর অনুসরণ করে চট্টগ্রামে গিয়ে জব্দ করেছিল। ওই সময় ইয়াবা ব্যবসায় আলোচিত গডফাদার রোহিঙ্গা রশিদ খুলুসহ চার জনকে আটকও করা হয়েছিল।
×