ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের সরকারী কলেজ ॥ পাবলিক ভার্সিটির আওতায় আনতে ভিসির

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪

অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের সরকারী কলেজ ॥ পাবলিক ভার্সিটির আওতায় আনতে ভিসির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ের সরকারী কলেজগুলোকে নিজেদের অধীনে নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত বৈঠকে উপাচার্যরা সেশনজট নিরসনসহ কলেজগুলোর শিক্ষার মান উন্নয়নের বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। কোন উপাচার্যই সরকারের এ উদ্যোগের বিরোধিতা করেননি। অনেকে সরকারীগুলোর সঙ্গে বড় বেসরকারী কলেজগুলোকেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনার পক্ষে মত দিয়েছেন। বৈঠকে কলেজ হস্তান্তর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আট সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। বৈঠকে জানান হয়, বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আড়াই হাজারেরও বেশি কলেজ আছে। এর মধ্যে অনার্স পড়ানো হয় ৫৫৫টি কলেজে। নতুন প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে সরকারী কলেজ আছে ২৮০টি। এর মধ্যে অনার্স পড়ানো হয় ১৮১টিতে। এর আগে গত ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে সরকারী কলেজগুলোকে স্ব স্ব অঞ্চলে অবস্থিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত রাখার নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুসারে শিক্ষামন্ত্রণালয় ৫ নবেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি পাঠান। এরই ধারাবাহিকতায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। বৈঠকে দেশের সকল (৩৬) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ইউজিসির সদস্য, বিভাগীয় প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ইউজিসি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষই বলেছে, সরকারী বেসরকারী মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার কলেজ পরিচালনা করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারী কলেজগুলোকে যদি বিভাগীয় পর্যায়ের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া যায় তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বোঝাও কমবে আবার শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে। ইউজিসি বলেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনার আলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের সেশনজট ও শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারী অনার্স ও মাস্টার্স কলেজকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে যেসব বিভাগ বা বড় জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেসব এলাকার সরকারী কলেজসমূহ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে বলে নির্দেশ প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর দিক-নিদের্শনা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষামন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কমিশনকে অনুরোধ করে। এরই ধারাবাহিকতায় উপাচার্যদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো বৈঠক। যে বৈঠকে উপাচার্যরা সকলেই একমত যে, শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের এ পদক্ষেপ হবে অনেক বড় পদক্ষেপ। চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে শিক্ষার উন্নয়নে খুবই বড় পদক্ষেপ উল্লেখ করে বলেছেন, শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য আমরা সব রকমের পদক্ষেপ নেব। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারী কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে পারলে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। শিক্ষার মান বাড়বে। প্রতিষ্ঠানগুলোও উপকৃত হবে। বৈঠকে সকল উপাচার্যই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। আমরা একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। এ কমিটি কিভাবে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে একটি গাইড লাইন দেবে। বিষয়টি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলছিলেন, সরকারী অনার্স ও মাস্টার্স কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা অতি জরুরী। আমার মনে হয় সরকারী বেসরকারী হাজার হাজার কলেজ পরিচালনা করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কঠিন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান বাড়বে। উপকৃত হবে শিক্ষার্থীরা। বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যই এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছেন। তবে কেউ কেউ বলেছন, এ জন্য অবকাঠামো ও জনবল বাড়াতে হবে। তাছাড়া এ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাঁদের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উপাচার্যদের বৈঠকে ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। তিনিও প্রধানমন্ত্রীর দেয়া দিক-নির্দেশনার সঙ্গে একমত। তবে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, শুধু সরকারী কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনলে বেসরকারী কলেজগুলোর কী হবে? সেক্ষেত্রে তিনি সরকারীর পাশাপাশি বড় বেসরকারী কলেজগুলোকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনলে ভাল হবে বলে মত দেন। বলেন, এটি বাস্তবায়ন করার জন্য একটি সমীক্ষা করা দরকার। তাহলে সবার মত জানা যাবে। বৈঠকে সরকারের এ উদ্যোগকে উপাচার্যরা স্বাগত জানালেও এটি বাস্তবায়ন করা খুব সহজ হবে না বলেই মনে করেন অনেকে। বৈঠকের বাইরে অনেক উপাচার্য ও সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করতে পারলে ভাল হবে। তবে নতুন করে কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর বোঝা বহন করা সহজ হবে না। কলেজগুলোতে আছে প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো সমস্যা, জনবল সমস্যা, ছাত্র সংগঠনগুলোর বিরোধসহ নানা সঙ্কট। এসব সঙ্কট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে সামাল দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটেও বিষয়টি অনুমোদিত হতে হবে। সার্বিক বিষয়টি তাঁদের জন্য নতুন সমস্যার কারণ হতে পারে বলে চিন্তিত অনেকেই। এসবের কারণেই কিছুদিন যাবত এ নিয়ে আপত্তিও করছিলেন অনেক উপাচার্য। বৈঠকে কলেজ হস্তান্তর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আট সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ইউজিসি চেয়ারম্যান ড. এ কে আজাদ চৌধুরীর নিকট পেশ করবে। কমিটির আহ্বায়ক ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ মোহাব্বত খান। সদস্যরা হলেনÑ ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ আনোয়ারুল আযীম আরিফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, ইউজিসি সচিব ড. মোঃ খালেদ। ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ফেরদৌস জামান সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
×