ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অধিকাংশ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নেই

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪

অধিকাংশ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, দেশের অধিকাংশ কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নেই। এই দুর্বলতা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে তদারকি সেটি সঠিক সময়ে হয় না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতিরও ঘটনা ঘটে। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুবলর্তার কারণে হলমার্কের কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা ঘটেছিল। শনিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মির্জা আজিজুল এমন মন্তব্য করেন। এটির আয়োজনে ছিল বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও শেয়ার মার্কেট টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (এসটিজেএ)। মির্জা আজিজুল বলেন, আমাদের দেশে ঋণ পরিশোধের দায়বদ্ধতার বড় দুর্বলতা রয়েছে। ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে যতটা আন্তরিকতা আছে, পরিশোধের ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ঋণ যারা দিচ্ছেন তাদের উচিত কাকে ঋণ দিচ্ছে, ঋণের উদ্দেশ্য কী, যে কোম্পানিকে দিচ্ছে তার অবস্থা কেমন তা যাচাই করা এবং ঋণ নেয়ার পর তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত তদারকি করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির অভাবে হলমার্কের মতো ঘটনা ঘটছে দাবি করে মির্জা আজিজুল বলেন, আমাদের দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্বলতা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে তদারকি সেটি সঠিক সময়ে হয় না। তিনি আরও বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন বাস্তবায়িত হলে সমাজের সব স্থানে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিএমবিএ’র সভাপতি তানজিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার আরিফ খান, এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি মীর নাসির হোসেন, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফায়েকুজ্জামান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী, এইমস অব বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ইওয়ার সাঈদ এবং বিএমবিএয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান। আরিফ খান বলেন, মালিকরা যাকে নিজের মানুষ মনে করছেন, তাকেই স্বাধীন পরিচালক করছেন। ভবিষ্যতে স্বাধীন পরিচালকদের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা করা হবে। তিনি বলেন, শতভাগ কোম্পানির প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন আছে কিনা তা আমাদের পক্ষে দেখা (স্ক্যান) সম্ভব নয়। কিছু কিছু কোম্পানিকে শাস্তি দিয়ে আমরা বাকিদের সতর্ক করে দিচ্ছি। এ ছাড়া ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট পাস হলে সবকিছু জবাবদিহিতার মধ্যে চলে আসবে। ইওয়ার সাঈদ বলেন, যারা ব্যাংক ও পুঁজিবাজার থেকে ঋণ নিচ্ছেন, তদের ঠিক করতে হবে। তা না হলে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে না। শাকিল রিজভী বলেন, কোম্পানি যদি ভাল না হয় শেয়ারবাজার ভাল হবে না। লিমিটেড কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ তালিকাভুক্ত। বাকি ৯০ শতাংশই বাইরে থেকে যাচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত হওয়ার পেছনে এটি একটি বড় কারণ। তিনি আরও বলেন, কোম্পানিকে ভাল করে চালাতে হলে ভাল ম্যানেজমেন্ট লাগবে। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সমন্বয়ে এ ম্যানেজমেন্ট গঠিত হয়। কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন থাকলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা অবশ্যই আসবে। ফায়েকুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ কোম্পানি পারিবারিক। ফলে এই কোম্পানিগুলো প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন মেনে নিতে চায় না। স্বাধীন পরিচালককে সহজভাবে নিতে চায় না। স্বাধীন পরিচালকদের অনেকে বোঝা মনে করেন।
×