ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইরাক ও সিরিয়ার জন্য ॥ নয়া মার্কিন কমান্ড

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪

ইরাক ও সিরিয়ার জন্য ॥ নয়া মার্কিন কমান্ড

ইরাক ও সিরিয়া উভয় দেশে সামরিক অভিযান তদারক করার জন্য মার্কিন সেনাবাহিনী এক নতুন কমান্ড গঠন করেছে। আর সিরিয়াতে আল কায়েদাসম্পৃক্ত প্রধান দলটি বিরাট এলাকাজুড়ে এর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে। এর ভূখ-ে সম্প্রতি কিছু আগেও মধ্যপন্থী আসাদবিরোধী পক্ষের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এর ফলে চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এক নতুন বিদ্রোহী বাহিনী গঠনের মার্কিন পরিকল্পনা বড় রকমের বাধার মুখে পড়ল। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়া শীঘ্রই চরমপন্থী এবং আসাদ শাসকগোষ্ঠীর বাহিনীর মধ্যে প্রায় সম্পূর্ণভাবেই বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। মধ্যপন্থীদের জন্য কোন ভূখ- এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোন মিত্র নাও থাকতে পারে। বিদ্রোহী ও বিশ্লেষকরা এ কথা জানান। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। মার্কিন কম্বাইড জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স-অপারেশন ইনহারেন্ট রিজোলড ইরাক ও সিরিয়ায় সামরিক মিশন চালানোর দায়িত্ব নিয়েছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউএস আর্মি সেন্ট্রালের কমান্ডিং জেনারেল আর্মি লে. জে. জেমস এল টেরি। ঐ সংস্থা ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা অভিযান দেখাশোনা করে থাকে। টেরি মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছেন বলে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান। কিন্তু তিনি কোন দেশে রয়েছেন তা তারা জানাতে অসম্মত হন। ইরাকের বাগদাদ ও আরবিল শহরে এবং প্রতিবেশী কুয়েতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। সেনাবাহিনী নতুন টাস্ক ফোর্স সম্পর্কে বিস্তারিত তেমন কিছু জানায়নি। তবে তারা শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে, ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের পরিবর্তে ঐ ফোর্সই সামরিক মিশন সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করবে। যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে কয়েক শ’ বার বিমান হামলা চালায়। ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর মার্কিন জঙ্গী বোমারু বিমান সিরিয়ায় ছয়বার আক্রমণ চালায়। যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলিতভাবে ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ইরাকে ১৪ বার বিমানের সাহায্যে আঘাত হানে। মার্কিন সামরিক বাহিনী একথা জানায়। সিরিয়ায় গত মাসে পাশ্চাত্য সমর্থিত দুটি বড় বিদ্রোহী দল চরমপন্থী জাঙ্গহাত আল নুসরার হামলায় ইদলি প্রদেশ থেকে বিতারিত হয়। সেই সময় থেকে আল-নুসরা সিরিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে সবচেয়ে শক্তিশালী একক সামরিক সংগঠন হিসেবে এর অবস্থান ক্রমশ সুসংহত করছে। আল নুসরা প্রদেশের গ্রাম-শহরগুলো পদানত করে প্রতিবেশী তুরস্ক অবধি সরবরাহ পথ নিরাপদ করেছে। এভাবে দলটি এক ইসলামী আমিরাত প্রতিষ্ঠার পথ সম্ভবত সুগম করেছে। “আমিরাত” গত গ্রীষ্মকালে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিম ইরাকে ইসলামিক স্টেটের ঘোষিত “খিলাফতের” এক প্রতিদ্বন্দ্বী সত্তা। আল-কায়েদা সম্পৃক্ত আল-নুসরা আধিপত্যের সম্প্রসারণ আরও বেশি শক্তিশালী ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) প্রতিহত ও ধ্বংস করতে মার্কিন নেতৃত্বাধীনে পরিচালিত চেষ্টা আরও জটিলতার মুখে পড়ল। আইএম আল-নুসরার এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী এবং এটি গত গ্রীষ্মকালে এর ভূখ- থেকে আল-কায়েদা অনুগতদের বিতাড়িত করে। যদি সিরিয়ার লড়াই বর্তমান ধারায় চলতে থাকে, তা হলে দেশটি শীঘ্রই প্রায় সম্পূর্ণভাবেই জিহাদী বাহিনী এবং আসাদ শাসকগোষ্ঠীর বাহিনীর মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এতে মধ্যপন্থী বিদ্রোহীদের কোন ভূখ-ই থাকবে না। আর সামরিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র বলতে কেউই রইবে না। বিদ্রোহী কমান্ডার ও বিশ্লেষকরা একথা জানান। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ৫ হাজার বিদ্রোহীর এক বাহিনীকে প্রশিক্ষণদান ও অস্ত্রসজ্জিত করার পেন্টাগনেও পরিকল্পনা এখনও তৈরি করা হচ্ছে। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার দক্ষিণে অবস্থিত একটি স্থানকে প্রথমে ২,০০০ বিদ্রোহীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার এক ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ প্রশিক্ষণ ১ ফেব্রুয়ারি শুরু করা হবে বলে আসাদবিরোধী ঐ পক্ষকে জানানো হয়েছে। এ পক্ষের প্রতিনিধিরা একথা জানান। কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা এখনও পর্যন্ত ঐ কর্মসূচী নিয়ে কথা বলতে সিরিয়ার সরকারবিরোধী নেতাদের সঙ্গে দেখা করেননি। তাঁরা কোন কোন গ্রুপকে প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করা হবে, তা নিয়ে এখনও তুরস্কের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করছেন। বাছাইয়ের সময় কোন কোন প্রশ্ন করা হবে, তাঁরা তা এখনও চূড়ান্ত করেননি। পেন্টাগনের মুখপাত্র রিয়ার এ্যাডমিরাল জন কারবি বৃহস্পতিবার জানান, কর্মকর্তারা ঐ কর্মসূচী বাস্তবায়নের এখনও তহবিলের অপেক্ষায় রয়েছে। কংগ্রেস ঐদিন শেষে এক প্রতিরক্ষা অথোরাইজেশন বিল পাস করে সেই তহবিল বরাদ্দ করে।
×