ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জ্বালানি আমদানির ওপর প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে নতুন মহাপরিকল্পনায়

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৪

জ্বালানি আমদানির ওপর প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে নতুন মহাপরিকল্পনায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদ্যুতের নতুন মহাপরিকল্পনায় আমদানিকৃত জ্বালানিকে বেশি প্রাধান্য দেয়ায় দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। দেশে তেলভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন করায় বিগত কয়েক বছরে বিদ্যুতের দাম দ্বিগুণে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় নতুন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হলে বিদ্যুতের দাম আরও বেড়ে যাবে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, বিদ্যুত খাতের নতুন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। সরকারের নতুন এই পরিকল্পনা করে দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। ২০৩০ থেকে ২০৪০ পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা এবং যোগান বিশ্লেষণ করে এই মহাপরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ সময় প্রতিবছর আট ভাগ হারে বিদ্যুতের চাহিদার প্রবৃদ্ধি হিসেব করে ২০৪০ এ ৬৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী বছর শেষ নাগাদ মহাপরিকল্পনা-২০১৫ চূড়ান্ত হবে। সরকার ২০১০ সালে জাইকাকে দিয়েই একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে। ওই মহাপরিকল্পনায় ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৩৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মাত্র চার বছরের ব্যবধানে সেই মহাপরিকল্পনা বদলের প্রয়োজন পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন অদূরদর্শিতা এবং সরকারের নীতির বদলের কারণেই বর্তমান মহাপরিকল্পনা বদলাতে হচ্ছে। বর্তমান (১৯ পৃষ্ঠা ১ কঃ দেখুন) জ্বালানি আমদানির (২০-এর পৃষ্ঠার পর) মহাপরিকল্পনায় দেশীয় জ্বালানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু সরকার কয়লা উত্তোলনের নীতি থেকে সরে আসার কারণে ব্যাপকভাবে জ্বালানি আমদানির প্রয়োজন পড়ছে। ২০১০-এ জাইকার করা মহাপরিকল্পনাতে বলা হয়, ২০৩০ সালে ৫০ শতাংশ বিদ্যুত উৎপাদন হবে কয়লা থেকে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ কয়লার যোগান দেয়া হবে দেশীয়ভাবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটিও বড় খনি উন্নয়নের পরিকল্পনা নেয়নি সরকার। ফলে প্রায় শতভাগ কয়লাই এখন বিদেশ থেকে আমদানি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নতুন মহাপরিকল্পনার প্রাথমিক প্রতিবেদনে ২৪ হাজার মেগাওয়াটের কয়লা বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী কেবল বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুত কেন্দ্রে দেশীয় কয়লা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে ছয় হাজার ৯৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে আমদানি করা কয়লার ওপর নির্ভর করা হচ্ছে। নতুন মহাপরিকল্পনায় বিদেশী কয়লার পাশাপাশি বায়ুবিদ্যুত ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলএনজি)-ভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনের বিষয়টিও রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। যদিও দেশে এখনও কোন পূর্ণাঙ্গ বায়ু মানচিত্র তৈরি করা হয়নি। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, কয়েকটি কোম্পানি বায়ুমানচিত্র করার কাজ করলেও এখনও শেষ করতে পারেনি। অন্যদিকে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। যদিও জাইকা বলছে, বাংলাদেশের বিদ্যুত সমস্যা কীভাবে পূরণ করা যায় তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আগামী নয় মাসের মধ্যে পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করা হবে। একবছরের মধ্যে চূড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। গতসপ্তাহে বিদ্যুত বিভাগের সামনে জাইকা তাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। জাইকার বাংলাদেশ প্রধান মিকিও হাতিদা বলেন, বাংলাদেশের উপযোগী করে পরিকল্পনা সাজানো হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। অন্যান্য বিনিয়োগকারীর সঙ্গে জাইকাও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়বে। এই চাহিদা মেটাতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। স্থানীয় গ্যাসের সঙ্গে আমদানি করা এলএনজি ও কয়লা দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা বাংলাদেশের জন্য ভাল হবে বলে মনে করেন মিকিও। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশের মোট বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়াবে ১৮ হাজার ৮৩৮ মেগাওয়াট। তখন জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাত শতাংশ। এই হিসেবে ২০১৫ সালে দুই হাজার ৯৩৪ মেগাওয়াট, ২০১৬ সালে দুই হাজার ১৪৮ মেগাওয়াট, ২০১৭ সালে এক হাজার ২৭১ মেগাওয়াট, ২০১৮ সালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, ২০১৯ সালে দুই হাজার ৮৭ মেগাওয়াট, ২০২০ সালে দুই হাজার মেগাওয়াট এবং ২০২১ সালে তিন হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সরকারী খাতে দশ হাজার ২৪৬ মেগাওয়াট এবং বেসরকারী খাতে সাত হাজার ৬৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী আট বছরে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে পাঁচ হাজার ১৮৬ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ও দেড় কোটি টন জ্বালানি তেল প্রয়োজন হবে।
×