ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টুনিখ্যাত লোপার লাশ তোলা হয়েছে, আজ ফের ময়নাতদন্ত

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

টুনিখ্যাত লোপার লাশ তোলা হয়েছে, আজ ফের ময়নাতদন্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নন্দিত কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক এইসব দিনরাত্রির টুনি চরিত্রের অভিনেত্রী নায়ার সুলতানা লোপার (৩৫) মরদেহ পুনঃময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তোলা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীম বানু শান্তির উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে বনানী কবরস্থান থেকে লোপার লাশ তোলা হয়। পরে সন্ধ্যার দিকে লোপার লাশ পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান হয়েছে। আজ শুক্রবার মিটফোর্ড মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড লোপার মরদেহ পুনঃময়নাতদন্ত করা হবে। উল্লেখ্য, গত ১৬ অক্টোবর গুলশানে শ্বশুরবাড়ি থেকে লোপার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিনই লোপার মা রাজিয়া সুলতানার করা মামলার ভিত্তিতে স্বামী আল-আমিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই মামলায় আল-আমিনের বাবা ও মাকেও আসামি করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে লোপার গলার ডানে ও বাম হাতের কবজিতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা বলা হয়। ময়নাতদন্তে লোপার মৃত্যুর কারণ ‘আত্মহত্যা’ বলা হলে তাতে আপত্তি জানিয়ে পুনরায় ময়নাতদন্তের আবেদন করেন তার মা। গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৬ নবেম্বর ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) বিকাশ কুমার সাহা লোপার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে পুনঃময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার নায়ার সুলতানা লোপার মরদেহ পুনঃময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন করা হয়। এদিকে লোপার মা রাজিয়া সুলতানা জানান, লোপার স্বামী আল-আমিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র শাজ নামের এক মেয়ের ফেসবুকে পরিচয় হয়। মেয়েটি বাংলাদেশে এলেই তার সঙ্গে রাত কাটাতো। এছাড়া লোপার অগোচরে আল-আমিন অনেক মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। লোপার মা আরও জানান, আনোয়ারা (১০) ও আজারা (৯) নামে দুই মেয়ে রয়েছে। কিন্তু আদালতে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে বলে দেখানো হয়। বয়সও কমিয়ে দেয়া হয়। আল-আমিনের জামিনের জন্যই আদালতে ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তিনি জানান, লোপার ঝুলন্ত লাশ গত ১৬ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে উদ্ধারের পর হত্যার অভিযোগ তোলে লোপার স্বামী আল-আমিনের বিরুদ্ধে মামলাও করেন তিনি। এরপর ময়নাতদন্তে লোপার মৃত্যুর কারণ ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করা হলে তাতে আপত্তি জানিয়ে আবারও ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে শরনাপন্ন হন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও সুরতহাল প্রতিবেদনের মধ্যে গরমিল রয়েছে দাবি করে লোপার মা রাজিয়া বলেন, সুরতহালে লোপার হাত, কনুই ও গলায় আঘাতের দাগ ছিল উল্লেখ করা হলেও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তা নেই। তাই লোপাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে মামলার বাদিনী লোপার মা রাজিয়া সুলতানা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করেন। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে লোপা ‘আত্মহত্যা করেছেন’ বলে উল্লেখ থাকায় তিনি এ আবেদন করেন। পরে আদালত আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পুনঃময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেন। এছাড়া ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আদালত। মেয়ে লোপার লাশ পুনঃময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে মরদেহ তোলার পর রাজিয়া সুলতান জানান, ও আত্মহত্যা করেনি। ওকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর টাকা দিয়ে ওর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কিনে ফেলেছে স্বামী। এদিকে মামলার পর গ্রেফতার আল-আমিন পুলিশের কাছে দাবি করেন, গুলশানের ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে তার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে নায়ার আত্মহত্যা করেছেন। আর তখন তিনি বাড়ির বাইরে ছিলেন। এদিকে লোপার মায়ের মামলার এজাহারেও বলেছেন, বাবা-মায়ের প্রশ্রয়ে মাদকাসক্ত আল- আমিন প্রতিদিন লোপাকে শারীরিক নির্যাতন করতেন। এজাহারে বলা হয়, এ নির্যাতনের মধ্যেই ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে যে কোনও সময় তারা তিনজন লোপাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে রাখে। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদন লোপার গলার ডানে এবং বাম হাতের কবজিতে আঘাত সদৃশ চিহ্ন পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। এরপর গত ১৬ নবেম্বর দেয়া ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে লোপা ‘আত্মহত্যাই করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়। রাজিয়া আরও জানান, ২০০০ সালে লোপার বিয়ের পরই জানতে পারি আল-আমিন মাদকাসক্ত। দুটি মেয়ে জন্ম নেয়ায় নির্যাতন সহ্য করেও লোপা সংসার চালাতে থাকে। মাদকাসক্ত স্বামী নিজের পরকীয়ার পথে বাধা কাটাতেই এক সময়ের শিশুশিল্পী নায়ার সুলতানা লোপাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন তার মা রাজিয়া সুলতানা। প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক নব্বইয়ের দশকে বিটিভিতে প্রচারিত ‘এইসব দিনরাত্রি’ নাটকে ‘টুনি’ চরিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান লোপা। নাটকের শেষ পর্যায়ে ‘টুনি’ অসুস্থ হয়ে পড়লে সারাদেশের অসংখ্য মানুষ হুমায়ূন আহমেদের কাছে চিঠি লিখে টুনির প্রাণ রক্ষার আবেদন জানান।
×