ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদ মাসুদ পাইলটের অভিমত

উন্নতির মূল্যায়ন হবে বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

উন্নতির মূল্যায়ন হবে বড় দলগুলোর  বিরুদ্ধে

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দারুণ খুশি খালেদ মাসুদ পাইলট। মূল প্রসঙ্গ নিয়ে কথা শুরুর আগেই নিজের আনন্দ প্রকাশ করে বললেন, ‘খুব ভাল আছি, বাংলাদেশ টিম জিতেছে। এরচেয়ে আনন্দের আর কিছুই নেই।’ সত্যি আনন্দিত হওয়ারই কথা। দীর্ঘদিন জয় বঞ্চিত থাকা দলটি অবশেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এমনভাবে যে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুইয়ে বিন্দুমাত্র প্রতিরোধও গড়তে পারেনি। টেস্ট সিরিজে ৩-০ আর ওয়ানডে সিরিজে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে সফরকারীরা। টানা ১১ বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অপরিহার্য সদস্য হিসেবে নিয়মিত খেলেছেন মাসুদ এমন সময়ে যখন বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের নাম জানিয়ে দেয়ার সংগ্রাম করছিল দল। তাই এমন একটি জয়ে তো খুশিই হবেন সাবেক এ অধিনায়ক। তবে তিনি মনে করেন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসেবে অনেক নিচু পর্যায়ের দল জিম্বাবুইয়ে সেটা এই সিরিজে প্রমাণ হয়ে গেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে জয় পাওয়াতে খুব বেশি আনন্দিত না হয়ে বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে ভাল করে নিজেদের পর্যায়টা বুঝতে হবে। নিতে হবে বড় দলগুলোর চ্যালেঞ্জ। আত্মতৃপ্ত না হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বাউন্সি উইকেটে বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে ভাল খেলতে আরও পরিশ্রম করতে হবে বলে পরামর্শ দিলেন খালেদ মাসুদ। বাংলাদেশ দলের দারুণ সিরিজ জয় এবং আসন্ন বিশ্বকাপ নিয়ে মূল্যবান অনেক কথাই বলেছেন তিনি দৈনিক জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপচারিতায়। প্রশ্ন ॥ বছরটা যেমন গেছে বাংলাদেশ দলের, সিরিজ শুরুর আগে ৫-০ হোয়াইটওয়াশ কী প্রত্যাশা করেছিলেন? খালেদ মাসুদ ॥ সিরিজ জয় করাটা এবং হোয়াইটওয়াশ অবশ্যই অনেক আনন্দের। আসল বিষয় যেটা তা হচ্ছে যারা ক্রিকেট দেখেন, যারা ক্রিকেট বোঝেন সন্দেহাতীতভাবে সবাই বলবেন যে আমরা অনেক ভাল খেলেছি। আমাদের খেলোয়াড়রা ভাল খেলেছে, দলের পারফর্মেন্স ভাল হয়েছে। তবে অন্য দলগুলোর সঙ্গে জিম্বাবুইয়ে দলটাকে যদি তুলনা করা যায় তাহলে বলব তারা অনেক নিচু সারির দল আমাদের চেয়ে। তারপর আবার আমাদের ঘরোয়া পরিবেশে খেলা কাজেই এখানে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জেতাটা খুবই স্বাভাবিক। আমরা উন্নতি করেছি ঠিকই কিন্তু কতটা করেছি সেটা তখনই বুঝতে পারব যখন আমরা অন্য দেশের সঙ্গে ক্রিকেট খেলব। তখন হয়ত বলা যাবে আমরা কোথায় আছি। কিন্তু এক জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে খেলে আমরা বুঝতে পারব না কতটা ভাল অবস্থানে আমরা এসেছি। প্রশ্ন ॥ বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা কাটাতে মনোবিদও আনা হয়েছিল। জিম্বাবুইয়ে যেমন পর্যায়েরই হোক ব্যাটসম্যানরা রান পেয়েছেন এটা বিশ্বকাপে কতটা কাজে লাগতে পারে? খালেদ মাসুদ ॥ এটা অবশ্যই কাজে লাগবে। ম্যাচ জয়টা খুব জরুরী। ম্যাচ জিতলে দলের সংঘবদ্ধতা আর ভালভাবে সুসংহত হয়। ব্যক্তিগতভাবেও ক্রিকেটারদের উন্নতি ঘটে। সেদিক থেকে বলব আমরা ১০০ তে ১০০ পেয়েছি। তবে খেলার গুণাগুণের কথা যখন আসবে তখন কথা কিন্তু অন্যরকম আসবে। বিশেষ করে যখন বিশ্বকাপে খেলতে যাব চ্যালেঞ্জটা অন্যরকম হবে। এখানে জিম্বাবুইয়ের একজন পেসার পানিয়াঙ্গারা ছিলেন তিনি কিন্তু যথেষ্ট ভুগিয়েছেন। তাঁর মতো অন্তত চারজন করে প্রতিপক্ষ দলে পেসার থাকবেন অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপে। কিংবা তিনটা থাকবেই। আর উইকেটটা হবে বাউন্সি। সেক্ষেত্রে পার্থক্যটা কিন্তু ভিন্নরকম। সেখানে আমরা কতটা ভাল করব সেটাই কিন্তু মূল বিষয়। সেখানে ভাল করতে পারলে আমরা বুঝব এই পাঁচ ম্যাচে অনেক উন্নতি করেছি আমরা। প্রশ্ন ॥ পানিয়াঙ্গারার পেসেই আমাদের অন্তত তিনটা ওয়ানডেতে টপঅর্ডারে ধস নেমেছে। তাহলে বড় দলগুলোর বিশ্বসেরা পেসারদের বিরুদ্ধে কী ঘটতে পারে? খালেদ মাসুদ ॥ এ জন্যই বললাম জিতেছি সে জন্য আমরা আনন্দিত কিন্তু আমাদের আরও কিছু কাজ করতে হবে। এ জয়ে খুব বেশি আত্মতৃপ্ত হওয়া যাবে না। ভাল দলগুলোর সঙ্গে ভাল খেলার জন্য আরও পরিশ্রম করতে হবে আমাদের। আমরা নিঃসন্দেহে ভাল করেছি। কারণ আমরা ঘরোয়া পরিবেশ পেলাম, জিম্বাবুইয়ের মতো দুর্বল প্রতিপক্ষ পেলাম। আমরা যতটা উন্নতি করেছি আমার মনে হয় ঠিক ততটাই পিছিয়েছে জিম্বাবুইয়ে দলটা। সামনের দিকে এগোতে পারেনি। এর কারণ দুই/এক বছর অন্তর অন্তর তাঁদের দলে কিন্তু সব নতুন ক্রিকেটার আসেন। প্রশ্ন ॥ একই ঘটনা কিন্তু বাংলাদেশ দলের ক্ষেত্রেও হয়েছে। অনেক নতুন খেলোয়াড় আমরা এ সিরিজেই দেখলাম। বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে এই নতুনদের নিয়ে আমরাও কি তবে সমস্যায় পড়ব? খালেদ মাসুদ ॥ জিম্বাবুইয়ে এমন একটা দল যাদের বিরুদ্ধে যে ব্যাটসম্যানকে খেলানো হয়েছে সে ভাল রান করেছে, যে বোলারকে খেলানো হয়েছে সে ভাল বোলিং করেছে। সবাই ভাল পারফর্ম করেছে, কেউ খারাপ করেনি। কারণ প্রতিপক্ষটা কিন্তু বড় পর্যায়ের না। আমাদের যে স্পিনাররা বোলিং করেছে ঘরোয়া আসরেও এত উইকেট পায় না। তার মানে বোঝা গেছে জিম্বাবুইয়ে দলের কতখানি সমস্যা হয়েছে আমাদের দলের স্পিনারদের নিয়ে। সবকিছুই মনে হয়েছে আমরা ব্যক্তিগতভাবে সবাই ভাল করেছি, সবার উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে দলগুলো শীর্ষ পর্যায়ে আছে তাদের সঙ্গে খেলার পরেই এ উন্নতিটা বুঝতে পারব। আমাদের নতুন যারা তাঁরা অনেক ভাল করেছেন। আশা করি সেটা তাঁরা ধরে রাখতে পারবেন।
×