ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যোগ্যতর দল হিসেবেই ভুটানের কিংস কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শেখ জামাল ;###;ফাইনালসহ সব ম্যাচে দুর্দান্ত নৈপুণ্য উপহার দিয়েছে ছেলেরা ;###;শিরোপার পাশাপাশি ভারতের সমৃদ্ধ প্রতিপক্ষ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জয় অনেক আনন্দের, গর্বের- বললেন ক্লাব সভাপতি, বিশিষ্ট ক্

বিজয়ের মাসে এই সাফল্য দেশ-জাতির জন্য গর্বের

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

বিজয়ের মাসে এই সাফল্য দেশ-জাতির জন্য গর্বের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ভুটানের কিংস কাপ ফুটবলে যখন অংশ নেয়, তখন শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের টার্গেট ছিল দুটি- কঠিন প্রতিপক্ষ মোহনবাগানকে হারানো এবং শিরোপা জেতা। দুটি টার্গেটই পূরণ হয়েছে। দেশের মান-মর্যাদা রাখতে সক্ষম হয়েছে শেখ জামাল। ‘ফাইনালে জিতলে ছেলেদের জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।’ বলেছিলেন মনজুর কাদের, শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি, বিশিষ্ট ফুটবল সংগঠক। দল নিয়ে দেশে ফেরার পর আবেগী মনজুর কাদের বললেন, ভুটানে বসে ক্রিকেটের সাফল্যের খবর পেয়ে অভিভূত হয়েছিলাম। আমার ও ক্লাবের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বীর ক্রিকেটারদের প্রাণঢালা অভিনন্দন, শুভেচ্ছা জানিয়েছি। একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে ফুটবলের ময়দানী লড়াইয়েও আমরা জয়ী হয়েছি। বিদেশের মাটিতে অর্জিত এই সাফল্য দেশের জন্য বিরাট সম্মান ও গৌরবের। সেরা দলগুলোকে হারিয়ে আমরা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভুটানের কিংস কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবলে। ক্লাব সভাপতি হিসেবে আমি গর্ব অনুভব করছি। দেশের ফুটবলের অগ্রযাত্রায় শেখ জামালের অর্জিত এই সাফল্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। গোটা আসরে আমার দল চমৎকার খেলা উপহার দিয়ে ভুটানের ফুটবল দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। ছেলেদের নৈপুণ্যে আমি খুবই খুশি। ‘টিম শেখ জামাল’ হয়ে তারা যে খেলা খেলেছে প্রত্যেকটি ম্যাচে তা প্রশংসার দাবি রাখে। মনজুর কাদেরের সংযোজন, এর আগে ভারতের আইএফএ শিল্ডে রেফারির নির্লজ পক্ষপাতিত্বের কারণে শিরোপা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল শেখ জামাল। এই ঘটনা সবার জানা। কিংস কাপে রেফারিংয়ের মান মোটামুটি ভাল ছিল। ফলে শেখ জামালকে রুখতে পারেনি কোন দল। টুর্নামেন্টের সেরা দল হিসেবে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছি। শিরোপার তৃপ্তি তো রয়েছেই। খুবই ভাল লাগছে ভারতের সেরা দলের একটি মোহানবাগানের বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানের জয়টির জন্য। বিজয় মাস ডিসেম্বর। মহা স্বাধীনতা যুদ্ধে এ মাসে আমরা ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বিজয়ী হয়েছিলাম। বিজয়ের এই মাসে শেখ জামালের এই সাফল্য দেশ ও জাতির জন্য গর্বের। উপমহাদেশের ফুটবলের রাজত্বটা ছিল ভারতীয় ক্লাবগুলোর দখলে। এবার নতুন শক্তি হিসেবে যোগ হল বাংলাদেশের শেখ জামাল ধানমণ্ডি। সাফল্য ও জয় সবসময়ই মধুর। ভুটানের চানগ্লিমিথাং স্টেডিয়াম থেকে এমনই মধুর স্মৃতি নিয়ে বুধবার রাতে বিমানযোগে দেশে ফিরেছে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব লিমিটেড। বিমানবন্দরেই তাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) উর্ধতন কর্মকর্তারা। আগেরদিনই কিংস কাপের শিরোপা জেতার জন্য শেখ জামালকে সবার আগে আন্তরিক অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছিল বাফুফে। বাফুফের মতো শেখ জামালকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারও। আরও অভিনন্দন জানিয়েছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড ও সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবারসহ অনেক সংগঠন। জয় মানেই সীমাহীন আনন্দ। সেটা দেশের বাইরে হলে এর গুরুত্ব আরও বেশি। দেশের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশের ফুটবল ক্লাব শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেড বিজয়ের মাসে ভুটানের মাটিতে ওড়াল বিজয়-নিশান। মঙ্গলবার দিনটি জামালের জন্য ছিল সত্যিকার অর্থেই মঙ্গলময়। ভুটানে অনুষ্ঠিত ফুটবল আসর ‘কিংস কাপ’-এ প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েই বাজিমাত করে শেখ জামাল। হয় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে ইয়াসিন খানের গোলে ভারতীয় প্রতিপক্ষ পুনে এফসিকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপাটা নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশের এই ক্লাবটি। এর মাধ্যমে সাফ অঞ্চলে নতুন শক্তিশালী ফুটবল ক্লাব হিসেবে নিজেদের নামটি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হলো শেখ জামাল। এ শিরোপা জয়ের মাধ্যমে মৌসুম-সূচক ঘরোয়া আসর ‘ফেডারেশন কাপ’ এর জন্য প্রস্তুতিটা ভালমতোই সেরে নিল মারুফুল হকের শিষ্যরা। মঙ্গলবার ম্যাচ শুরুর আগেই দলের সভাপতি মনজুর কাদের দলের প্লেয়ারদের উজ্জীবিত করতে উপহার দেন ১০ হাজার ডলার পুরস্কার। খেলোয়াড়রা জানবাজি লাগিয়ে খেলে নিরাশ করেননি তাঁকে। গত মৌসুমে প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যয়ে দলগঠন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল জামাল। প্রতিটি শিরোপা জেতার প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করে। সব না হলেও গত মৌসুমে তারা জেতে প্রিমিয়ার লীগ ও ফেডারেশন কাপের শিরোপা। এই টুর্নামেন্টে আসতে জামালের ম্যাচগুলো ছিল এ রকম- গ্রুপ পর্বে ভুটানের ড্রুক ইউনাইটেড ক্লাবকে ৩-০ গোলে হারায়, থাই ক্লাব নাখোন রাতচাসিং মাজদার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে ও ভারতের মোহনবাগানের বিপক্ষে ৫-৩ গোলে জেতে। সেমিতে নেপালের মানাং মার্শিংয়াদী ক্লাবকে ২-১ গোলে হারায়। এ টুর্নামেন্টে এবার জামালের সঙ্গে ঢাকা আবাহনীও অংশ নেয় ভুটানের কিংস কাপে। তারাও বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকে। দেশের বাইরে এর আগে ২০১১ সালে নেপালে সাফাল পোখারা কাপ টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছিল শেখ জামাল। ২০১৪ সালে ভারতের কলকাতায় আইএফএ শিল্ড কাপের রানার্সআপ হয় জামাল। কিংস কাপের সুদৃশ্য ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরে তাতে চুমু খাবার সৌভাগ্য অর্জন করেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাসির। এ টুর্নামেন্টে এবারই প্রথম অংশ নেয় জামাল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যেই ভুটান যায় তারা। প্রথমবার অংশ নিয়েই অভূতপূর্ব সাফল্য উপহার দেয় জামাল। জামালের কৃতিত্ব হচ্ছে ভারতের প্রতিটি দলকেই তারা এবার হারিয়েছে বলে-কয়ে! এই টুর্নামেন্টে সেমিতে আসতে জামালের ম্যাচগুলো ছিল এ রকমÑ ভুটানের ড্রুক ইউনাইটেড ক্লাবকে ৩-০ গোলে হারায়, থাই ক্লাব নাখোন রাতচাসিং মাজদার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে ও ভারতের মোহনবাগানের বিপক্ষে ৫-৩ গোলের জয়। সেমিতে নেপালের মানাং মার্শিংয়াদী ক্লাবকে ২-১ গোলে হারানো। এ টুর্নামেন্টে গত আসরে বাংলাদেশের দুই ক্লাব টিম বিজেএমসি ও আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ অংশ নিয়েছিল। দুই দলই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়। এবার জামালের সঙ্গে ঢাকা আবাহনীও অংশ নেয় ভুটানের কিংস কাপে। তারাও বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকে। ২০১০ সালে ধানম-ি ক্লাবটি শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব নামে আত্মপ্রকাশ করে। তারা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। ২০১৩ সালে আটবারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনীকে হারিয়ে ফেডারেশন কাপ জয় করে ক্লাবটি। ২০১০ সাল থেকে টানা চার বছর ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলে তারা। দেশের বাইরে নেপালে ২০০০ সালে ক্লাব বুদ্ধ সুব্বা গোল্ডকাপ জয় করে। ২০১১ সালে নেপালে সাফাল পোখারা কাপ টুর্নামেন্টের ফাইনালে শেখ জামাল নেপাল আর্মিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৪ সালে ভারতের কলকাতায় আইএফএ শিল্ড কাপের ফাইনালে উঠে শেখ জামাল। ফাইনালে কলকাতা মোহামেডানের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়। আর কিংস কাপে হলো চ্যাম্পিয়ন। এখন দেখার বিষয়, আগামীতে এমন সাফল্য আরও কুড়িয়ে নিতে সক্ষম হয় কি না শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব।
×