ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নারীরা এগিয়েছে

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নারীরা এগিয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অনেক প্রতিবন্ধকতা এবং প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বাংলাদেশের নারীরা অনেক দূর এগিয়েছে। যা সার্বিকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছে অনেক দূরÑ নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এমন অভিমত দিয়েছেন। গবেষণায় জানা যায়, সিডরের সময়ে ব্যাপক প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতির পর দুর্যোগকবলিত এলাকার নারীরা এতটাই সচেতন এবং দায়িত্বশীল হয়েছেন যে, মহাসেনের সময়ে নামমাত্র ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তা সত্ত্বেও যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলা করার জায়গা থেকে একজন নারী কিভাবে প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তা অনেক সময়েই বিবেচনায় নেয়া হয় না। তবু বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। তুলনামূলক বিচারে অনেক ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে বাংলাদেশের নারীরা। তবে উচ্চহার মাথাপিছু আয় এবং শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির কারণে জাপানকে বেঞ্চমার্ক বা মানদ- হিসেবে ধরা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান সরকারের অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়ান এইড এবং এ্যাকশান এইড বাংলাদেশের গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার ডিআরইউ সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন এ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর, পলিসি প্রোগ্রামের পরিচালক শাহনাজ আরেফিন এবং উপ-পরিচালক সাজিদ রায়হান। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দক্ষিণ এশিয়া ঘন ঘন দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে। এ কারণে উন্নয়ন নীতি নির্ধারণে দুর্যোগ সংক্রান্ত ঝুঁকি হ্রাস এবং সহনশীলতা বৃদ্ধিজনিত এজেন্ডাগুলো ক্রমশ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যেখানে দুর্যোগে প্রস্তুতি গ্রহণ এবং তাৎক্ষণিক সাড়া প্রদানের ক্ষেত্রে নারীরাই নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে দক্ষিণ এশিয়ার সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক বাধাগুলো তাদের নেতৃত্বের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক সময় নারীবান্ধব নীতি গ্রহণে চরম ব্যর্থতার কারণে অনেক দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও সফল করা সম্ভব হয় না বললেন ফারাহ কবির। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে নারীবান্ধব নীতিনির্ধারণ অত্যন্ত জরুরী। গবেষণায় যেসব বিষয় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক নারী ও বিপদাপন্ন ব্যক্তির নিরাপত্তা মৌলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং দুর্যোগ সাড়া প্রদানের অন্তর্ভুক্ত করা। নিরাপত্তাকে সামাজিক সাড়া প্রদানের অংশ হিসেবে দেখা, জেন্ডারকেন্দ্রিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সরকারী কার্যকারিতা বজায় রাখা। পাকিস্তানের সামাজিক উদ্যোগ প্রতিষ্ঠান ‘নায়া জীভান (নতুন জীবন) মোবাইল ফোন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাড়ি থেকে কাজ করা মহিলা ডাক্তারদের সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হতে পারে না এমন মহিলা রোগীদের মাঝে যোগাযোগ তৈরি করার মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করছে। ‘লুমান্তি একটি নেপালী সুশীল সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এটি স্থাপিত হয়েছে বস্তিবাসী নারীদের সঞ্চয় প্রকল্প নিয়ে, যারা বাসস্থান অধিকার নিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। পাকিস্তানের কামরা এলাকায় দুর্যোগ পূর্বাভাস সঞ্চালিত হয় নোটিস বোর্ড এবং মসজিদের মাইক দিয়ে। নারী বন্যা প্রস্তুতি সঙ্ঘ এগুলোর সরবরাহ করার জন্য একটি নারীভিত্তিক কমিউনিটি সেন্টার পরিচালনা করে, যা দুর্যোগে আশ্রয়কেন্দ্র ও স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। স্থানীয় রেজিলিয়েন্স তহবিল দুর্যোগপ্রবণ এলাকার স্থানীয় জনগণকে অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে ২০ জন নারীকে ঝুঁকি এবং বিপদাপন্নতার মানচিত্রায়ণের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয় থাকা সত্ত্বেও নারীদের ঋণ বা অর্থনৈতিক অভিগম্যতার অভাব রয়েছে। নারীর সামাজিক নিরাপত্তা কিংবা আয়মুখী উৎপাদন বৃদ্ধিতে উদ্যোগের স্বল্পতা রয়েছে। আইনী ও নীতিমালা কাঠামো প্রণয়নে লিঙ্গবৈষম্য নিরসনের বিষয়টি কম গুরুত্ব পেয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। আঞ্চলিক মানদ-ের বিচারে যোগাযোগ ব্যবস্থার অবকাঠামো তুলনামূলকভাবে ভাল।
×