ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাপানের ৬শ’ কোটি ডলার পাঁচ মেগা প্রকল্পে ব্যয়ের পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

জাপানের ৬শ’ কোটি ডলার পাঁচ মেগা প্রকল্পে ব্যয়ের পরিকল্পনা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দেশের পাঁচটি মেগা প্রকল্পে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) প্রতিশ্রুত অর্থ ব্যয় করতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের অর্থ পাওয়ার পেতে কয়েক দফা সংস্থাটির সঙ্গে বৈঠক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। আগামী ৮ ডিসেম্বর ইআরডির এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে জাইকার পর্যবেক্ষণগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন মোহাম্মদ আবু তাহের। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল যমুনা সেতুর ওপর আরো একটি রেল সেতু, যমুনা নদীর নিচে বহুমুখী টানেল, ঢাকা বহুমুখী ইস্টার্ন বাইপাস সড়ক এবং ঢাকার চারটি নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্প ও গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প। এসব মেগা প্রকল্পগুলোর অর্থায়নের বিষয়ে সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে। চুক্তিসহ বাকি কার্যক্রম শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছে ইআরডি। সূত্র জানায়, গত মে মাসে জাপানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে ৬০০ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতি দেয় জাপান। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পে জাপান আগামী ৪-৫ বছরে অর্থায়নের জন্য এ অর্থ ব্যয় করা হবে। এ লক্ষ্যে শিঘ্রই জাপানী অর্থনৈতিক সমীক্ষা দল বাংলাদেশ সফর করবেন। প্রতিনিধি দলটি অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমীক্ষা চালাবে। জাইকা সূত্রে জানা গেছে, ৩৬তম ওডিএর আওতায় ১২ কোটি ডলার ঋণের প্যাকেজের অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই চুক্তির বিষয়টি সম্পন্ন করতে একটি বিশেষ মিশন বাংলাদেশ সফর করবে। এ প্যাকেজের আওতায় মেগা প্রকল্পগুলোর অর্থ না পাওয়ায় আগামী ৩৭তম ওডিএ লোন প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। জাইকা দেশের কয়েকটি মেগা প্রকল্পে সহযোগিতা করছে। এর মধ্যে অন্যতম মেট্রোরেল প্রকল্প। রাজধানীর যানজট নিরসনে প্রায় ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসাবে জাইকা ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা দেবে সরকার। দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প মহেশখালীর মাতারবাড়ি। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ। ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৪০ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। ৭০ শতাংশ বিনিয়োগ করবে জাপান ইন্টারন্যানশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। যা এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, ‘মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়ট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প’ নামের এ প্রকল্পে শুধু বিদ্যুত কেন্দ্র থাকছে না। এতে থাকছে কয়লা খালাসের বন্দর ও অবকাঠামো নির্মাণ। যার সুবিধা ব্যবহার করবে এখানকার অন্যান্য কেন্দ্রগুলোও। মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা (শুধুমাত্র কেন্দ্র নির্মাণ ব্যয়)। মাতারবাড়ি প্রকল্পে প্রতিটন কয়লার দাম ১২৯ ডলার নির্ধারণ করে ইউনিটপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে সাত টাকা ৪৯ পয়সা। মাতারবাড়িতে বিদ্যুত কেন্দ্রর পাশাপাশি কয়লা খালাসের জন্য একটি আধুনিক বন্দর নির্মাণ করা হবে। বন্দরটি ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য কয়লা খালাস করতে পারবে। কিন্তু প্রথমিকভাবে এর ব্যয় দুটি বিদ্যুত কেন্দ্রকে বহন করতে হবে। মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র তাদের একটি। এছড়া চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চায়না হুদিয়ান হংকং কোম্পানি লিমিটেড এবং পিডিবি যৌথভাবে অন্য বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। গত এপ্রিলে বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে পিডিবি। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, মাতারবাড়ি প্রকল্পের ৭০ ভাগ জাইকা ঋণ সহায়তা দেবে। সুদের হার হবে শূন্য দশমিক শূন্য এক (০.০১) শতাংশ। পরিশোধের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ বছর। ঋণ পরিশোধের জন্য আরো ১০ বছর গ্রেস পিরিওড রয়েছে। এত কম সূদে ঋণ পাওয়ার জন্যই নগরায়ণ এবং অন্যান্য কাজ করা আমাদের জন্য সহজ হচ্ছে। তিনি বলেন, মহেশখালীকে ঘিরে সরকার একগুচ্ছ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর প্রথম প্রকল্প হিসেবে জাইকার অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে এটি।
×