ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাঙ্গ হলো পঞ্চরজনীর সুরভ্রমণ উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

সাঙ্গ হলো পঞ্চরজনীর সুরভ্রমণ উৎসব

মনোয়ার হোসেন ॥ সুরের অনুরণনের শুরুটা হয়েছিল বৃহস্পতিবার। সঙ্গীতের অমিত সুধা ছড়ানো আয়োজনটি শেষ হলো সোমবার। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শুরু হয়ে রাত গড়িয়ে ভোরের সূচনালগ্ন পর্যন্ত বয়ে গেছে সুরেলা ঝড়। ওস্তাদ, প-িত, বিদুষী ও গুরুরা বৈচিত্র্যময় নানা পরিবেশনায় উজাড় করে উপস্থাপন করেছেন আপন শৈলী ও কারুকার্য। মোহাবিষ্ট কণ্ঠসঙ্গীতের সঙ্গে ঝঙ্কার তুলেছে সেতার, সরোদ, সন্তুর ও মধুময় বাঁশির অনন্য শব্দধ্বনি কিংবা উচ্চাঙ্গের অপরূপ নৃত্যশৈলী। আর পাঁচ রাতের এমন বৈভবে ভরপুর সুরভ্রমণে সিক্ত হয়েছে বিনিদ্র রজনী পার করা লাখো শ্রোতা-দর্শক। সঙ্গীতের এই সুন্দরতম দৃশ্যকাব্য সঞ্চারী ৫৫ ঘণ্টার সুর সফরের ইতি টেনে শেষ হলো পঞ্চরজনীর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব। রবিবার ছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত তৃতীয়বারের এ মহাসঙ্গীতযজ্ঞের সমাপনী রাত। সমাপনী রজনীর সঙ্গীতাসরের সূচনা হয় দেশের স্বনামধন্য শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনার মাধ্যমে। অনেক কণ্ঠ একসুরে গেয়ে শোনায় ভাষা আন্দোলনের চেতনাজাত গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। পরের পরিবেশনায় শিল্পীরা আশ্রয় করেন লালনকে। পরিবেশন করেন বেঁধেছে এমনও ঘর শূন্যের ওপর। দেশাত্মবোধক গান এই পদ্মা, এই মেঘনা দিয়ে শেষ হয় দেশের শিল্পীদের সম্মেলক পরিবেশনা। যূথবদ্ধ পরিবেশনায় অংশ নেন ফরিদা পারভিন, সুবীর নন্দী, শাহীন সামাদ, মিতা হক, খায়রুল আনাম শাকিল, শামা রহমান, ইয়াকুব আলী খান, কিরণ চন্দ্র রায়, অদিতি মহসিন, অনিন্দিতা চৌধুরী, আজিজুর রহমান, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, বুলবুল ইসলাম, চন্দনা মজুমদার, ইলোরা আহমেদ শুক্লা, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, ইফ্্ফাত আরা দেওয়ান, ইয়াসমিন মুসতারি, জান্নাত-ই-ফেরদৌসি, ঝুমা খন্দকার, লাইসা আহমেদ লিসা, মাসুদা নার্গিস আনাম, মহিউজ্জামান চৌধুরী, নাসিমা শাহিন, প্রিয়াঙ্কা গোপ, শহীদ কবির পলাশ, শারমিন সাথী ইসলাম, সেমন্তি মঞ্জরী, সুমা রানী রায় ও তানিয়া মান্নান। সমবেত পরিবেশনার পর মঞ্চে আসেন বেনারস ঘরানার একাদশ প্রজন্মের কত্থক নৃত্যশিল্পী বিশাল কৃষ্ণ। বিস্ময়কর উপাধিপ্রাপ্ত এই শিল্পী শিব বন্দনা দিয়ে শুরু করেন। এর পর ঝাপতালে ছোট্ট খেয়ালে মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির অনন্য প্রকাশে নৃত্য পরিবেশন দর্শকের নয়নে ছড়ান মুগ্ধতার রেশ। উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে মঞ্চে আসেন কণ্ঠশিল্পী কিশোরী আমানকার। তাঁর সঙ্গীত পরিবেশনের পরে বাঁশির সুরলহরীতে শ্রোতাদের মন মাতিয়ে তোলেন মনিরুজ্জামান। বাঁশির সুরের মায়াজাল শেষ না হতেই মঞ্চে পর পর আসেন অশি^নী ভিডে দেশপা-ে ও প-িত উদয় ভাওয়ালকার। সব শেষে ছিলেন উৎসবের শেষরাতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ওস্তাদ আমজাদ আলী খান। গভীর রাত পেরিয়ে ভোরের সূচনালগ্নে সরোদের মোহময় সুরধ্বনি দেন এই শিল্পী। মায়া বিস্তারী সুর মূর্ছনা শ্রোতাকে পৌঁছে দেন ধ্যানমগ্নতার গভীরে। সমাপনী অধিবেশনের শুরুতেই প্রয়াত বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে নিবেদিত ভারতের শিল্পী যোগেন চৌধুরীর শোকবার্তা পাঠ করা হয়। এ অধিবেশনের প্রধান অতিথি ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপার্সন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
×