ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শেরেবাংলায় জিম্বাবুইয়ে ১২৪ রানে পরাজিত, দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জয়

রেকর্ড গড়েই সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৭ নভেম্বর ২০১৪

রেকর্ড গড়েই সিরিজ জিতল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ বছরজুড়ে হারতে থেকে শেষ বেলায় এসে কী দিনটিই না পেল বাংলাদেশ। কী সুখের, শান্তির, স্বস্তির দিন। দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে রেকর্ড সর্বোচ্চ স্কোর গড়ল। দুই ম্যাচ হাতে রেখেই পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুইয়েকে হারিয়ে দিল। অথচ সেই দিনে উরুতে ব্যথা পেয়ে মাঠ থেকে বের হতে হলো পেসার শফিউল ইসলামকে। মনের মতো সিরিজ জয়ের আনন্দও করতে পারলেন না। জিম্বাবুইয়ের শেষ দুই ব্যাটসম্যানও (চিগুম্বুরা ও কামুঙ্গোজি) মাঠ ছাড়লেন। তবে বিধ্বস্ত হয়ে। তৃতীয় ওয়ানডেতে ১২৪ রানে হেরে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে রানের দিক দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ও এটি। এই হারই জিম্বাবুইয়েকে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে দিল। সিরিজ হার নিশ্চিত করল। এখন বাংলাদেশের সামনে যেন শুধু জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করাই বাকি থাকল। চতুর্থ ও পঞ্চম ওয়ানডে জিতলেই বাংলাদেশ এমন গৌরবও নিজেদের ইতিহাসে যুক্ত করে ফেলবে। বুধবার জিতে বাংলাদেশ একটি গৌরব অক্ষুণœœ রেখেছে, রেকর্ড অক্ষুণœ রেখেছে। এখন পর্যন্ত দেশের মাটিতে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলে সিরিজে হারেনি বাংলাদেশ। এনামুল হক বিজয় কী দুর্দান্ত ব্যাটিংই না করলেন। অথচ মাত্র ৫ রানের জন্য শতক করতে পারলেন না। তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান যেন প্রতিযোগিতায় নামলেন। দুইজনই ৪০ রান করে করলেন। দুই বন্ধু যেন কার আগে কে ৪০০০ হাজার রান করবেন, সেই প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তৃতীয় ওয়ানডেতে কাররই হলো না। শুধু কী তামিম-সাকিব, দুই ‘ভায়রা’ ভাই মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ’ও তো প্রতিযোগিতা করলেন। কিন্তু কেউ কাউকে হারাতে পারলেন না। দুইজনই ৩৩ রান করে করলেন। শেষে সাব্বির রহমান রুম্মন ধুন্ধুমার ব্যাটিং করে ২২ রান করলে বাংলাদেশের ইনিংসে রেকর্ড ২৯৭ রান যুক্ত হয়। ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে এই রান করে বাংলাদেশ। এই রান অতিক্রম করতে গিয়ে জিম্বাবুইয়ে শুরু থেকেই বিপাকে পড়তে থাকে। শেষে দেখা যায় ৩৯.৫ ওভারে ১৭৩ রানের বেশি জিম্বাবুইয়ে করতেই পারল না। বাংলাদেশের কাছেও হারল সবচেয়ে বড় ব্যবধানেই। এর আগে ১২১ রানে বাংলাদেশের কাছে সবচেয়ে বড় হার হয়েছিল জিম্বাবুইয়ের। বুধবার সর্বোচ্চ রান করলেন অধিনায়ক চিগুম্বুরা (৫৩*)। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট নিলেন আরাফাত সানি (৪/২৭)। একের পর এক ম্যাচে বিধ্বস্ত হতে থাকা দলটি যে মানসিকভাবেই এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই বোঝা যাচ্ছে। যেন বলতে চাইছে, ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাচি।’ যদি এমন অপশন থাকত সিরিজের মাঝপথে ওয়াকওভার দিয়ে না খেলার, তাহলে বোধ হয় তাই করতেন জিম্বাবুইয়ানরা। আর কত হারা যায়। টানা ৬ ম্যাচ হার হয়ে গেছে। তিন টেস্টের পর তিন ওয়ানডেতেও হার হয়েছে। বুধবারের হারটি আবার বাংলাদেশকে যেখানে ১৬টি সিরিজ জয়ের গৌরব এনে দিয়েছে, সেখানে জিম্বাবুইয়ে অষ্টমবারের মতো বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হারের লজ্জা পায়। এ জয়টি বাংলাদেশকে রেকর্ড অক্ষুণœ রাখার অর্জনও এনে দেয়। দেশের মাটিতে এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচের সিরিজ খেলে কখনই হারেনি বাংলাদেশ। এবারও হার হলো না। সিরিজ জয়ই নিশ্চিত হয়ে গেল। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৫৬ দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে। ২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়েকে সিরিজে হারিয়েই প্রথম সিরিজ জয়ের আনন্দ পায়। সেই থেকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে ১৫ সিরিজে জিতে বাংলাদেশ। এবার ৫৭তম সিরিজে ১৬তম বার সিরিজ জয় হয়ে যায় বাংলাদেশের। এর মধ্যে ৫ ম্যাচের সিরিজই খেলে ১২টি। এবারেরটি নিয়ে হলো ১৩টি। বুধবার জিতে ৮টি সিরিজে জয় হলো। হারে আগের মতোই ৫টি সিরিজে। দেশের মাটিতে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে ৭টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। এ বছরের প্রথম সিরিজ জয়ও হলো। দেশের মাটিতে বাংলাদেশ কোনবারই ৫ ম্যাচের সিরিজ হারেনি। ২০০৫ সালে প্রথমবার জিম্বাবুইয়েকে ৩-২ ব্যবধানে হারায়। এরপর ২০০৬ সালে একই দলের বিপক্ষে ৫-০ ব্যবধানে, ২০০৯ সালে আবারও জিম্বাবুইয়েকে ৪-১ ব্যবধানে, ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডকে ৪-০ ব্যবধানে, একই বছর আবার জিম্বাবুইয়েকে ৩-১ ব্যবধানে, সর্বশেষ ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-২ ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে ৫ ম্যাচের সিরিজ জয় অক্ষুণœœ রাখে মাশরাফিবাহিনী। এমন সিরিজ জয়ের দিনে আনন্দের সঙ্গে কিছু ছোটখাটো বিষয়ও মিলে। তামিম টানা দুই ম্যাচে রান আউট হন। সাত বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৩৩ ম্যাচ খেলে ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ১৪ বার রানআউট হয়েছেন তামিম। কিন্তু টানা দুই ম্যাচে রানআউট হলেন তামিম দ্বিতীয়বার। গতকাল ৪০ রান করে রানআউট হন। এর আগে চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও ৭৬ রান করে রানআউট হয়েছিলেন। ২০০৯ সালেও টানা দুই ম্যাচে রানআউটের ঘটনা রয়েছে তামিমের ক্যারিয়ারে। ১০ জানুয়ারি ঢাকায় জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধেই রানআউট হয়েছিলেন ১৩ রান করে। ঠিক পরের ম্যাচে ১৪ জানুয়ারি আবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই তামিম ৯ রান করে রানআউট হয়েছিলেন। ওপেনিং জুটিতে শতরান, তাও আবার পরপর দুই ম্যাচে! এমনটিই ঘটেছে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে। তামিম-এনামুল মিলে এমন কা-ই ঘটিয়েছেন। এর আগে বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে ওপেনিং জুটিতে শতরানের যুগলবন্দী ছিল নয়টি। বুধবার তামিম ইকবাল-এনামুল হক বিজয়ের ১২১ রানের জুটি ছিল ওপেনিংয়ে দশম শতরানের যুগলবন্দী। তবে বাংলাদেশের ২৮ বছরের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবার ওপেনিংয়ে টানা দুই ম্যাচে শতরানের জুটি দেখা গেল। চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ওপেনিংয়ে ১৫৮ রানের জুটি গড়েছিলেন তামিম-বিজয়। এবার ঢাকায়ও শতরানের জুটি গড়লেন। দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের স্কোর গড়ল বাংলাদেশ। তৃতীয় ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান করে বাংলাদেশ। এর আগে চট্টগ্রামেই প্রথম ওয়ানডেতে সেরা স্কোর (২৮১/৭) গড়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এমন সুন্দর একটি সিরিজ জয়ের দিনে সাকিব, তামিম দুইজনই ৪০০০ রানের মাইলফলকে পা রাখতে পারতেন। কিন্তু কেউই পারলেন না। সাকিব ২৪ রানের জন্য, তামিম ৫৫ রানের জন্য এ মাইলফলক ছুঁতে পারেননি। তাদের দুইজনকেই অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। তাই বলে বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। সিরিজ জয় হয়ে গেছে। সেই জয় আবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ স্কোর, সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড গড়েই আদায় করেছে বাংলাদেশ।
×