ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিম্বাবুইয়ে ৮৭ রানে হারল

সাকিব ঝলকে বাংলাদেশের জয়

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২২ নভেম্বর ২০১৪

সাকিব ঝলকে বাংলাদেশের জয়

মিথুন আশরাফ চট্টগ্রাম থেকে ॥ সবার মুখে মুখে একটাই কথা, ‘বাংলার জান, বাংলার প্রাণ; সাকিব আল হাসান।’ দর্শকে টইটম্বুর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেও সেই ‘সাকিব, সাকিব’ রবই শোনা গেছে। তিনিই যে বাংলাদেশকে একের পর এক ম্যাচ জেতাচ্ছেন। টেস্ট সিরিজে তো তাঁর নৈপুণ্যেই জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। শুধু কী তাই, শুক্রবার যে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে জিম্বাবুইয়েকে ৮৭ রানে হারাল বাংলাদেশ, সেটাও তো সাকিবের কল্যাণেই। তাঁর ব্যাটিং-বোলিং ঝলকেই তো বছরজুড়ে হারতে থাকা বাংলাদেশ অধরা জয়ের দেখা পেল। অবশেষে হারের গোলকধাঁধা থেকে বের হতে পেরে স্বস্তিও নেমে আসল। ১০১ রান করার পর বল হাতে ৪ উইকেট নিয়ে সাকিব আবার রেকর্ডই গড়ে ফেললেন। বিশ্ব ক্রিকেটে ১২তম ও বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক ম্যাচে শতক ও ৪ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়লেন সাকিব। টস ও শিশির নিয়ে দুই দলের ভেতরই ভয় ছিল। কিন্তু সেই ভয় শুক্রবার কোন দলকেই আচ্ছন্ন করতে পারল না। সাকিবের ১০১, মুশফিকের ৬৫ ও সাব্বিরের অপরাজিত ৪৪ রানে যে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে ২৮১ রানের বড় স্কোর গড়েছে, সেই জন্য টস হারা ও শিশির কোন প্রভাবই ফেলতে পারল না। আর জিম্বাবুইয়ে টস জিতে ফিল্ডিং নিলেও তা কাজে দিল না। শিশির ফ্যাক্টর হওয়ার আগেই যে বাংলাদেশ বড় স্কোর গড়ে ফেলেছে। এ স্কোরে চাপা পড়ে তা থেকে মুক্তির পথ খোঁজাই যে প্রধান কাজ ছিল। সেখানে শিশির নিয়ে ভাবার সময় কোথায়! যে শিশির স্পিনারদের অসুবিধার কারণ বলে ধরা হলো, সেই শিশির ভেজা মাঠেই প্রথম ২ উইকেট নিয়ে নিলেন সাকিব! সেই যে ধস নামা শুরু হলো জিম্বাবুইয়ে ইনিংসে, শেষে ১৯৪ রানের বেশি করতে পারল না। সাকিব প্রথম ২ উইকেট নেয়ার পর আরেক স্পিনার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও ২ উইকেট নিয়ে নিলেন। শেষে সাকিব ৪ উইকেট নিলেন। বাংলাদেশও ১-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে গেল। সিরিজ জিততে হলে এখন বাংলাদেশকে আরও ২টি ম্যাচ জিততে হবে। বাংলাদেশ কি এখন হোয়াইটওয়াশের স্বপ্নও দেখতে পারে না? প্রথম ওয়ানডে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, জিম্বাবুইয়ে দল নড়বড়ে। বাংলাদেশ দল নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে জিম্বাবুইয়েকে দেশের মাটিতে যে কোন কন্ডিশনেই হোয়াইটওয়াশ করা কোন বিষয়ই না। টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর যতই জিম্বাবুইয়ানরা বলুক, এবার নতুন সিরিজ, নতুনভাবে শুরু করতে চাই; তা খেলায় কোন কাজেই আসছে না। মাঠে নামার আগে দুই দলই ক্রীড়াব্যক্তিত্ব মনজুর হাসান মিন্টুর মৃত্যুর জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করল। এরপর যখন খেলা শুরু হলো, ৮ রানেই তামিম আউট হয়ে গেলেন। কী আশ্চর্য, মেলবোর্নে দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া, দুবাইয়ে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড ও চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে ম্যাচে শুক্রবার যে প্রথম উইকেটটা পড়ল, সব ম্যাচে ৮ রানেই উইকেট হারাতে দেখা গেল! শুরুতেই বাংলাদেশের ইনিংসে ধস নামল। ৭০ রানে তামিম (৫), এনামুল (১২), মাহমুদুল্লাহ (১), মুমিনুলকে (৩১) হারাল বাংলাদেশ। কিন্তু সাকিব-মুশফিক মিলে দলকে ১৪৮ রানের রেকর্ড জুটি উপহার দিয়ে আবার চাঙ্গা করে তুললেন। দলের ২১৮ রানের সময় সাকিব আউট হওয়ার পর ২৪৬ রানেই মুশফিকও (৬৫) আউট হয়ে যান। এরপর সাব্বির ধুন্ধুমার ব্যাটিং করে ২৫ বলে তিন চার ও তিন ছক্কায় অপরাজিত ৪৪ রান করে দলের স্কোরবোর্ড আরও মজবুত করে তোলেন। এ মজবুত ভিত নাড়িয়ে দিতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে। শুরুতে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা (৪২) চেষ্টা করেছেন। পরে ব্রেন্ডন টেইলর (৫৪) কিছুটা উইকেট আঁকড়ে থাকতে পেরেছেন। কিন্তু অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় জিম্বাবুইয়েকে হারতেই হয়েছে। জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানদের এ ব্যর্থতা এসেছে সাকিবের ঘূর্ণির জাদুতেই। শুরুতে ২ উইকেট নেয়ার পর শেষে আবার ২ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুইয়ের ইনিংসেরই পতন ঘটিয়ে দেন সাকিব। মাঝখানে মাহমুদুল্লাহ, মাশরাফি ২ উইকেট করে নিয়ে সেই ধারা বজায় রাখেন। আর শেষ উইকেটটিসহ ২ উইকেট নেন আরাফাত সানি। তবে সেই একজনের নামই খেলা শেষে সবার মুখে মুখেই থাকে, ‘সাকিব, সাকিব’। ব্যাটিংয়ের পর সাকিবের দুর্দান্ত বোলিং ঝলকেই যে বাংলাদেশ জিতল।
×