ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দীর্ঘ ভ্রমণের পর লাগেজ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা ;###;দেয়াল, ছাদ, কার্নিশে টায়ার টিউব কেটে জোড়াতালি ;###;বাথরুমে দুর্গন্ধ, দরজায় অশ্লীল কথাবার্তা, আপত্তিকর অঙ্কন

দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কুকুর বিড়াল ইঁদুর মশা মাছি ॥ বেহাল শাহজালাল

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২২ নভেম্বর ২০১৪

দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কুকুর বিড়াল ইঁদুর মশা মাছি ॥ বেহাল শাহজালাল

আজাদ সুলায়মান ॥ বিস্ময়কর! ধারণাতীত। কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, মশা, মাছি, পোকামাকড় থাকে বন-জঙ্গলে ঝোপঝাড়ে। কিন্তু এ সবই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। দেশী-বিদেশী যাত্রীর কারোরই নজর এড়ায় না। মশার কামড় খায়নি, মাছির ভনভনানি শোনেনি এমন যাত্রীর দেখা মেলা ভার। আর কালো বেড়ালের দাপট দেখে শিউরে ওঠে শিশুরা। বড়দের প্রতিক্রিয়াÑকালো বেড়ালে যাত্রানাস্তি। জঞ্জালের শেষ এখানেই নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও দেখা মেলে না লাগেজের। যেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবেন লাগেজের জন্য সেখানকার আশপাশের দেয়াল, ছাদ ও কানিশে দেখবেন টায়ার-টিউব কেটে দেয়া হয়েছে জোড়াতালি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত এক বিশিষ্ট সাংবাদিক এমন দৈন্য দশার চিত্রে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। মন্তব্য তার ঠোঁটেÑএজন্যই বোধ হয় বিশ্বের নিকৃষ্টতম বিমানবন্দরের তালিকায় নবমে নেমে গেছে। থ্যাঙ্কস, সিভিল এ্যাভিয়েশন, গড ব্লেস! শাহজালাল বিমানবন্দর। উল্লেখ্য, এ মাসের প্রথমদিকে বিশ্বের একটি জরিপ সংস্থার নিকৃষ্টতম বিমানবন্দরের তালিকায় শাহজালাল বিমানবন্দর নবম স্থানে উঠে এসেছে। এটা আগে ছিল আরও নিচে। এ সূচক বিমানবন্দরের ক্রমাবনতির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। শাহজালাল বিমানবন্দরের এমন দৈন্য দশা থাকলেও নজর নেই কারোর। জানতে চাইলে পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কেএম জাকির হাসান জনকণ্ঠকে Ÿলেন-মশার জন্য কীটনাশক দেয়া হচ্ছে,বাথরুম পরিষ্কার- পরিচছন্ন রাখতে সবাই সচেষ্ট। তবে এখন মশা কিছুটা বেশি। তবুও চেষ্টার ত্রুটি নেই। আশপাশের ঝোপঝাড়,বন-জঙ্গল নর্দমা ও জলাশয় পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লাগেজের দায় বিমানের, এয়ারপোর্টের নয়। তবে দিন দিন পরিস্থিতি ভাল করার চেষ্টা চলছে। কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতেই পারে। তিনি মতামত দেন-এত সমস্যার মাঝেও এসব তো তেমন কোন কিছুই নয়। একটু পজেটিভ দেখলেই চলে। সব কিছু লেখা ভাল নয়। গত সপ্তাহে দেশের একটি শীর্ষ দৈনিকের প্রভাবশালী সম্পাদক বিদেশ থেকে আসার পর লাগেজের জন্য দাঁড়ান। প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা। লাগেজ আসেনি। দীর্ঘ ভ্রমণের পর এখানে এসে লাগেজের জন্য এত সময় দাঁড়িয়ে থাকাটাই তার কাছে সবচেয়ে বাজে ও চরম বিরক্তিকর ঠেকে। অনুসন্ধিৎসু মনের এই সম্পাদকের দৃষ্টিতে তখন কিছুই বাদ যায়নি। এত দীর্ঘ আলস্য সময় কাটানোর উপায় কি? সঙ্গত কারণেই তাঁর চোখ পড়ে সামনের বিলবোর্ড, দেয়ালে লাগানো টায়ারের কাট পিস, প্লাস্টার খসেপড়া বিবর্ণ ছাদ, কানে আসে মশার গুনগুনানি। ব্যর্থতা কোথায় ॥ শাহজালাল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ক্লিনার সেকশনে নিজস্ব কর্মচারী রয়েছে। ক্লিনিং সেকশনের কাজ বিমানবন্দরের আনাচে-কানাচের সব জঞ্জাল দূর করা । পরিষ্কার করা ও রাখা। নিজস্ব জনবল দিয়ে মোটামুটি ভালই চলছিল। আজ থেকে দশ বছর আগেও পরিস্থিতি ছিল যথেষ্ট্ ভাল। এ অবস্থায় আরও ভাল করার জন্য হঠাৎ ২০০৫ সালে বিমানবন্দরের ক্লিনিং সেকশনের সব কাজ দেয়া হয় এ কে ট্রেডার্স নামের একটি বেসরকারী কোম্পানিকে। এতে পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। প্রথম প্রথম কিছুদিন ভাল ছিল। কিন্তুু এখন পরিস্থিতি সুখকর নয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়-দেয়ালে এখনও লেগে আছে ময়লার দাগ। বাথরুমে নোংরা দুর্গন্ধ। পানির বদনায় ময়লা। টিস্যু থাকে না প্রায়ই। দরজা ভাঙ্গা। যেগুলো আছে তাতে লেখা সব অশ্লীল কথাবার্তা, আপত্তিকর অঙ্কন। এপিবিএন এডিশনাল এসপি শিহাব কায়সার খান জানান-মেয়েদের বাথরুমের অব্স্থা আরও শোচনীয়। সেখানে যারা যায় তারা মুখে কাপড় গুঁজে বের হয়। লন্ডনগামী মিরা জানান, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাথরুমের যদি এই অবস্থা বিদেশী নাগরিকরা দেখেন, তাহলে তাদের কাছে মনে হবে- এদেশের সাধারণ মানুষ জানি কতটা নোংরা। সির্ভিল এ্যাভিয়েশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে- প্রতিমাসে একে ট্রের্ডাসকে পরিশোধ করা হয় ১৪ লাখ টাকা। তাদের কাজই হচ্ছে গোটা বিমান বন্দরকে মুক্তোর মতো ঝকঝকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। সেটা হয়নি। নীল ইউনিফর্ম পরা একে ট্রেডার্সের পরিচছন্ন কর্মীদের সারা বিমানবন্দরে দৌড়ঝাপ করতে দেখা যায়। কারোর হাতে থাকে ময়লার পট, কারোর থাকে বাস্কেট। স্যানিটারি কিট নিয়ে লোক দেখানো দৌড়ঝাপ থাকলেও আদতে কাজ যে কিছুই হচ্ছে না । তারই বড় প্রমাণ গোটা বিমানবন্দরে মশা, মাছি ও বিড়ালের উৎপাত। এসব অভিযোগ সম্পর্কে একে ট্রেডার্সের খালেক জানান-সিভিল এ্যাভিয়েশনের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে দেনদরবার চলছে। ২০০৫ সালে যে শ্রমিক ছিল, তার চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। কিন্তুু পরিশ্রমিক রয়ে গেছে সেই আগের মতোই। এখানে যে সব ক্লিনার কাজ করেন, তার বেতন বড়জোর হাজার চারেক। অথচ একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতন তার চেয়ে দ্বিগুণ। ২০০৫ সালে একটা সাবানের দাম ছিল নয় টাকা। এখন সেটা বিশ টাকা। চুক্তি মোতাবেক সিভিল এ্যাভিয়েশন কোন সুবিধাই দিচ্ছে না। আগে মাসে টিস্যু লাগত ২ হাজার। এখন দরকার কমপক্ষে ২০ হাজার। সেখানে আমরা দিতে পারছি ১৪ হাজারের মতো। কাজেই কিছু তো ঘাটতি থাকবেই। আর বাথরুমের দরজা-জানালা ভাঙ্গাচোরা দেখার দায়িত্ব সিভিল এ্যাভিয়েশনের। বার বার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও তারা সেগুলো ঠিক করে না। মশার রাজত্ব কেন ॥ গত রবিবার দুপুরে দুবাই থেকে আসা যাত্রী হাসান জানান-তিনি আধঘণ্টা ধরে কনভেয়ার বেল্টে দাঁড়ানো। লাগেজ ততোক্ষণেও আসেনি। বাধ্য হয়েই ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বসতে হলো কাস্টমস লাগোয়া পাশে সারিবদ্ধ চেয়ারে। মিনিট কয়েক থাকার পরই শুরু হলো ঠাস ঠাস আওয়াজ। একবার পায়ে, আবার ডানায় থাপাথাপি। ব্যাপার কী ? দেখছেন না মশার দাপট । কতক্ষণ খাব মশার কামড়? পাশের এক যাত্রীর উত্তর- লাগেজ না আসা পর্যন্ত। শুধু চেয়ারে বসেই নয়, দাঁড়িয়ে থাকলেও রেহাই নেই। মুহূর্তেই ভন ভন করে মশা হানা দেবে যাকে সামনে পাবে তাকেই। সেটা সাধারণ যাত্রীই হোক কিংবা কোটিপতিই হোক। ইমিগ্রেশন, কনভেয়ার বেল্ট, গ্রীন চ্যানেল, কাস্টমস হল কোথায় নেই মশার উৎপাত। কাস্টমস হলের নিজ নিজ রুমে যিনি বসে থাকেন তারও নিস্তার নেই। বসে মশা মারার কাজেই তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। বিমানবন্দরে টার্মিনালের নিচে দক্ষিণ প্রান্তে রয়েছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের অপারেশনাল অফিস। এপিবিএন নিজস্ব উদ্যোগেই ওই জায়গাটুকু সব সময় যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। বেশ পরিপাটি ও সৌন্দর্যম-িত আসবাবপত্রে সাজানো- গোছান। দইু এএসপি দুটো সাজানো অফিসের গ্লাস ফিটিং দরজা। লাগিয়ে রাখলে ভেতরে মশা ঢোকার জো থাকে না। কিন্তু তাতেও রেহাই নেই। কিভাবে যেন চোরাইপথে মশা ঢুকে। ওই অফিসের ভেতরে মিনিটপাঁচেক বসলেই টের পাওয়া যায় কি এক নরক যন্ত্রণা! চোখের অজান্তেই মশার হুল ঢুকে যায়। তখন ভিকটিমের বিরক্তিকর জিজ্ঞাসা-বড় বড় সোনার চালান ধরতে পারেন, মশা তাড়াতে পারেন না কেন? এএসপি আলমগীর হোসাইন শিমুলের তির্যক জবাব-এসব আর বলতে যাবেন না। মশা মারার জন্য লোক আছে, বাজেট আছে, মাঝে মাঝে ওষুধও ছেটানো হয় তবুও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সিভিল এ্যাভিয়েশনের দায়িত্ব এসব দেখা। তারপরও এপিবিএন নিজস্ব উদ্যোগে মশার কয়েল কিনে ব্যবহার করছে। আর কত এভাবে? আসলে যতটা কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার ততট হচ্ছে না। মশার আক্রমণ থেকে বাদ যায়নি ভিআইপি রুমের বাসিন্দারাও। ওখানেও চোখে পড়ে কিভাবে লোকজন শরীর চুলকায়। তবে এখানে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে মশার ওষুধ ছেটানো হয়। তাতেও দমছে না মশা। পরিস্থিতি যে আসলেই কতটা লজ্জার তা স্বচক্ষে দেখে গেছেন গত রবিবার সড়ক সচিব এমএএন সিদ্দিক। তিনি ভিআইপি বাথরুমে গিয়ে দেখেন সাবানের কেস ভাঙ্গা। কেন মশা দমন হচ্ছে না? জবাবে শিহাব কায়সার খান জনকণ্ঠকে বলেন-কোথায় জানি একটা ঘাটতি আছে। মশার ওষুধ তো ছেটানো হয়। তারপরও মশা দমে না। শুধু মশা তো নয়। ইঁদুর, চিকার উৎপাত তো আরও ভয়াবহ। শিহাব যখন কথা বলছিলেন ইঁদুর-চিকা নিয়ে তখন পাশে বসা সিনিয়র এএসপি মোতাজ্জার হোসেন আরও একধাপ এগিয়ে মুখ খুলে রসিকতার সুরে বলে ফেললেন-আরে ইঁদুর, বিড়াল আর কি? ক’দিন আগে ভারতের এক ্এয়ারপোর্টে তো হনুমান দেখা গেছে। সে তুলনায় অন্তত ভাল আছি। মশা সম্পর্কে বিমানবন্দরের যাত্রী, দর্শনার্থী, বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন- দিন নেই, রাত নেই, মশার উৎপাত অসহনীয়। বিমানের কাউন্টারে বসে জানালেন এক কর্তা- মনযোগ দিয়ে কাজ করার উপায় নেই। কম্পিউটারের যাত্রীর টিকেট চেক করার সময় এক হাতে শরীর চুলকাতে হয় অন্য হাতে প্রিন্ট দিতে হয়। একই সময় যাত্রীর অবস্থাও তথৈবৈচ। ইতিহাদ এয়ারলাইন্সের কাউন্টারের সামনে দাঁড়ানো যাত্রী মাহবুব বলেন-কাউন্টারের বেল্টে যখন ইঁদুর শিকারের নেশায় কালো বেড়াল দৌড়াদৌড়ি করে তখন মনে হয় না আমি কোন এয়ারপোর্টে দাঁড়ানো। কোন যাত্রার আগে যদি এ ধরনের কালো বেড়াল দেখে যেতে হয় সেটা তো মানসিকভাবেও প্রভাব ফেলে। কালো বেড়াল দেখলে যাত্রা নাস্তি, কিছু লোকের এমন বদ্ধমূল ধারণা আছেই। হোক সেটা কুস্স্কংার বা অন্য কিছু। মশা কি আদৌ দমনযোগ্য নয় এমন প্রশ্নও করি বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট বিভাগে। এ সম্পর্কে জানা যায়-বিমানবন্দরে যে পদ্ধতিতে মশা তাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয় সেটা আদৌ কার্যকর নয়। পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান জানান-বর্তমানে তাদের নিজস্ব ৫টি ফগার মেশিন ও এলইউবি মেশিন দিয়ে কাজ করা হয়। মাঝে মাঝে মশার ওষুধেরও সঙ্কট দেখা দেয়। বিমানবন্দরের মশা মারার দায়িত্ব আসলে সিটি কর্পোরেশনের।কিন্তু তারা এ দায়িত্ব নেয়ন্।ি ফলে সিভিল এ্যাভিয়েশনের নিজ উদ্যোগেই মশা বিতাড়ন কাজ চালানো হয়। সূত্র জানায়- যে পদ্ধতিতে মশা বিতাড়নের কাজ চলছে,তাতে কিছুতেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। এটা সেই মান্ধাতা আমলের পদ্ধতি। দুনিয়ার কোন এয়ারপোর্টে মশার এমন উৎপাতও নেই। আর থাকলেও সেটা ভিন্ন পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। যেমন সেন্ট্রাল ইলেকট্রিফাইং মেশিনে মশা, মাছি, পোকামাকড় দমানো হয়। ধূয়া স্প্রে করে মশা দমনের কাজ চলে বনজঙ্গলে, রাস্তাঘাটে, মহল্লার বাসাবাড়িতে। পরিচালক জাকির হাসান মনে করেন-মশার উৎপাতের মূল কারণ বিমানবন্দরের চারপাশে রয়েছে বনজঙ্গল,ঝোপঝাড়,জলাশয়ও নর্দমা। সেসব স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিষ্কার অভিযানের পাশাপাশি ফগার দিয়ে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। ফগার দিয়ে ওষুধ ছিটানো সম্পর্কে এক স্যানিটারি কর্মকর্তা জানান-এতে যে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় সেটা কার্যকর নয়। তাতে মশা মরে না। ছিটানোর পর মশা কিছু সময় আধমরা হয়ে পড়ে। ঘণ্টা দুয়েক পর আবার সে পূর্ণদ্যমে ফিরে পায় প্রাণশক্তি। তখণ সে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তখন তার গুনগুনানির বেগ বেড়ে যায়। ইদুরও অপ্রতিরোধ্য ॥ শুধু মশা কেন, ইঁদুরও অপ্রতিরোধ্য। বিমানবন্দরের নিচ তলার সিলিং, ছাদের চিপায় ঘাপটি মেরে থাকা ইঁদুর হরহামেশাই চোখের সামনে দেয় ভোঁ দৌড়। নিচতলার এপিবিএন অফিসে কিছুক্ষণ বসলেও চোখে পড়ে ইঁদুর-চিকার ম্যারাথন দৌড়। এ সব দমানোর কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নেই বলে জানালেন পরিচালক জাকির হাসান। তবে তিনি স্বীকার করলেন, ইঁদুর মারার পরিণাম আরও খারাপ হবে। ওষুধ প্রয়োগ করলে, কোথায় কোন্ আড়ালে মরে পচবে, গলবে, তখন দুর্গন্ধে কি টেকা যাবে? এ সময় ডেঁপো আব্দুল লতিফ বললেন, এ জন্য বিড়াল দরকার। বিড়াল না থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হতো। এখন তো পরিবেশে ভারসাম্য বজায় আছে। কুকুরের ঘেউ ঘেউ ॥ নিচের আগমনী ইমিগ্রেশনের পশ্চিম পাশের ডিউটি ফ্রি শপের বাইরের দেয়াল ঘেঁষে নেড়ে কুকুর ঘুমায়। লাগেজের বহর যেখানে রাখা হয় সেখানেও কুকুর করে ঘেউ ঘেউ। এটা স্বীকার করলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান। বললেন, বিমানবন্দরের পশ্চিম পাশের রানওয়ের পশ্চিম পাশ, দক্ষিণ পাশ, উত্তর পাশÑ সব দিক দিয়েই কুকুর প্রবেশের সুযোগ আছে। মাঝে মাঝে কুকুর মারাও হয়। কদিন আগেও মারা হয়েছে একটা। তবে এখন আর আগের মতো নেই। তিনি আরও বলেন, শুধু কুকুর নয়, রানওয়ের ও পাশের ঝোপে শিয়ালও তো আছে। মাঝে মাঝে রানওয়েতে চলে আসে। তখন বার্ড শূটাররা গুলি চালান। খানা খন্দক কেন ॥ আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টের বাহ্যিক দৃশ্য কেমন হওয়া উচিত এটা কর্তৃপক্ষ ভাল করেই জানেন। বিমানবন্দরের প্রবেশ পথেই এক নম্বর ক্যানপির আগের রাস্তায় বর্ষায় জমে পানি। শুষ্কে থাকে গর্ত, খানা খন্দক। গাড়ি নিয়ে যাঁরা যান তাঁরা সাবধানে ব্রেক কষেন। চাকা ফেলেন সাবধানে। কেন এটা সারারও কি উপায় নেই। প্রশ্ন রাখা হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেনের কাছে। তিনি এ নিয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য করেননি। তবুও মনের প্রতিক্রিয়াটি চেপে রাখতে পারেননি। বলেই ফেললেন, দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে এর আউটলুকিং কেমন হওয়া উচিত সেটা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন নেই। আমার দেশ কতটা উন্নত না অনুন্নত সেটা কাছে গিয়ে দেখার প্রয়োজন নেই। কোন বিদেশী যখন ইমিগ্রেশন করে ট্যাক্সি নিয়ে ওই রাস্তা পার হন তখন গর্ত দেখে তার ধারণা কেমন হবে, দেশ থেকে কী ধারণা নিয়ে যাবে সেটাও কি অনুভব করা যায় না? এ সম্পর্কেও গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান জানালেন, তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। বললেন, বার বার চিঠি লিখে জানানো হয়েছে। রাস্তা নির্মাণের জন্য তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও সেটা নির্মাণ করা হচ্ছে না। পরিচালক হিসেবে আমার যে দায়িত্ব সদর দফতরকে জানানো সেটা করেছি। আমি আর কী করতে পারি? প্রকৌশল বিভাগ তো আর আমার অধীনে নয়। ভিক্ষুক হকার উধাও॥ মাস দুয়েক ধরে ভিক্ষুক হকার ও মাদকসেবীদের উৎপাত কমে আসছে বলে জানালেন গাড়িচালক সামসু। তিনি জানান, আগে কারপার্কিংয়ের সামনে, বাগানের পাশে ও গোলচক্করে প্রবেশ মুখে ভিক্ষুক ও ভবুঘরের উৎপাত ছিল। এখন খুব একটা চোখে পড়ছে না। এ ছাড়া গাড়ি ব্যবসার আড়ালে দালাল টাউট-বাটপাড়দেরও দৌরাত্ম্য কমে গেছে। মোবাইল কোর্ট খুব কড়াকড়ি চালাচ্ছে। ভুলত্রুটি চোখে পড়লেই জেল-জরিমানা করছে। এমনকি ড্রেস কোড না মানায় জরিমানা করা হচ্ছে। এক ট্রলিম্যান নিজের ডিউটি ছেড়ে অন্য স্থানে আড্ডা দেয়ায় জরিমানা করা হয়েছে। এ সব কারণে আপাতত ওই শ্রেণীটা বিমানবন্দরে আসছে না। তবে কতদিন এমনটি থাকবে সেটাই দেখার বিষয়। জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন জানান, অভিযান চলবে। কাউকেই রেহাই দেয়া হবে না। এসব একদিনে গজিয়ে ওঠেনি, দীর্ঘ দিনের জঞ্জাল। আগে হয়ত আইন মানার প্রথা ছিল না। এটা সহ্য করার মতো নয়। নিকৃষ্টতম বিমানবন্দরের তালিকায় নবম স্থানে শাহজালাল বিমানবন্দর। বিশ্বব্যাপী পৌঁছে গেছে এ বার্তা। তবুও মনে হচ্ছে আমাদের টনক নড়ছে না। আর কত কাল লাগেজ বিড়ম্বনা ॥ দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি নিয়ে লাগেজের জন্য যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তার চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে এমন ক্ষোভ প্রায় দেখা যায়। ইমিগ্রেশন পেরিয়ে এসে খালি বেল্টের পাশে কমপক্ষে আধঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হয়। তারপর মাল আসা শুরু করলেও সব মাল শেষ হতে কমপক্ষে আরও ঘণ্টাতিনেক লাগে। কেউ প্রথম দিকে পেয়ে যান। কেউ একেবারে সবার শেষে। মনির চৌধুরী নামে এক যাত্রী জানালেন, কাতার থেকে আসার পর বেল্টের পাশে অপেক্ষা। চল্লিশ মিনিট পরও লাগেজ দেয়া শুরু করতে পারেনি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ওয়ার্কাররা। তারপর লাগেজ আসার শুরুতেই তিনি একটা লাগেজ পেয়ে যান। তাতে কিছুটা স্বস্তি পেলেন, বোধহয় বাকিটাও চলে আসবে। কিন্তু সেটা হয়নি। তারপর বাকি লাগেজের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে সর্বশেষ কন্টেনার পর্যন্ত। ততক্ষণে দেখেন পাকা তিন ঘণ্টা। কেন এ দেরি জানতে চাইলে পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান বলেন, এটা বিমানের দায়-দায়িত্ব। তাদের প্রায়ই তাগিদ দেয়া হয় লাগেজ সার্ভিস আরও উন্নত করতে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, চার শ’ আসনের একটি ৭৭৭ উড়োজাহাজের সব লাগেজ খালাস করতে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা লাগে। তবে এ অভিযোগ সম্পর্কে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেনও স্বীকার করলেনÑ তিন ঘণ্টা তো লাগছেই। কখনও কখনও বেশিও লাগে। তবে তিনি মনে করেন, সমস্যা দূর করা সম্ভব। কিছুদিন এ নিয়ে একটা মহড়াও দিয়েছেন তিনি। সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের চারশতাধিক যাত্রীর লাগেজ চল্লিশ মিনিটে খালাস দেয়া সম্ভব হয়েছে। কিভাবে সম্ভব হলো? ‘শুধু সঠিক তদারকি ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায়। আমি নিজে দাঁড়িয়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সব কর্মীকে ডেকে কঠোর নির্দেশনায় কাজ আদায় করে নিয়েছি। সারাক্ষণ আমি কাজ মনিটর করেছি। তারপর দেখলাম সবাই সঠিক সময়ে কাজ করলে সেটা এক ঘণ্টাও লাগে না বলে মন্তব্য তাঁর। তিনি বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করে বিমান। দেখা যায় বিমান বোর্ডিং ব্রিজে লাগার পর তাদের কোন পাত্তা নেই। যে যার মতো করে এখানে সেখানে অলস সময় কাটায়। যখন লাগেজ বেল্টে আসে তখন দেখা যায় এখানে সবাই সুপারভাইজার। কোন ওয়ার্কার খুঁজে পাওয়া যায় না। আসলে বিমানের কর্মীর চেয়ে সুপারভাইজার বেশি। এটা একটা বড় সমস্যা। সুপারভাইজার যাকে দিয়ে কাজ করাবেন তাদের দেখা মেলে না। এ নিয়ে একটু চিন্তা করলেই এ সঙ্কট কেটে যায়। আসলে দায়িত্বহীনতার কারণেই এ সঙ্কট।
×