ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আয় বেড়েছে ॥ বদলে গেছে জীবনযাত্রা

উত্তরাঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের এখন আর কাজের অভাব নেই

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২০ নভেম্বর ২০১৪

উত্তরাঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের এখন আর কাজের অভাব নেই

জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট থেকে ॥ লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলায় শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যাভাসে মোটা চালের ভাতের চাহিদা কমেছে। ফলে বাজারে মোটা চালের খুচরা বিক্রি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। চাল ব্যবসায়ী ও চাল উৎপাদনকারী চাল কল মালিকরা এক শ’ত কেজি চালের বস্তায় ৩৬ টাকা ক্ষতিতে বাজারে বিক্রি করছে। এই সময় মোটা চালের বাজার মূল্য কয়েক বছর ধরে একটু বেশি থাকে। এবারে সরকার শ্রীলঙ্কায় ৫০ হাজার মেঃটন চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের আপদকালীন চাহিদা মেটাতে ৩২ টাকা কেজি দরে প্রায় ৩ লাখ টন চাল সরকার কিনে খাদ্য অধিদফতরের মাধ্যমে মজুদ রাখবে। রংপুর বিভাগের আটটি জেলায় আমন মৌসুমে বাম্পার ফলন হয়েছে। শীত মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে ৭-৮ বছর আগে মঙ্গা নামের মৌসুমী দুর্ভিক্ষ হয়ে আসছিল। এই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ৫০ সালে পঞ্চাশ সালের মন্বন্তর নামে পরিচিত। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এই দুর্ভিক্ষকে তার রংতুলিতে ধরে রেখে বিশ্বের কাছে তার শিল্পকর্ম পৌঁছে দিয়েছেন। দেশের খাদ্য সমস্যা শিল্পীর ভাষায় পৃথিবীতে প্রচার করেছেন। নিজেও এই কাজে সুখ্যাতি অর্জন করে, বাংলাদেশকে শিল্পচর্চার অনেক উঁচু স্থানে নিয়ে গেছেন। এরপরও উত্তরাঞ্চলে শীত মৌসুমে ভয়াবহ মঙ্গা নামের দুর্ভিক্ষ বহু বছর ধরে চলে আসছিল। রংপুরের ছেলে চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন তাঁর সংবাদ কর্মে উত্তরের মৌসুমী মঙ্গা নিয়ে বহু বিখ্যাত রিপোর্ট করেছে। পথ থেকে পথে, কানসোনার মুখ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনের উল্লেখযোগ্য বই। তিস্তাপাড়ের বৃত্তান্ত (দেবেশ রায়) গ্রন্থে তিস্তাপাড়ের এক শ’ত বছরের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক দেবেশ রায় তিস্তাপাড়ের মানুষের আকাল, দুর্ভিক্ষ ও মঙ্গাসহ নানা অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেছেন। শতবছরের এই মঙ্গা নামের দুর্ভিক্ষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসন আমলে উত্তরাঞ্চল থেকে একেবারেই চীর জীবনের জন্য উধাও হয়ে গেছে। এই অঞ্চলে স্বল্প আয়ের মানুষ একসময় মোটা চালের ভাত খেয়ে তুষ্ট থাকত। এখন সেই চিত্র বদলে গেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তাই মানুষের খাদ্যাভাস পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ চিকন চালের ভাত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছে। এখন উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা বা আর্থিক অনটনে অভুক্ত মানুষ পাওয়া খুবই কষ্টকর। কেউ এক দু’দিন উপোস থেকেছে। এমন মানুষ চরে বা প্রত্যন্ত গ্রামে এখন পাওয়া যাবে না। লালমনিরহাট জেলা সদরের ভার্টিবাড়ির চালকল মালিক ও চাল উৎপাদনকারী মোঃ হিরু মিয়া জানান, বাজারে মোটা চালের চাহিদা হঠাৎ এই বছর কমে গেছে। চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীর গোডাউনে হাজার হাজার টন মোটা চাল অবিক্রীত অবস্থায় মজুদ পড়ে আছে। হঠাৎ করে মোটা চালের চাহিদা হ্রাস পাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে বাজারে মোটা চালের দামে নতুন স্বর্ণা জাতের ধানের চিকন চাল পাওয়া যাচ্ছে। এই স্বর্ণা জাতের চিকন চাল দামেও সস্তা, খেতেও মিষ্টি সুস্বাদু। উত্তরাঞ্চলের মানুষের হাতে এখন সারাবছর কাজ থাকে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের কাজে কৃষি কাজ এখন সহজলভ্য হয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। ঘটেছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। অর্থের সঙ্গে ভোগ জড়িত। অর্থনীতির সংজ্ঞায় তাই বলে আসছেন অর্থনীতিবিদগণ। মানুষ সব সময় একটু উন্নতমানের খাবার ও উন্নত জীবনযাপন করতে চায়। সেই উন্নত জীবনযাপনের প্রথম সূচক হচ্ছে খাদ্যাভাস পরিবর্তন ও কাজ পর্যাপ্ত থাকা। গ্রামে কাজ থাকাতেই বুঝা যায়, দেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হয়ত মধ্য আয়ের দেশ হওয়া খুব বেশি দূরে নয় । জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাফায়াত হোসেন জানান, রোপা আমন মৌসুমে লালমনিরহাট জেলায় রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ হাজার পাঁচ শ’ত তেষশট্টি হেক্টর জমি। উৎপাদন ধরা হয়েছিল দুই লাখ কুড়ি হাজার একশত কুড়ি মেঃ টন চাল। কিন্তু এই জেলায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে ৮১ হাজার এক শ’ত পাঁচ হেক্টর জমিতে। মৌসুম শেষ না হওয়ায় এখন চাল উৎপাদনের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়নি। তবে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষি বিভাগ আশা করছে। ধান কাটা মাড়াই শেষ হলে চাল উৎপাদনের পরিমাণ কৃষি বিভাগ নির্ণয় করবে। রোপা আমন মৌসুমের শেষে চাল উৎপাদনের তথ্য সংগ্রহ করা হবে বলে জানান। তবে এই জেলা হতে এবার সরকারীভাবে ৪ হাজার ৬শ’ ৮৭ মেঃ টন চাল ক্রয় করা হবে বলে জানা গেছে।
×