ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধৃষ্টতা

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

ধৃষ্টতা

১৯৭১ সালে দেশের মানুষ যখন স্বাধীনতার জন্য মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ছে তখন জামায়াতে ইসলামী এর বিরোধিতা করেছে। শুধু তাই নয়, তারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছে। সেই সময় তারা গঠন করেছিল আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী। তারা একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা, নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ নানা ধরনের অপরাধ চালিয়েছেÑ যা ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দালাল আইনে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দেশকে সরিয়ে ফেলতে দালাল আইন বাতিল করে জামায়াতে ইসলামীকে আবার রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়া হয়। শুরু হয় স্বাধীন দেশে ধর্মীয় রাজনীতির মৌলবাদী কার্যক্রম। এই কার্যক্রম চরম রূপ ধারন করে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানোর মাধ্যমে। যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী হয়ে এদেশে জঙ্গীবাদকে ব্যাপকভাবে প্রশ্রয় দেয়। কিন্তু তারা বেশিদূর এগোতে পারেনি। দেশের মানুষ আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ জোটকে ভোট দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে সোচ্চার হয়। জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে। গঠন করা হয় ট্রাইব্যুনাল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিকে দেশের সর্বমহল থেকে স্বাগত জানানো হয়। চলতি বছরেই কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারে মৃত্যুদ-ের রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল। সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদ-ের রায় হলে এই যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে আপীলের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য তার কাছে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা নেয়ার উদ্দেশ্যে আইনজীবীরা গেলে তিনি অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু কথা বলেনÑ যা স্বাধীন দেশ, দেশের প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে চরম অবমাননাকর। যুদ্ধাপরাধী নিজামী ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে ও সাক্ষ্য প্রদান করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক ও মিথ্যা বলে অভিযোগ করেছেন। যে যুদ্ধাপরাধীরা ’৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, হত্যা ও ধর্ষণ করেছে, ষড়যন্ত্র করেছে এবং বিজয়ের দু’দিন আগে দেশের মেধাবী সন্তানদের হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করতে নীলনক্সা করেছে, সেই অপরাধীদের বিচার যখন হচ্ছে তখন তারা প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এ ধরনের ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলার সাহস পায় কোথা থেকে তা তলিয়ে দেখতে হবে। তারা বিচারের সময় নিজেদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিচ্ছে। অথচ বিচারে যখন তাদের শাস্তির রায় হচ্ছে তখন তাদের দলটি হরতাল ডেকে সেই বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধাচরণ করছে। বিষয়টি উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার। ’৭১-এ যাঁরা তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, যেসব নারী চরম লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন তাঁরা অনেকে এখনও বেঁচে আছেন। তাঁদের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের এই ধরনের ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা কতটা অবমাননাকর ও বেদনাদায়ক তা শুধু তাঁরাই উপলব্ধি করতে পারেন। দেশের মানুষ চায় দ্রুত যুদ্ধাপরাধীদের রায় চূড়ান্ত বিচারের মাধ্যমে কার্যকর করা হোক। কেউ যেন নতুন করে কোন ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। ইসলাম শান্তির ধর্ম। অথচ জামায়াতে ইসলামী ইসলামের নামে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। তাদের এই কার্যক্রম প্রতিহত করে প্রয়োজনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বিচারের রায় কার্যকর হবে দেশের মানুষ এটিই চায়।
×