ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তদন্ত কমিটির মাঠ পর্যায়ের তদন্ত শেষ

কারিগরি, ব্যবস্থাপনা ও তদারকি গাফিলতিতে ব্ল্যাকআউট

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

কারিগরি, ব্যবস্থাপনা ও তদারকি গাফিলতিতে ব্ল্যাকআউট

রশিদ মামুন ॥ কারিগরি, ব্যবস্থাপনাগত এবং তদারকির গাফিলতির জন্য গত ১ নবেম্বর সারাদেশে ব্ল্যাকআউটের ঘটনা ঘটেছে। দেশজুড়ে বিদ্যুত বিপর্যয়ের ঘটনায় তদন্ত কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন মতামত দিতে যাচ্ছে। গত ১ নবেম্বরের পর ৭ নবেম্বর এবং ১১ নবেম্বর মাঝরাতে একই ধরনের ঘটনা ঘটলেও তা সামাল দিতে পেরেছে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার। এই বিপর্যয়ের ঘটনা কেউ জানতেও পারেনি। কিন্তু ওই দিন কেন সামাল দেয়া সম্ভব হয়নি তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে তদন্ত কমিটি বলছে কারিগরি, ব্যবস্থাপনাগত এবং তদারকি; তিন জায়গায়ই ত্রুটি রয়েছে। মাঠ পর্যায়ের তদন্ত শেষ করে বুধবার বৈঠক করেছে তদন্ত কমিটি। বর্ধিত সময় অনুযায়ী আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার সময় শেষ হচ্ছে। তদন্ত কমিটি সূত্র বলছে, ভারত-বাংলাদেশ হাইভোল্টেজ সাবস্টেশনে এখন পর্যন্ত ১০ বার বিদ্যুত বন্ধ (ট্রিপ) হয়ে গেছে। কিন্তু একবারও সারাদেশে সেই বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েনি। কারণ সেখানে যথেষ্ট প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। আর বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থায় হঠাৎ লো-ভোল্টেজ বা অন্য কোন কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটা অত্যন্ত স্বাভাবিক, তবে তা সামাল দেয়ার জন্যও যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সেদিন এই সিস্টেমগুলোর কোনটিই কাজ করেনি বলে তদন্ত কমিটি মনে করছে। তদন্তে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসে ৪০ বছরের পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে। এছাড়া দেশের গ্রিড এবং সাবস্টেশনের অনেকটাই মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরাতন। এসব বিদ্যুত কেন্দ্রের তথ্যও দ্রুত পাওয়া যায় না। আবার ব্ল্যাকআউটের পর দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর নিজস্ব ব্যবস্থাপনা দুর্বল বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে দ্রুত কিভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা যায় সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ থাকছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ধরনের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার কোন সুযোগ নেই। আমাদের নিজেদের জন্যই জানা দরকার, কেন এই ঘটনা ঘটেছে। বিষয়গুলো সুনির্দিষ্টভাবে বের করা সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ সম্ভব হবে না। তিনি জানান, ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ের সকল তদন্ত শেষ করা হয়েছে। বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো থেকেও সকল তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটি সকল তথ্য বিশ্লেষণ এবং দায়িত্বপালনকারীদের সকলের সাক্ষেরভিত্তিতে তিনটি ত্রুটির কথা বলছে। নির্দিষ্ট করে জানতে চাইলে তিনি বলেনÑব্যবস্থাপনার ত্রুটি তিন ধরনের রয়েছেÑপ্রথমত কারিগরি সীবাবদ্ধতার কারণে ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হতে পারে, দ্বিতীয়ত দেখা যাচ্ছে যাদের বা যে ক’জনের দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল তারা ছিল কি ছিল না, এছাড়া সে চেষ্টা করলেও অন্যরা তার কথা শুনেছে কিনা। এখানে তিন ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধতা পাওয়া গেছে। জানা গেছে তদন্ত কমিটিকে বলা হয়েছে, এনএলডিসি ওই দিন লো-ভোল্টেজ বা ফ্রিকোয়েন্সি সমস্যার কারণে সঙ্গে সঙ্গে ৬০০ মেগাওয়াটের সাবস্টেশন বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্ত কমিটি মনে করছে এই ৬০০ মেগাওয়াট সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা নয়। তাহলে আদৌ এটা করা হয়েছিল কিন, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তদন্ত কমিটির অপর এক সদস্য বলেন, আমরা যখন ন্যাশনাল লোডডেসপাস সেন্টারে গিয়ে জানতে চেয়েছি কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঠিকমতো উপস্থিত ছিলেন কিনাÑতারা বলছেন, সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে এটা হওয়ার কথা নয় জানিয়ে বলেন, ১১ তারিখ দিবাগত মাঝরাতেই এ ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটতে পারত। কিন্তু তারা সেটা সামাল দিতে পেরেছেন। তাহলে বোঝাই যায়, সেই দিন গাফিলতি ছিল। তিনি বলেন, হয়ত সেই দিন যেখানে পাঁচজনের দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল সেখানে হয়ত দুইজন অনুপস্থিত ছিলেন। আবার এনএলডিসি বন্ধ করতে বলার পরও অনেকক্ষেত্রে বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা সাবস্টেশনে তা বন্ধ করেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হয়েছে। এজন্য এনএলডিসিকে আরও দক্ষভাবে কাজ করতে হবে বলে তিনি মনে করেন। এজন্য কর্মকর্তা- কর্মচারীদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা নিয়ে তদন্ত কমিটি সুপারিশ করতে যাচ্ছে। যদিও তদন্ত কমিটি কারও দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট কাউকে দায়ী করছে কিনা তা এখনই বলতে রাজি হননি ওই কর্মকর্তা।
×