ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জিরো জিরো জিরো ফল্স ফল্স ফল্স

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

জিরো জিরো জিরো ফল্স ফল্স ফল্স

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত মঙ্গলবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনা বানান করে বলেছিলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানি করে ‘জেডইআরও- জিরো’ শুল্কে। বুধবার তার এ বক্তব্যের জবাব দিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ‘এফএএলএসই- ফলস’। তিনি যেমন বানান করে জিরো বলেছেন, আমিও তেমন বানান করেই বললাম। এ সময় তিনি তিনবার ‘ফলস’ শব্দ উচ্চারণ করেন। বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রফতানিতে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ শুল্ক দেয়। ডব্লিউটিওর সিদ্ধান্ত মোতাবেক অনেক উন্নত দেশ বাংলাদেশকে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি প্রবেশাধিকার দিলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তা দিচ্ছে না, অথচ আফ্রিকান দেশগুলোকে দিচ্ছে। এ সময় তিনি বলেন, রোজ কেয়ামতের আগে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত পূরণ শেষ হবে না। আইএসও সনদ প্রাপ্তি এবং মেডিয়েশন সেন্টার স্থাপন সংক্রান্ত অবহিতকরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনডেনটিং এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সভাপতি কেএমএইচ শহিদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইর সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইন্সিওরেন্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবীর হোসেন, ডিসিসিআইর সভাপতি মোঃ শাহজাহান খান প্রমুখ। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় শুল্ক প্রদান করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করে। এর জন্য বাংলাদেশ ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ডিউটি দিয়ে থাকে। গত ৫ বছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ৩ দশমিক ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ডিউটি দিয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিবছর ৮২৪ মিলিয়ন ডলার শুল্ক দেয় বলে জানিয়েছেন তোফায়েল আহমেদ। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ড্যান মজেনা বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুল্ক নেয়া হয় না। বাংলাদেশ আমেরিকাকে জিরো জিরো জিরো শুল্ক দেয়। বরং তাদের ক্রেতাদের কাছ থেকে এ শুল্ক আদায় করা হয়। এর জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ফলস, ফলস, ফলস। মজেনার ঢালাওভাবে সুবিধা দেয়ার কথা মিথ্যা হিসেবে উল্লেখ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে আফ্রিকার দেশগুলোর কোন ডিউটি দেয়া লাগে না। যার কারণে তারা বেশি দরে পণ্য বিক্রি করতে পারে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই সুবিধা না থাকার কারণে ওই বাজারে কম দরে পণ্য বিক্রি করতে হয়। বাংলাদেশের পণ্যে আমেরিকার ক্রেতারা শুল্ক যোগ করে পণ্যের দাম দেয়। যে কারণে ক্রেতারা শুল্ক দেয় বলে মনে করে আমেরিকা। কিন্তু ক্রেতারা শুল্ক দেয়ার কারণে পণ্যের দর কম নেয়া হয়। যদি সরাসরি বাংলাদেশকে শুল্ক দিতে হতো তাহলে ওই শুল্কসহ পণ্য কিনতে হতো আমেরিকার ক্রেতাদের। মন্ত্রী বলেন, যারা এত দিন বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে অভিহিত করত তারা এখন বাংলাদেশকে মিরাকেল বলে। তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। সরকারের প্রচেষ্টায় অর্থনীতি সামনে এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, দেশের পোশাক শিল্প নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যিক সুবিধা (জিএসপি) সুবিধা স্থগিত করে দেয়। এটি পুনরুদ্ধারে বেঁধে দেয়া হয় ১৬টি শর্ত। আমরা ১৬টি শর্তই পূরণ করে তাদের চিঠি দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ফিরে পাওয়ার সব শর্ত ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়েছে। কিছু বিষয় দীর্ঘমেয়াদী, সেক্ষেত্রে সঠিকভাবে কাজ চলছে। ইউএসটিআর বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ ও কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এখন তারা আরও শর্ত দেয়ার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুল্ক তো নেয়ই বরং আমেরিকা জিএসপি স্থগিত করে রেখেছে। এভাবে রোজ কেয়ামত পর্যন্ত শর্ত পূরণ করলেও যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত শেষ হবে না। বাংলাদেশ শিল্প কারখানায় সফলতার সঙ্গে শিশুশ্রম বন্ধ করেছে। এমন একদিন আসবে বাংলাদেশের জন্য কোন বিশেষ সুবিধা প্রয়োজন হবে না। নিজ যোগ্যতা বলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এদিকে বিআইএএকে সেবা রফতানি খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। আইএসও সনদ প্রাপ্তি অনুষ্ঠানে বিআইএএর সভাপতি কেএমএইচ শহিদুল হক বলেন, দেশের অর্থনীতিতে সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশ্বের সেবার মানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করার কারণে অস্ট্রেলিয়ার সাই গ্লোবাল ৩০ মে বিআইএএ-কে আইএসও সনদ প্রদান করে। এটি এখন দেশের একমাত্র আইএসও সার্টিফাইড এ্যাসোসিয়েশন।
×