ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সেমিনারে মজেনা

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ১২ নভেম্বর ২০১৪

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজেনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান। দুই দেশের মধ্যে অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক ক্রমাগত বাড়ছে। এছাড়া রফতানিতে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি বৃহত্তম বাজার। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক এই অর্থনৈতিক সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র আরও সমৃদ্ধ দেখতে চায়। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের বন্ধন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ সব কথা বলেন। অর্থনৈতিক রিপোর্টার্স ফোরাম এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাদল ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান। সেমিনারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজেনা বলেন, এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ একটি উদীয়মান বাঘ। এখানকার পরিশ্রমী জনগণ তার জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধশীল হয়ে উঠছে। আইনের শাসনকে উন্নতকরণের মাধ্যমে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কমিয়ে আনতে পারলে এই উদীয়মান বাঘ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের কাক্সিক্ষত স্থান অর্জন করতে পারবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, একুশ শতকে বাংলাদেশই জেগে উঠবে। তবে এই জেগে ওঠার জন্য বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক করিডর ব্যবহার করতে হবে। এ করিডরের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে পারবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কৃষি খাতের অগ্রগতি তুলে ধরে ড্যান মজেনা বলেন, বাংলাদেশ কৃষি খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এশিয়ার পরবর্তী বাঘ হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতেও ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে।সারাবিশ্বে বাংলাদেশের জনশক্তির চাহিদার কথা উল্লেখ করে ড্যান মজেনা বলেন, বাংলাদেশের লাখ লাখ যুবক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এ সব শ্রমিক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। তবে শুধু শ্রমিক হিসেবে নয়, এ দেশ থেকে চিকিৎসক, সেবিকা, প্রকৌশলী, অধ্যাপক, দক্ষ কার্পেন্টার, ইলেকট্রিশিয়ান ও বিভিন্ন পেশার লোককে পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, সম্প্রতি আমি বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছি। এই ভ্রমণের মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি বাংলাদেশ কতটা সমৃদ্ধশীল। এ দেশের উর্বর মাটি, প্রচুর পরিমাণ পানি, চমৎকার জলবায়ু, বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ, উন্নতমানের কয়লার মতো মূল্যবান সম্পদ রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এ দেশের মানুষ কঠোর পরিশ্রমী, সৃষ্টিশীল এবং উদ্যোগী। উপস্থিত সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী ও ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে আমেরিকা অন্যতম এবং রেমিটেন্স ক্ষেত্রে তৃতীয় ও দ্বিতীয় বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী অংশীদার। মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, পোশাকশিল্প ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, সফটওয়্যার, চিংড়ি মাছ, ফুল, রেশম ইত্যাদি পণ্যেরও অনেক চাহিদা ব্যাপক। তাই এ সব পণ্যও ব্যাপকহারে রফতানির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। জিএসপি পুনরায় ফিরে পাওয়া বিষয়ে ড্যান মজেনা বলেন, বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া নির্ভর করছে কারখানার কর্মপরিবেশ, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, ত্রুটিপূর্ণ পোশাক কারখানাগুলো সংস্কার করার ওপর। এ সব শর্ত পূরণ হলেই বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা ফিরে পাবে। এক প্রশ্নের উত্তরে ড্যান মজেনা বলেন, শুধু জিএসপির জন্য পোশাক খাতের কর্মপরিবেশের উন্নতি চায় না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আমরা চাই এ দেশের পোশাকশিল্পে যেন আর কোন দুর্ঘটনা না ঘটে, আর কোন রানা প্লাজার মতো ঘটনা যেন না ঘটে, এ জন্য বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় শর্ত পূর্ণ করতে হবে। তিনি বলেন, জিএসপি ফিরে পাওয়ার শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের অধিকার ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই আরও কাজ করতে হবে। ঢাকায় এসেছেন চার্লস রিভকিন ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও ব্যবসা বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী চার্লস এইচ রিভকিন বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। মঙ্গলবার তিন দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন রিভকিন। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তিন দিনের সফরে চার্লস এইচ রিভকিন সরকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়িক সম্প্রদায়, তৈরি পোশাক শিল্প খাতের নেতৃবৃন্দ ও কর্মী এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। তিনি ঢাকায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন। রিভকিন চলতি বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও ব্যবসা বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি চার বছর ফ্রান্স ও মোনাকোতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ও বৃহত্তম কূটনৈতিক মিশনের নেতৃত্ব দেন। রিভকিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে অর্থনৈতিক ও ব্যবসা বিষয়ক দফতরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির নির্দেশিত ‘অর্থনীতির জন্যই পররাষ্ট্রনীতি’ বাস্তবায়ন করতে নিয়োগ দেয়া হয়। রাষ্ট্রদূত রিভকিন স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন ১৯৮৪ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে সম্মান নিয়ে ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে। তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেন ১৯৮৮ সালে। ২০১৩ সালে রাষ্ট্রদূত রিভকিন ‘লেজিওন দ্য অনার’ পুরস্কারে ভূষিত হন।
×