ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জমে উঠেছে কাঁচাবাজার

শীতের আগে শীতের সবজি, টাটকা খাওয়ার ধুম

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ১২ নভেম্বর ২০১৪

শীতের আগে শীতের সবজি, টাটকা খাওয়ার ধুম

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ সেই কোন দূর গ্রামের আলু শীম বরবটি। লাউ বেগুন টমোটো। ফুলকপি বাঁধাকপি। চলে আসছে রাজধানী শহর ঢাকায়। দীর্ঘ ভ্রমণ। তাতে কী, যার পর নাই টাটকা। দেখে মনে হয়, বাজারের পেছনেই সবজির বাগান। সেখান থেকে ঝুড়ি ভর্তি করে নিয়ে এসেছেন বিক্রেতা! আসলে শীতের সবজির এটি-ই বৈশিষ্ট্য। না, শীত শুরু হয়নি। তবে বাজার ভরে ওঠছে শীতের সবজিতে। আগাম সবজির এখন রমরমা বাজার। বড় বড় বাজার থেকে শুরু করে ঢাকার অলিগলি ফুটপাতে শীতের সবজি বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশ চড়া। তাতে কী, ব্যাগ ভর্তি করে তবেই বাসায় ফিরছেন গৃহকর্তা। মহিলারাও বেছে বেছে কিনছেন। এরই মাঝে জমে ওঠেছে কাওরান বাজারের বেচা-কেনা। উপচেপড়া ভিড় শ্যামবাজারে। দুটিই পাইকারি বাজার থেকে সবজি যাচ্ছে ঢাকার প্রতিটি কাঁচাবাজারে। পাড়া-মহল্লার ফুটপাত শীতের সবজিতে ঠাসা। মতিঝিলের মতো বাণিজ্যিক এলাকার ফুটপাতে বসেছে বিশাল বাজার। সব দেখে বোঝা হয়ে যায়, টাটকা সবজি খাওয়ার দিন শুরু হয়ে গেছে। প্রতিবারের মতোই সারাদেশ থেকে সবজি এসে জমা হচ্ছে কাওরান বাজারে। মধ্যরাতের কিছু আগে থেকে ট্রাক আসা শুরু। চলে ভোর রাত পর্যন্ত। ট্রাক থেকে সবজি ঢুকে যায় আড়তে। এখান থেকে পাইকারি বিক্রি। পাশের দোকানিরা খুচরা বিক্রি করেন। পুরো এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মোটামুটি সব ধরনের সবজি বাগান থেকে বাজারে এসে ওঠেছে। আলু, শীম, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা, কুমড়া, লাউ, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করলা থেকে শুরু করে লেটুস পাতা পর্যন্ত হাজির। পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি পাল্লা শীম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। পাল্লা মানে, ৫ কেজি। ফুলকপির কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। প্রতিটি বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৭ টাকায়। খুব চোখে পড়ছে বরবটি। বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা পাল্লা। ৪০ টাকা কেজি। শীতের খুব প্রিয় সবজি লাউ। অনেকের বেলায় এটি না হলেই নয়। হ্যাঁ, সেই লাউ এসেছে। হরেক আকারের লাউ। ভালটির দাম ২০ থেকে ২২ টাকার মধ্যে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা কেজি। ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ২৮ থেকে ৩০ টাকা করে। চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকা। ২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে করলা। এক সপ্তাহ আগে এসেছে দেশী পেঁয়াজ। লম্বা সরু পাতাসুদ্ধ পেঁয়াজ ২৫ থেকে ২৭ টাকা কেজি। এখন আলুর দাম অনেক বেশি। লালমনিরহাট থেকে আসা প্রতি কেজি আলুর দাম ১০০ টাকা। দেশী টমেটো এখনও কাঁচা। সবে আসতে শুরু করেছে। কেজি ৪০ থেকে ৪২ টাকা। পাইকারি বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন অবস্থায় সবজির খুব চাহিদা। তাই আমরা যতদ্রুত সম্ভব সংগ্রহ করার চেষ্টা করি। অধিকাংশ শীতের সবজি এরই মাঝে চলে এসেছে। সবজি আসা যতো বাড়বে দাম ততো কমবে বলে জানান তিনি। তিনি বলছিলেন তাঁর পাইকারি বিক্রির কথা। খুচরা বাজারে এসে এ সব দাম ব্যাপক ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। আড়তের ঠিক পাশেই আছে খুচরা দোকান। এসব দোকানি প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দাম হাঁকছে। হারিস নামের এক বিক্রেতা এর কারণও ব্যাখ্যা করলেন। বললেন, যে জায়গায় বসে বিক্রি করেন সেটির প্রতিদিনের ভাড়া নাকি ৩০০ টাকা। এ কারণে দাম বেশি। আর শহরের অন্যান্য কাঁচাবাজারগুলোর কথা তো বলাই বাহুল্য। অধিকাংশ বিক্রেতা যার কাছে যেমন রাখা যায় নীতিতে সবজি বিক্রি করেন। আগেই বলা হয়েছে, দামের জন্য খুব কিছু আটকে নেই। টাটকা খাওয়ার সময়টা সবাই কাজে লাগাচ্ছেন। পছন্দ মতো কিনছেন শীতের সবজি। আকরাম হোসেন নামের একজনের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা হলো। তিনি জানালেন, একবারে বেশি সবজি কিনতে যান না তিনি। প্রতিদিন কিনেন। টাটকা খেতেই এমন পরিকল্পনা। তিনি বলেন, ফ্রিজে পুরে রাখা সবজি তো সারাবছরই খাই। শীতের সবজির বেলায় এটি করা বোকামী। তবে উল্টো ছবিও দেখা গেল, ইন্দিরা রোডের আয়েশা বানু তাঁর গাড়ি শীতের সবজি দিয়ে মোটামুটি ভরে ফেলেছিলেন। কথা বলে জানা গেল, তিনি সরকারী চাকুরে। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে সবজি কিনে নিয়েছেন। ড্রাইভার সেগুলো বাসায় নিয়ে যাবে। এতো কেনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আড়ত থেকে কিনেছি। পাইকারি কিনলে তো ৫ কেজির নিচে কিছু কেনা যায় না। তবে সুবিধাও আছে। পাইকারিতে দাম অনেক কম হয়। সে সুবিধাটাই গ্রহণ করলাম। এক্ষেত্রে ফ্রিজে রেখে খাওয়ায় আপত্তি নেই বলে জানান তিনি। বলা বাহুল্য, শীতের এই সবজি উৎসব সবে শুরু। অনেক দিন চলবে। তবে আগে ভাগে উৎসবে যোগ দেয়া চাই। এবং তা নিজেরই স্বার্থে।
×