ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১০ নভেম্বর ২০১৪

নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এশিয়ার প্রতি আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতি পুনরায় তুলে ধরার নতুন চেষ্টা চালাতে রবিবার বেজিং পৌঁছার কথা। কিন্তু যখন তিনি সেখানে পৌঁছবেন, তখন তিনি সেই ব্যক্তিকে দেখতে পাবেন, যিনি সম্প্রতি তাকে ব্যর্থ প্রতিপন্ন করতে অনেক কিছু করেছেন। আর সেই ব্যক্তিই হলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির ভি পুতিন। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, আপনারা এশিয়াতে অবস্থান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন, কিন্তু আমরা ইতোমধ্যে সেখানে অবস্থান করছি। ওবামা এমন সময়ে আবার এশিয়া সফরে গেলেন, যখন রাশিয়া চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে চাচ্ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রতি এক বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। পুতিনেরও চলতি সপ্তাহে বেজিং যাওয়ার কথা। তিনি ইউক্রেন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চীনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন চাচ্ছেন। তিনি আমেরিকার ঔদ্ধত্য প্রতিহত করার লক্ষ্যে চীনের সঙ্গে এক কোয়ালিশন গড়ে তুলে আন্তর্জাতিক ভারসাম্য পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করছেন। চীন ও রাশিয়া উভয়েই আমেরিকা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্পর্ধা দেখাচ্ছে বলে মনে করে। পুতিনের প্রয়াস লোক দেখানো না বাস্তবভিত্তিক তা নিয়ে ওয়াশিংটনে জোর বিতর্ক চলছে। সেখানে কোন কোন সরকারী কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ রাশিয়া ও চীনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য থাকার কারণে দু’টি দেশের মধ্যে আরও অর্থবহ মৈত্রী গড়ে ওঠার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। কিন্তু অন্যরা বলেন, ওবামা প্রশাসনের উচিত ওই হুমকিকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা, কারণ মস্কো বেজিংয়ের সঙ্গে জ্বালানি, অর্থসংস্থান ও সামরিক বিষয়ে চুক্তি করতে যাচ্ছে। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত সার্গেই আই কিসলিয়াক বলেন, এশিয়াতে আমাদের সংলগ্ন ভূখ-ের বিষয়ে আমরা আরও উৎসাহী হয়েছি। সেখানে আমাদের ভাল ভাল অংশীদার রয়েছে। মস্কো ও বেজিংয়ের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত প্রাকৃতিক গ্যাস বিষয়ক এক চুক্তি ভবিষ্যতের জন্য এক পরীক্ষাই হবে। এটি শুরু মাত্র এবং আপনারা আমাদের ও চীনের মধ্যে আরও প্রকল্প নিয়ে চুক্তি হতে দেখবেন। মার্কিন প্রশাসনের ভেতর চীনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছতে পুতিনের প্রয়াসকে ওয়াশিংটনের প্রতি আঘাত হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু দুটি দেশের সম্পর্কের জটিল ইতিহাস, তাদের পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অর্থনৈতিক বৈষম্য এরূপ প্রয়াসকে শেষ পর্যন্ত অযৌক্তিক প্রতিপন্ন করবে বলেও মনে করা হয়। এক সরকারী কর্মকর্তা বলেন, তারা একে অপরকে কাজে লাগাবে। কিন্তু অন্যরা সেই সম্ভাবনাকে খাটো করে দেখানোর বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। প্রিন্সটনের গবেষক জিলবার্ট রজম্যান বলেন, চীনা রুশ সম্পর্ক ক্রমশ শক্তিশালী হওয়ার অনেক প্রমাণ রয়েছে। এ সমঝোতা ইউক্রেন সঙ্কট শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয়। রুশরা চীনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার পদের দায়িত্ব গ্রহণের পর তার প্রথম বিদেশ সফরের লক্ষ্যস্থল হিসেবে রাশিয়াকেই বেছে নেন। তিনি রাশিয়ার সোচি শহরে আয়োজিত অলিম্পিকস অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কিন্তু ওবামা ও ইউরোপীয় নেতারা সেই অনুষ্ঠান বয়কট করেন। চীন ও রাশিয়া প্রত্যেকেই স্বদেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করে। উভয়েই মনে করে যে, যুক্তরাষ্ট্র এক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং এর অব্যবস্থাপনার কারণেই বিশ্ব অর্থনীতিতে ২০০৮ সালে আর্থিক সঙ্কট দেখা দেয়। ইউক্রেন ও হংকংয়ে একযোগে সৃষ্ট সঙ্কট চীনা-রুশ মিলনে উৎসাহ যুগিয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ চীনকে দুর্বল করতে মার্কিন প্রণোদিত প্রয়াস বলে চিত্রিত করা হয়, ঠিক যেমন এটি কিয়েভের প্রতিবাদ বিক্ষোভকে এক রুশ মিত্রকে মস্কোর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে আমেরিকার প্রয়াস হিসেবে দেখায়। চীনা প্রচার মাধ্যমে পুতিনকে বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে-দাঁড়ানো এক শক্তিশালী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। মে মাসে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ইউক্রেন প্রশ্নে মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছিল, তখন পুতিন চীনকে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের জন্য ৪০ হাজার কোটি ডলারের ৩০ বছর মেয়াদী এক চুক্তি সই করেন। গত মাসে মস্কোতে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কোকিয়াং মুদ্রা বিনিময় ও কর বিষয়ক এক চুক্তিসহ ৩৮টি চুক্তি সই করেন। গত সপ্তাহে পুতিন বলেন যে, দুটি দেশ আরও একটি বড় ধরনের গ্যাস চুক্তির বিষয়ে এক মতৈক্যে পৌঁছেছে। মস্কোর ইনস্টিটিউট ফর ইউএস এ্যান্ড কানাডা স্টাডিজের ডিরেক্টর সার্গেই রেগভ বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা ও রাজনৈতিক চাপ রাশিয়াকে পাশ্চাত্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে চীনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাশিয়ায় চীনকে পশ্চিমা ঋণ ও পশ্চিমা প্রযুক্তির বিকল্প উৎস হিসেবে দেখা হয়। Ñইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস।
×