ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর নয়া কৌশল

উত্তরে সরকারবিরোধী প্রচারণায় নেমেছে নারী মৌলবাদীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১০ নভেম্বর ২০১৪

উত্তরে সরকারবিরোধী প্রচারণায় নেমেছে নারী মৌলবাদীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ৯ নবেম্বর ॥ লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলের প্রত্যন্ত চর এলাকার গ্রামগুলোতে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে জনমত তৈরি, বিচার কাজে বাধাদান ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে প্রচারণায় নেমেছে একদল নারী। প্রশিক্ষিত এসব নারী ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের হয়ে এসব করছে। ’৭১-এর মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে পরিচিতদের বুজুর্গ, আলেম, ধর্মীয় নেতা ও ভাল মানুষ হিসেবে অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা। আর এ অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হওয়া কুখ্যাত রাজাকার, আলবদর ও ’৭১-এর চিহ্নিত ঘাতক কাদের মোল্লাকে শহীদ বলে প্রচার চালাচ্ছে। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে কটূক্তি করছে। চরাঞ্চলের পান দোকান, খাবার হোটেলসহ আনাচে- কানাচে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে হাজার হাজার পোস্টার লাগিয়েছে বোরকা পরিহিত এসব মহিলা। বাড়ি বাড়ি লিফলেটও বিলি করছে তারা। এ অপপ্রচার থেকে বাদ যাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও। এর অংশ হিসেবে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই দুই নেত্রীর আটক হওয়ার বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ওই সময় জামায়াতে ইসলামীর কোন নেতা জেলে যায়নি। জামায়াত নেতাদের সৎ হিসেবে তুলে ধরে বলা হচ্ছে আলেম, ধর্মীয় আন্দোলন রক্ষায় শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না। তাই চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে বন্ধ করতে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। আর এ জন্য গ্রামীণ নারীদের জেহাদে অংশ নেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছেন জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান। উচ্চ আদালতে সাজা হয়েছে দলটির শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামীর। ’৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে তারা হাজার হাজার নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে। হত্যা করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের, নির্যাতন করেছে মা-বোনদের। সেই কুখ্যাত নরঘাতকদের বাঁচাতে এবার গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ও চরাঞ্চলের সহজ সরল নারীদের ফুসলিয়ে দলে ভেড়ানোর জন্য একদল নারীকে সুসংগঠিত করে মাঠে নামিয়েছে জামায়াত। উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী দিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীর বুক চিরে বিশাল বিশাল চর জেগেছে। এসব চরে হাজার হাজার মানুষের বাস। তবে ভৌগোলিক কারণে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এসব চর এলাকায় প্রশাসনের তেমন নজরদারি নেই। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের দলে সমর্থন টানতে একদল মহিলাকে মাঠে নামিয়েছে জামায়াত। চরের মানুষের দরিদ্রতা ও সরলতাকে পুঁজি করে দলে ভেড়ানোর অপকৌশল নিয়েছে দলটি। স্রেফ রাজনৈতিক প্রয়োজনে উত্তরাঞ্চলে দাঙ্গা, ফ্যাসাদ, সন্ত্রাস ও অরাজকতা সৃষ্টি করতে চরের মানুষকে ডান হাত হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে জামায়াত। আবার কোন কোন চরে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে প্রচার চালাতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছে জামায়াতের এসব নারী সদস্য। তবে লালমনিরহাটের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় রেড ক্রিসেন্টের সাবেক সভাপতি আলহাজ আবুল হোসেন জানান, মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের মানুষের শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এবার দেশের মানুষকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশের খাতায় নাম লেখাতে কাজ করতে হবে। চরাঞ্চলে ও গ্রামের সহজ সরল মানুষকে জামায়াতীরা, মানবতাবিরোধীরা, রাজাকাররা, উগ্র মৌলবাদী চক্ররা যাতে দেশে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করতে না পারে সেদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবাইকে অতন্ত্র প্রহরীর মতো কাজ করতে হবে।
×