ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও আমাদের সংবিধান

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৯ নভেম্বর ২০১৪

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও আমাদের সংবিধান

(৮ নবেম্বরের পর) বাংলাদেশের কর্ম বিভাগে একটি নিরপেক্ষ সরকারী কর্মকমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণ করা হবে। উপরোক্ত তিনটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিজ নিজ ক্ষেত্রে তদারকির ভূমিকা ছাড়াও সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান রয়েছে। অনেক বছর হলো আইন পাস হয়েছে; কিন্তু ন্যায়পাল আজও পর্যন্ত নিয়োগ হয়নি। দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে নবম (ক) বিভাগে জরুরী অবস্থার বিধান সংযোজিত হয়েছে। ১০ম ভাগ অনুযায়ী সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সংবিধান সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। একাদশ ভাগে প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তি তার ওপর নির্বাহী কর্তৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা, চুক্তি ও দলিল, আন্তর্জাতিক চুক্তি বিষয়ে ও বাংলাদেশের পক্ষে বা বিপক্ষে মামলা, সাংবিধানিক পদধারীদের পারিশ্রমিক, পদের শপথ, প্রচলিত আইনের হেফাজত, ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী, রহিতকরণ ও সংবিধানে ব্যবহৃত কিছু কিছু শব্দ ও বর্ণের প্রাসঙ্গিক (পধঃবমড়ৎু) সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। আমাদের সংবিধান মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগ প্রজাতন্ত্রের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রতিশ্রুতি ও বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ জনগণের অধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, নাগরিকের মৌলিক অধিকার। দ্বিতীয় ভাগে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও সংসদকে কি ভূমিকা রাখবে তার বর্ণনা রয়েছে। স্থানীয় সরকারের কাঠামোতে সর্বস্তরে প্রশাসন জনগণের প্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধায়ন বলবৎ থাকবে। এবং এগুলো বাস্তবায়ন ও ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির মূল নক্সা রচনা করা হয়েছে সংবিধানে। এই উদ্দেশ্য সাধনে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ও দিক নির্দেশনাও বিদ্যমান। এক সর্বব্যাপী রক্তক্ষয়ী ঐতিহাসিক সংগ্রামের পটভূমিতে সংবিধান ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সৃষ্টি। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুযায়ী ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ তারিখ থেকে এটা কার্যকর এবং এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উক্তরূপ স্বাধীনতার ঘোষণা দৃঢ়ভাবে অনুমোদন ও সমর্থন করা হয়েছে। এই ঘোষণাপত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর অস্থায়ী সংবিধানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের স্বীকৃতি রয়েছে। একইভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সমর্থন ও স্বীকৃতি মেলে সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রথম বাক্যে সংবিধানের ১৫০ (৩) অনুচ্ছেদে। যেখানে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এতদ্বারা অনুমোদিত ও সমর্থিত হইল এবং তাহা আইন অনুযায়ী যথার্থভাবে প্রণীত, প্রযুক্ত ও কৃত হইয়াছে বলিয়া ঘোষিত হইল।’ সেই কারণে ৮ম সংশোধনী মামলার রায়ে বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে বলেছেন, ‘এবহবংরং ড়ভ ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ’ এবং এ কারণে আমাদের ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ ঁহয়ঁরব এবং ঐ রায়ে বলা আরও বলা হয়েছে, ‘ইধহমষধফবংয ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ রং ধহ ধঁঃড়পযঃযড়হড়ঁং ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ.’ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ও সংবিধানের মূল দলিলে এবং এর প্রস্তাবনায় যে মৌলিক মূল্যবোধের কথা বলা হয়েছে তা আমাদের রাষ্ট্রের ভিত্তি। সংবিধানের ভিত্তি কিন্তু দু’বার সামরিক ডিক্রির মাধ্যমে পরিবর্তন করা হয়েছে। এই সম্পর্কে অষ্টম সংশোধনী মামলার রায়ে এ বিষয়ে আমার যুক্তি ও বক্তব্য সমর্থনমূলক ভাষায় প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ তার ৮ঃয অসবহফসবহঃ ঈধংব ঔঁফমবসবহঃ, চধৎধ ৩২৪-এ উল্লেখ করেছেন : ‘গৎ. গ. অসরৎ-টষ ওংষধস যধং ৎবভবৎৎবফ ঃড় ঃযব চৎড়পষধসধঃরড়হ ড়ভ ওহফবঢ়বহফবহপব ফধঃবফ ১০ঃয অঢ়ৎরষ ১৯৭১ সধফব যিবহ ঃযব ডধৎ ড়ভ ওহফবঢ়বহফবহপব নবমধহ. ঞযরং ফড়পঁসবহঃ ধহফ ঃযব ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ রহপষঁফরহম রঃং চৎবধসনষব ংযড়ি ঃযব ঢ়ৎরহপরঢ়ষবং ধহফ রফবধষং ভড়ৎ যিরপয ড়ঁৎ হধঃরড়হধষ সধৎঃুৎং ংধপৎরভরবফ ঃযবরৎ ষরাবং ধহফ ড়ঁৎ নৎধাব ঢ়বড়ঢ়ষব ফবফরপধঃবফ ঃযবসংবষাবং ঃড় ঃযব ংধরফ ধিৎ. ঊংংবহঃরধষ ভবধঃঁৎবং ড়ভ ঃযবংব ফড়পঁসবহঃং ধৎব চবড়ঢ়ষব’ং ঝড়াবৎবরমহঃু, ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ’ং ংঁঢ়ৎবসধপু, ওহফবঢ়বহফবহঃ ঔঁফরপরধৎু, উবসড়পৎধঃরপ চড়ষরপু নধংবফ ড়হ ভৎবব বষবপঃরড়হ ধহফ লঁংঃরপব. ঐব যধং বসঢ়যধংরুবফ ঃযব ভধপঃ ঃযধঃ ঃযবংব ভঁহফধসবহঃধষ ঢ়ৎরহপরঢ়ষবং বিৎব হড়ঃ ভড়ষষড়বিফ, ধহফ ঃযব নধংরপ ৎরমযঃং বিৎব ফবহরবফ ঃড় ঁং, ফঁৎরহম ঃযব চধশরংঃধহ ৎবমরসব ধহফ ঃযধঃ রং যিু ঃযব ধিৎ ড়ভ ওহফবঢ়বহফবহপব ধিং ভড়ঁমযঃ ধহফ ড়িহ ধহফ পড়হংবয়ঁবহঃষু ঃযবংব ৎরমযঃং ধহফ ঢ়ৎরহপরঢ়ষবং যধাব নববহ বহংযৎরহবফ রহ ঃযব ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ ধং ঃযব ংড়ষবসহ বীঢ়ৎবংংরড়হ ড়ভ ঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব’ং রিষষ ধহফ ঃযধঃ ঃযবংব ড়নলবপঃরাবং ধৎব রহঃবহফবফ ঃড় ষধংঃ ভড়ৎ ধষষ ঃরসব ঃড় পড়সব ধহফ হড়ঃ ঃড় নব ংপৎধঢ়বফ নু ধহু সবধহং রহপষঁফরহম ধসবহফসবহঃ ড়ভ ঃযব ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হ.’ বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় জাতির জনক ও তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানের এদেশীয় দোসররা পাকিস্তানী আদলে ’৭৫ সালের ২০ আগস্ট তারিখে সামরিক আইন জারি করে এবং ১৫ আগস্ট তারিখ থেকে তা কার্যকর করে। ’৭৯ সালের ৬ এপ্রিল তারিখ রাত ৮টায় প্রকাশিত এক চৎড়পষধসধঃরড়হ দ্বারা সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হয়। যা পরদিন ৭ এপ্রিল তারিখের বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়। জরুরী আইন ’৭৯ সালের ২৭ নভেম্বর তারিখে প্রত্যাহার করা হয়। এমনকি ৬ এপ্রিল তারিখে দ্বিতীয় সংসদ, সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন ১৯৭৯, মারফত ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ’৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সকল সামরিক আইনের বৈধতা প্রদান করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ে অবশ্য সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন অনেক বিলম্বে হলেও বাতিল করা হয়েছে। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তারিখে লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে এবং দেশে পুনরায় সামরিক শাসন বলবৎ হয়। বাংলাদেশের মানুষ পুনরায় তাদের নাগরিক স্বাধীনতা ও অধিকার হারায়। (চলবে)
×