ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রুশ-পশ্চিম সম্পর্কে উত্তেজনা

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ৪ নভেম্বর ২০১৪

রুশ-পশ্চিম সম্পর্কে উত্তেজনা

ইউক্রেনে রুশপন্থীদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নির্বাচন ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার ফের সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রবিবার রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নির্বাচনের পর এই টানাপোড়েন দেখা দেয়। খবর এএফপির। রবিবারের নির্বাচনে মস্কোপন্থী বিদ্রোহী নেতৃত্ব জিতেছে। নির্বাচনের ফলকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া । অন্যদিকে ইউক্রেনের পশ্চিমাপন্থী প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো নির্বাচনকে একটি ‘প্রহসন’ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, বন্দুক ও ট্যাঙ্কের মুখে এই প্রহসন মঞ্চস্থ করা হয়েছে। নির্বাচনে বিদ্রোহী নেতা ও সাবেক খনি বিদ্যুতকর্মী আলেক্সান্ডার জাখারচেঙ্কো ৮১ শতাংশ ভোট পেয়েছন বলে বুথ ফেরত জরিপে বলা হয়েছে। এই নির্বাচন রাশিয়া ও পশ্চিমের সম্পর্ককে আবারও তিক্ত করল। ঝুঁকির মুখে পড়ল ইউক্রেনের সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে দুমাস ধরে চলা অস্ত্রবিরতি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রবিবারের নির্বাচনকে অবৈধ বলেছে। কিন্তু রাশিয়া ত্বরিত গতিতে নির্বাচনের ফলকে স্বীকৃতি দিয়ে পশ্চিমের সঙ্গে ফের কূটনৈতিক বিবাদে জড়িয়েছে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে গণআন্দোলনের মুখে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের খারাপ সম্পর্ক যাচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা একে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রুশ-পশ্চিম সম্পর্কে সবচেয়ে অবনতিশীল অবস্থা বলে অভিহিত করছেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রবিবার নির্বাচনের পর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘আমরা দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে (ইউক্রেন) বসবাসকারী জনতার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করি। নির্বাচিতরা জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে এনে সঙ্কট নিরসনে কাজ করার ম্যান্ডেট পেয়েছেন।’ মস্কোর এই ঘোষণার কিছুক্ষণ আগে ইইউর শীর্ষ কূটনীতিক ফেডেরিকা মুগেরেনি বিদ্রোহীদের কর্মকা-ের সমালোচনা করে রবিবারের নির্বাচনে শান্তির পথে প্রতিবন্ধক হিসাবে উল্লেখ করেন। এদিকে স্বঘোষিত দোনেৎস প্রজাতন্ত্রের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জাখারচেঙ্কো সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইউক্রেনের কথা অনুযায়ী দেশটি শান্তি চায় না। তারা এখন দ্বৈত খেলায় লিপ্ত হয়েছে।’ বিদ্রোহী প্রভাবিত পার্শ্ববর্তী লুহানস্ক অঞ্চলেও বিদ্রোহী নেতা ইগোর প্লতনিৎস্কি ৬৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী এপ্রিল থেকে সেখানে চার হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষের দেয়া হিসেব অনুযায়ী শনিবার সহিংসতায় তিন সৈন্যসহ মোট সাতজন নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছেন। কিয়েভের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা বিদ্রোহী অধ্যুষিত পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামাদি পাঠানো ও সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটানোর খবর পেয়েছেন। এ থেকে নতুন করে আঞ্চলিক সংঘাত বাধার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে নিরপেক্ষ সূত্রে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। রবিবারের নির্বাচনের একটি ফৌজদারি তদন্ত করবে ইউক্রেনের সিকিউরিটি সার্ভিস। কারণ কিয়েভের দৃষ্টিতে এই নির্বাচন ‘ক্ষমতা দখলের একটি চেষ্টামাত্র’। সংবাদদাতারা বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন যে, তারা কিয়েভের শাসনের প্রতি সন্তুষ্ট নয় এবং চলমান সংঘাতের তাড়াতাড়ি অবসান ঘটুক, এটা তাদের কাম্য। তাতিয়ানা নামে ৬৫ বছর বয়সী এক নারী বলেন, ‘আমি আশা করি আমাদের ভোট কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনবে। সম্ভবত একপর্যায়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ হবো।’ দোনেৎস্কে ভ্যালেরি নামে ৫০ বছর বয়সী আরেক নারী ভোটার বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই, প্রতি মুহূর্তে বোমা আতঙ্কের মধ্যে আমাদের সময় কাটে। কিয়েভের মোকাবেলায় নির্বাচিতরা আমাদের স্বার্থ রক্ষা করবে তাই আমি ভোট দিচ্ছি।’
×