ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কারুকার্যখচিত ভবন মনোরম পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৪ নভেম্বর ২০১৪

কারুকার্যখচিত ভবন মনোরম পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ

টাঙ্গাইলের পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি ইফতেখারুল অনুপম ‘জমিদার বাড়ি’ মানেই অপূর্ব কারুকাজ করা বিশাল অট্টালিকা, দেয়ালের পরতে পরতে সৌন্দর্যের ছোঁয়া। ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা। একেকটা জমিদার বাড়ি একেকজন জমিদারের রুচির পরিচায়ক। অন্য জমিদার বাড়ির চেয়ে একটু হলেও বাড়তি সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় টাঙ্গাইলের নাগরপুরের পাকুটিয়া জমিদার বাড়িতে। এখানে রয়েছে চমৎকার কারুকার্য খচিত বেশ কয়েকটি ভবন। প্রকৃতির মনোরম পরিবেশ আকর্ষণ করে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের। জমিদারদের অগাধ অর্থবিত্ত আর ভোগবিলাসী জীবনযাপনের কথা সর্বজনবিদিত। প্রজাদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থের একটি বড় অংশ জমিদাররা ব্যয় করত নিজেদের প্রমোদ আর বিলাসিতার জন্য। পাকুটিয়ায় জমিদাররা গড়ে তুলেছিল দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর রাজপ্রাসাদ। এই প্রাসাদ নির্মাণে তারা কার্পণ্য করেননি, ব্যয় করেছেন ইচ্ছেমতো। কালেরগর্ভে জমিদারী প্রথা বিলীন হলেও ধ্বংসস্তূপের মাঝে আজও টিকে আছে তাদের ঐতিহ্য। পাকুটিয়ার জমিদার বাড়ির ভবন তৈরির জন্য লন্ডন ও কলকাতা থেকে আনা হয় নির্মাণসামগ্রী, গড়ে তোলা হয় দুই তলাবিশিষ্ট বেশ কয়েকটি অট্টালিকা। বিদেশী নির্মাণসামগ্রী আর অনুপম স্থাপত্যশৈলীর কারণে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ির তিনটি ভবন আজও অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি যাওয়ার জন্য একটু সচেতন থাকতে হবে। কারণ জমিদার বাড়িটি টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে হলেও মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী। ফলে সাটুরিয়া হয়ে গেলে দূরত্ব অনেক কম হয়, যানজট এড়িয়ে সহজে যাওয়া যায়। এই জমিদার বাড়ির সামনে রয়েছে বিশাল মাঠ। পাশাপাশি জমিদার বাড়ির কয়েকটি দোতলা ভবন। শৈল্পিক কারুকার্যময় ভবনগুলো দেখলে আশ্চর্য হতেই হবে। জমিদার বাড়ির প্রথম ভবনটির ওপরে রয়েছে শোয়া অবস্থায় বিশাল দুটি নারীমূর্তি। তার পাশে জমিদার বাড়ির ওপরে ছোট ছোট বিভিন্ন মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ মূর্তি ভেঙ্গে পড়েছে। জমিদার বাড়ির মাঝে খোদাই করে লেখা রয়েছেÑ ‘শ্রীযুক্ত বাবু ভুপেন্দ্র মোহন রায়, ১৩২২ সন, ২রা বৈশাখ; ১৯১৫, ১৫ই এপ্রিল।’ পাকুটিয়া জমিদার বাড়িটি এখন বিসিআরজি ডিগ্রী কলেজের প্রশাসনিক ভবন ও ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ভবনের সামনে মাঠের পাশে রয়েছে দোতলা টিনের ও কাঠের তৈরি একটি রঙ্গমঞ্চ। এ মঞ্চে সে সময়কার বিখ্যাত বাইজীরা এসে নাচত বলে জনশ্রুতি আছে। মঞ্চের দোতলায় বসে জমিদাররা বাইজীদের নাচ দেখত। পাকুটিয়া জমিদার বাড়ির প্রথম ভবনটির ডানপাশে দ্বিতীয় দোতলা ভবন। এ ভবনের একতলা ও দোতলার ছাদে পরীর মূর্তিসহ ছোটবড় নানা আকৃতির মূর্তি বসানো। ভবনের মাঝে খোদাই করে লেখা রয়েছেÑ‘১৯১৫ সন, শ্রীশ্রী বিষু দাস কবীন্দ্র ঠাকুর, শ্রীশ্রী চরণ ভরসা ১৫ই এপ্রিল।’ এর নিচেই লেখাÑ‘শ্রীযুক্ত বাবু যোগেন্দ্র মোহন ম-ল, ১৩২২ সন ২রা বৈশাখ।’ এ ভবনটিতে বর্তমানে পাকুটিয়া উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কার্যক্রম চলছে। এর পাশে আরেকটি দোতলা ভবন রয়েছে। এ ভবনটির উপরেও নানা পরী ও নারীমূর্তি স্থাপন করা রয়েছে। এ ভবনটিতে বর্তমানে সাধারণ মানুষ বসবাস করছে। জমিদার বাড়ির আশপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বড় কূপ বা কুয়া। জমিদার বাড়ির রান্নাসহ নানা কাজে এ সকল কুয়ার পানি ব্যবহার করা হতো। জানা যায়, হঠাৎ এক রাতে ক্ষমতাবান পাকুটিয়ার জমিদার বিশাল বিশাল বাড়িঘর, শতশত বিঘা জমি, মূল্যবান জিনিসপত্র ফেলে ভারতে চলে যান। বিশাল এ সম্পত্তি দীর্ঘদিন অরক্ষিত থাকায় চুরি হয়ে যায় মূল্যবান অনেক জিনিসপত্র। যতেœর অভাবে ইট, পাথর ও সুরকির তৈরি ভবনগুলোর পলেস্তারা খুলে খুলে পড়ে যাচ্ছে। এছাড়া ভবনগুলোর মূল্যবান পাথর, লোহার গ্রিল খুলে খুলে বিক্রি করছে মাদকসেবীরা। সুবিশাল এ জমিদার বাড়ির জায়গা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন বেহাত হওয়ার পথে। বর্তমানে ভবনগুলো প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন। পাকুটিয়া জমিদার বাড়ির এ সব স্থাপত্য দেখতে বিভিন্ন সময়ে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা আসেন। কিন্তু জবরদখলে থাকায় তারা পুরোপুরি ঘুরে দেখতে পারেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই স্থানীয় জনগণের দাবি প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর পাকুটিয়া জমিদার বাড়িটি অধিগ্রহণ করে যেন পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করে। তবেই ঐতিহ্যবাহী এ জমিদার বাড়িটি হারানো সেই আগের রূপলাবণ্য ফিরে পাবে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদভারে মুখর হবে জমিদার বাড়ি, সরকার প্রতিবছর পাবে প্রচুর রাজস্ব।
×