ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনাতেই সিরিজ নিশ্চিতের লক্ষ্য মুশফিকদের

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২ নভেম্বর ২০১৪

খুলনাতেই সিরিজ নিশ্চিতের লক্ষ্য মুশফিকদের

মিথুন আশরাফ, খুলনা থেকে ॥ ‘যদি সব কিছু ঠিকঠাকভাবে হয় তাহলে খুলনা টেস্টে জিতেই সিরিজ জিতে নিতে চাই।’Ñ কথাটি বলেছেন খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার ছেলে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয়। কথাটি বলার সময় তার ভেতর এমন আত্মবিশ্বাস কাজ করেছে যেন জিম্বাবুইয়ে এবারও না হেরে বাঁচতে পারবে না। খুলনাতেই সিরিজের ফয়সালা করে ফেলতে চায় বাংলাদেশ। এই ব্যাটসম্যান বিজয়ই শনিবার বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের শেষভাগে এসে পুরোদস্তুর বোলার হয়ে গেলেন। পেসার শাহাদাত হোসেন রাজীবকে একের পর এক গতির বল ছুড়লেন। শাহাদাতকে আউট করার প্রাণপণ চেষ্টা করে গেলেন। অবশ্য তার কোন চেষ্টাই শেষপর্যন্ত সফল হলো না। শাহাদাত যে পুরোস্তুর ব্যাটসম্যান হিসেবেই আবির্ভূত হলেন। বোলার থেকে ব্যাটসম্যান হয়ে গেলেন শাহাদাত। বল করছেন দ্বিতীয় টেস্টের জন্য কলকাতা থেকে উড়ে আসা ব্যাটসম্যান বিজয়। খুলনার এ ছেলের প্রতিটি বলই রুখে দিচ্ছেন শাহাদাত। যেন আউট না হওয়ার পণ করেই নেমেছেন। যেন দ্বিতীয় টেস্টেই আক্রোশ নিয়ে ব্যাটিং করছেন। প্রশ্ন উঠে গেল? তাহলে কী কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে নতুন কোন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইছেন। যেখানে দলের প্রত্যেক ক্রিকেটারই ব্যাটিং ও বোলিং দুটিতেই পারদর্শী থাকবেন। যাকে যখন ইচ্ছে কাজে লাগানো হবে। হাতুরাসিংহের এমন চিন্তাধারা হয়ত দলের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তা না হলে কী আর টেস্ট শুরু হওয়ার একদিন বাকি থাকার আগেই বিজয়ের কণ্ঠে সিরিজ জেতার এমন আত্মবিশ্বাসী সুর বের হয়। বিজয় যেন মুখিয়েও আছেন দ্বিতীয় টেস্ট খেলার জন্য। কলকাতার ইডেন গার্ডেনের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিসিবি একাদশের অধিনায়ক হয়ে খেলতে যান বিজয়। ৭ অথবা ৮ নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে একজন জুটি বাধতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা থেকে বিজয়কে দ্বিতীয় টেস্টের দলে রাখা হয়। হয়ত বিজয়কে নিচের সাড়িতে নামানোও হতে পারে। যদি নেমে যান তাহলে বিজয়ও প্রাণখুলে নিজ মাটিতে কিছু করে দেখানোর অপেক্ষায় আছেন। নিজেই বললেন, ‘প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খুলনাতেই প্রথম শতক পেয়েছি। আবার ওয়ানডেতেও প্রথম শতকটি এই খুলনাতেই করেছি। খুলনার ছেলে আমি। যদি টেস্টেও খেলার সুযোগ পাই তাহলে টেস্টেও শতক করার চেষ্টাই করব।’ যদি ৭ অথবা ৮ নম্বরে নেমে বিজয় শতক করেন, তাহলে জিম্বাবুইয়ে যাবে কোথায়। কোন রাস্তাই যেন খোলা থাকবে না। অবশ্য এর জন্য বাংলাদেশ দলকে ৩ উইকেটে কষ্ট করে জেতা প্রথম টেস্টের সব ভুলে গিয়ে আরও ভাল কিছু উপহার দিতে হবে। সেই কথাও জানিয়ে দিলেন বিজয়। বললেন, ‘প্রথম টেস্ট জেতার পর সবার ভেতরই আত্মবিশ্বাস কাজ করছে। একটা স্পিরিট আছে। জেতার তীব্র আকাক্সক্ষাও আছে। দীর্ঘদিন পর ম্যাচ জিতেছি। সেটি আবার টেস্টে। এই জয় এখন ধরে রাখতে চাই। এ জন্য অবশ্য ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং-সব দিকই ভাল হতে হবে। দলের ক্রিকেটাররা যেভাবে চাঙ্গা আছে তা ধরে রাখতে পারলে জয় আসবেই। অনেক ভাল করার সম্ভাবনা আছে। খুলনা টেস্ট জেতব ইনশাআল্লাহ। আশা করছি জিতে এখান (খুলনা) থেকেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে পারব।’ যদি খুলনা টেস্ট জেতা হয় তাহলে তো কথাই নেই। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতে নেবে। যে সাফল্য ২০০৫ সালেই শুধু ছিল। জিম্বাবুইয়েকেই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার হচ্ছে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। প্রায় ১০ বছর পর দুই দল আবার বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়েও রয়েছে। বিজয়ের বিশ্বাস আছে বাংলাদেশ জেতবে। কারণ, খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে যে রান হয় প্রচুর। আর বাংলাদেশ শিবিরে যে ব্যাটসম্যানের ছড়াছড়ি। তামিম ইকবাল, শামসুর রহমান শুভ, সাকিব আল হাসান, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আছেন। বিজয় নিজেও একজন ব্যাটসম্যান। সেই তুলনায় জিম্বাবুইয়ের ভুসিমুজি সিবান্দা, সিকান্দার রাজা, হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, ব্রেন্ডন টেইলর, এলটন চিগুম্বুরা, ক্রেইগ এরভিন আছেন। প্রথম টেস্টে কেউই নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। তাই তো দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৪ রানেই গুটিয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। বাংলাদেশের সামনে ১০১ রানের টার্গেটও আকাশসমই মনে হচ্ছিল। তবে শেষপর্যন্ত জেতে বাংলাদেশই। খুলনা টেস্টেও মনে করা হচ্ছে মিরপুরের মতোই বাউন্সি, স্পিন ও বল হঠাৎ নিচু হয়ে আসার মতো উইকেটই হবে। কিন্তু এ সবকিছুকে ছাপিয়ে যাবে ব্যাটিং, এমনটিও ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে যে এ স্টেডিয়ামে একটিমাত্র টেস্ট হয়, সেই টেস্টে ব্যাটসম্যানদেরই প্রাধান্য ছিল। বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার টেস্টটিতে ১০ উইকেটে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা যে শতক করার মিছিলে নেমেছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাও বড় ইনিংস পেয়েছেন, কিন্তু তা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে রুখে দেয়ার মতো নয়। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে শতক করেছেন। ইতিহাস গড়েছেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাট থেকে এসেছিল ৭৬ রান। নাসির হোসেন করেছিলেন ৫২। বাংলাদেশের স্কারবোর্ডে রান জমা হয় ৩৮৭। দ্বিতীয় ইনিংসে সাকিব ৯৭ ও নাসির ৯৪ রান করেন। বাংলাদেশ করে ২৮৭। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে মারলন স্যামুয়েলসের ২৬০, শিবনারায়ণ চন্দরপলের অপরাজিত ১৫০ ও ড্যারেন ব্রাভোর ১২৭ রানে যে ৬৪৮ রান করে সেখানেই মূলত ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে টার্গেট দাঁড় হয় ২৭ রানের। সহজেই তা করে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই এক টেস্টেই চারটি শতক ও চারটি অর্ধশতক হয়। বলাই যায়, ব্যাটিং উইকেট। বিজয়ও সেটিই যেন বলতে চাইলেন, ‘আশা করছি এ উইকেটে ব্যাটিং করা যাবে ভালভাবেই। সেক্ষেত্রে আমাদের ব্যাটসম্যানদের ওপরই সব নির্ভর করবে। তবে স্পিন ও পেস সববিভাগ নিয়েই ভাবতে হবে। শুধু ব্যাটিং নিয়ে ভাবলে হবে না। আমাদের স্পিনাররা বিশ্বমানের। আশা করছি এ টেস্টেও (প্রথম টেস্টে জিম্বাবুইয়ের ২০ উইকেটের মধ্যে ১৮ উইকেটই নিয়েছেন স্পিনাররা) স্পিনাররাই প্রাধান্য বিস্তার করবে। বাকি কাজ আমাদের ব্যাটসম্যানদের।’ ব্যাটিং দ্যুতি ও স্পিন ভেল্কি মিলিয়ে এখন বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্ট জিতে গেলেই হয়। জিম্বাবুইয়েকে আরেকটি সিরিজে হারানো যায়। আর সেই সিরিজের ফয়সালা খুলনাতেই করে ফেলতে চায় বাংলাদেশ।
×