ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাইবার হামলায় সন্ত্রস্ত ন্যাটো

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১ নভেম্বর ২০১৪

সাইবার হামলায় সন্ত্রস্ত ন্যাটো

গত এক সপ্তাহ ধরে ইউরোপের আকাশে টহলদারি করে ব্যস্ত সময় পার করেছে উত্তর আটলান্টিক সামরিক জোট ন্যাটো। রাশিয়ার বোমারু বিমানগুলো এ সময়ে কয়েকবার ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর আকাশসীমায় ঢুঁ মারে। পাশাপাশি জোটটিকে সামাল দিতে হচ্ছে সাইবার আক্রমণ বা সন্ত্রাসের। খবর গার্ডিয়ান অনলাইন। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো রাশিয়ার গতিবিধির ওপর বিশেষভাবে নজর রাখছে। ন্যাটো মনে করে বড় হুমকি তৈরি না করলেও মস্কো ইউরোপ ও তার আশপাশের আকাশ সীমায় অনাবশ্যক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। ন্যাটো জানিয়েছে, মঙ্গল ও বুধবার ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে রাশিয়ার অনেকগুলো জঙ্গী বিমানের গতিপথ রোধ করা হয়েছে। জোটটি মনে করে ইউরোপের আকাশে এখন রাশিয়ার আনাগোনা অনেক বেড়ে গেছে। এর পাশাপাশি সাইবার আক্রমণও ন্যাটোকে প্রতিহত করতে হচ্ছে। আকাশে ইঁদুর-বিড়াল খেলার লাইভ শোর পাশাপাশি ভূমিতে দৃষ্টির আড়ালে সাইবার হামলাকারীরা পশ্চিমা ইন্টারনেট সার্ভার টার্গেট করে যেভাবে আক্রমণ পরিচালনা করছে তার পরিধিটি অনেক বড় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ন্যাটো সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান ও ব্রিটেনের রয়্যাল এয়ারফোর্সের সাবেক কর্মকর্তা ইয়ান ওয়েস্ট বলেছেন, হুমকি ক্ষেত্রটি অনেক বড়, ম্যালওয়্যার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সমর্থনপুষ্ট সাইবার হামলা সবই রয়েছে এর মধ্যে। তিনি মনে করেন, তারা যাকে অসম্ভব বলে ধারণা করেন এমন অঘটনও সাইবার আক্রমণকারীরা ঘটাতে সক্ষম। ন্যাটোর ৩৪টি ওয়েবসাইট প্রতিদিন প্রায় এক লাখ নেট ব্যবহারকারী ভিজিট করে থাকেন। তাদের ওপর নজরদারি করার জন্য ন্যাটোর রয়েছে ২শ’ শক্তিশালী টিম। ন্যাটো সাইটগুলোর নিরাপত্তা বিধান করাই তাদের কাজ। এগুলো টার্গেট করে করা প্রতিদিন অন্তত ২ কোটি সন্দেহজনক কর্মকা-ের খবর দিয়েছেন। তিনি বলছেন, এগুলোর আংশিক ন্যাটোর মনিটরে ধরা পড়ে। গত বছর ন্যাটো সাইবার ইউনিট এ ধরনের ৩ হাজার ৬শ’ অস্বাভাবিক আচরণ প্রতিরোধ করেছে। চলতি বছর ইউক্রেন আইএস সঙ্কট এ ধরনের আক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত পাঁচ এরকম ঘটনা মোকাবেলা করতে হয়। ন্যাটো সাইবার নজরদারি গ্রুপ আইসাইট পার্টনার্স জানিয়েছে, ন্যাটোর কম্পিউটার সিস্টেমে গুপ্তচরবৃত্তি চালানোর উদ্দেশে রাশিয়ান হ্যাকাররা মাইক্রোসফট উইন্ডোজে একটি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম (বাগ) ঢুকিয়ে দিয়েছে। এ লক্ষ্যে তারা পাঁচ বছর ধরে স্যান্ডওয়ার্ম নামে একটি হ্যাকিং প্রোগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। কেবল ন্যাটো নয় ইউক্রেনের কম্পিউটার সিস্টেমও এর টার্গেটের মধ্যে রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে হ্যাকাররা সাফল্যজনকভাবে হোয়াইট হাউসের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ঢুকে পড়েছিল। ওয়েস্ট বলছেন, সাইবার আক্রমণ প্রতিহতে যারা কাজ করে তাদের কর্মকা- অনেকটা খড়ের গাদার মধ্যে সূঁচ খোঁজার মতই। অথচ কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাইবার সন্ত্রাসীরা পুরো একটি ইউনিটের কাজ অচল করে দিতে পারে। সামরিক ও রাজনৈতিক মহলে সাইবার সন্ত্রাসকে বোমা হামলা বা ট্যাঙ্ক দিয়ে আক্রমণ চালানোর মতোই দেখা হচ্ছে। এ থেকে ধ্বংসের বিষয়টি সেভাবে চোখে পড়ে না। কারণ পুরো বিষয়টিই ভার্চুয়াল। কিন্তু এর ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নাই। কারণ সাইবার আক্রমণ পাওয়ার সাপ্লাই, চিকিৎসাসেবা, পানি সরবরাহ, আর্থিক বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকা- মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ করে দিতে পারে।
×