ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কত কিছু ঘটে যায়-২

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

কত কিছু ঘটে যায়-২

আবেদ খান অক্টোবরের শুরুতে ‘কত কিছু ঘটে যায়’ শিরোনামে যে মতামত প্রকাশ করেছিলাম, এ লেখার বিষয়ও গণজাগরণ মঞ্চ। গত পর্বের আলোচনায় যেখানে বিরতি টেনেছিলাম শুরু করি সেখান থেকেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির মঞ্চটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণ এবং সমাজ কাঠামোতে নতুন প্রজন্মের বিস্ফোরিত আত্মপ্রকাশের মঞ্চ। এ বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণের আগে ইতিহাসের কিছু ঘটনা তুলে ধরি। অতিসম্প্রতি হংকং-এ গণতন্ত্রপন্থীদের যে আন্দোলনটি অকস্মাৎ বিশ্ব-শিরোনাম হয়ে উঠল তার সূচনা ফেসবুক সংযোগ, মূলশক্তি নতুন প্রজন্ম এবং এই আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় যার নাম বার বার উঠে আসছে সে ১৭ বছরের এক কিশোর, নাম ওয়াং, কৃশকায়, মাথাভর্তি চুল, চোখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা। ১৯৯৭ সালে ওয়াং-এর জন্ম। কেমন করে এই কিশোর এমন একটা আন্দোলনের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রূপান্তরিত হলো তা নিয়ে শুধু হংকং বা চীন নয় বাইরের অনেক তুখোড় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞও মাথা ঘামাচ্ছেন। প্রথম আট দশ দিন আবেগের যে বহির্প্রকাশ পরিলক্ষিত হচ্ছিল তা এখন আর নেই। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ স¤পর্কে সন্দিহান হয়ে আন্দোলনের সঙ্গে তাদের সংশ্রব ত্যাগ করে শিক্ষাঙ্গনে ফিরে গেছে। আর কেউ কেউ ওয়াং-এর আকস্মিক উত্থানের পেছনে কোন রহস্যজনক কারণ আছে কিনা তা নিয়ে ব্যাপক পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছে। তাদের সন্দেহ, ওয়াং-এর কৈশোরিক অপরিপক্বতা এবং গ্রহণযোগ্যতাকে পুঁজি করে কোন বিশেষ মহল আন্দোলনকে ব্যবহার করছে কিনা কিংবা অন্য কোন মহল নিঃশব্দে তাকে উস্কে দিয়ে আন্দোলনের সূচীমুখ পাল্টানোর চেষ্টা করছে কিনা এসব ভাবনা বিশ্লেষকদেরও কপালের কুঞ্চনের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকল। এই প্রসঙ্গে একটি বিষয় বিনীতভাবে বলতে চাই। দ্বিতীয় পর্ব শুরু করতে বিলম্বটি আলস্যজনিত কারণে নয়। হংকংয়ের পরিস্থিতির সর্বশেষ পরিণতি পর্যবেক্ষণ এই নিবন্ধটির জন্য অতীব প্রয়োজন ছিল। হংকংয়ের আন্দোলনকারীদের আন্দোলনের পরিসমাপ্তি যে কিভাবে ঘটেছে তা এখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অতিশয় অমনোযোগী ছাত্রও অনায়াসে বলে দিতে পারবে। শক্তিহীন অক্ষম আস্ফালনও এক সময় নিস্তেজ হয়ে গেছে। অর্থহীন বুঝেও আন্দোলনকারীদের অতি ক্ষুদ্র এক অংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে জনসাধারণের কাছে অধিকতর হাস্যাস্পদ হয়েছে। এখন নির্দ্বিধায় বলা যায় হংকংয়ের আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে, ওয়াংয়ের ভাবমূর্তি বিস্মৃত হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে অতি দ্রুততার সঙ্গে। ॥ ২ ॥ বিদগ্ধ পাঠক, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং চূড়ান্ত শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের উত্থান ও বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী আন্দোলনের আকৃতিগত কিছুটা সাদৃশ্য থাকলেও প্রকৃতিগত দিক থেকে কোন মিল নেই। হংকংয়ের আন্দোলন বুদবুদের ভঙ্গুর ফেনার জন্ম দিয়ে নিশ্চিহ্ন হওয়ার মতো, কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের উত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপ্রবাহের একটি অমোঘ সঙ্কেতÑযা ইতিহাসের জলধারাতে কিছুটা হলেও কম্পন তুলবে। আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে আরব বসন্তের কথা। নতুন প্রজন্মের জাগরণ চিহ্নিত হয়েছিল কায়রোর ওই তাহ্রীর স্কোয়ারে। যে উত্থান বিশ্বে ঝড় তুলেছিল, তা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি মিসরে অথবা অন্য কোথাও, কিন্তু আরব বিশ্ব এর ফলে যুগপৎ চমকিত এবং শঙ্কিত হয়েছিলÑএ কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই। এই জাগরণের ভেতর দিয়ে নতুন একটি সত্তার এবং সত্যের উদ্বোধন ঘটে গেছে পৃথিবীজুড়ে। প্রাচীনেরা হয়ত নবীনের উত্থানের সঙ্কেত ধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন না, কিংবা বুঝতে পারলেও মানতে চাইছেন না, কিন্তু যাঁরা এই সত্যকে অনুভব করে তার সঙ্গে সমঝোতা করতে পেরেছেনÑ সময় তাঁদের পক্ষেই গেছে। আজ ভাবা দরকার দুনিয়াব্যাপী নতুন প্রজন্মের উত্থানটি এখন হলো কিভাবে। এ কথা সন্দেহাতীতভাবে সত্য, যে আধুনিক প্রযুক্তি ও ভার্চুয়াল সংযোগব্যবস্থা নতুন প্রজন্মকে দূরে থেকেও কাছে টানার একটা অনবদ্য সুযোগ সৃষ্টি করেছে সেটাই এই জাগরণে এক বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। তবে স্বতঃস্ফূর্ত উত্থানের একটি সঙ্কট হলো সেখানে আবেগ থাকে বটে, কিন্তু সাংগঠনিক বাঁধুনি থাকে না। যে আন্দোলন, যে লড়াই স্বতঃস্ফূর্ততার লেজুড়বৃত্তি করেÑ সে লড়াই অনিবার্যভাবে ক্ষণস্থায়ী। যাঁরা মনে করেন এই লড়াইকেই চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারবেন, তাঁদের ভ্রান্তিবিলাসকে করুণা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। কারণ ভার্চুয়াল সংযোগ কখনও সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করতে পারে না, সেখানে থাকে স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের বহির্প্রকাশ। দ্বিতীয়ত, যে কোন সংগ্রামকে সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে কতিপয় শর্তপূরণের আবশ্যকতা থাকে। পরিবর্তনের প্রতি সামগ্রিক গণসম্মতি পক্ষান্তরে সরকার কাঠামোর পৌনঃপুনিক ব্যর্থতা, একই সঙ্গে পরিবর্তনের অনুকূলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির অবস্থান ও সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে পূর্ববর্ণিত শর্তসমূহের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপনে পারঙ্গম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানই কেবল বিপ্লব সুসম্পন্ন করতে পারে। এগুলো ছাড়া কখনোই যৌক্তিক পরিণতি আসে না। এদেশের ইতিহাসও এরই প্রমাণ বহন করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তিল তিল করে, ২১ ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ করল এবং ওইদিনই গুলিবর্ষণের পর তা জনসম্পৃক্তি পেল। কিন্তু তদানীন্তন মুসলিম লীগ সরকারের প্রবল নির্যাতনের কারণে ছাত্রদের আন্দোলন স্থায়িত্ব পায়নি। অথচ এর সফল পরিণতি অর্জিত হলো যখন রাজনৈতিক শক্তিসমূহ এই আন্দোলনকে নিজস্ব আন্দোলনে পরিণত করল। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের সম্পূর্ণ ভরাডুবি এবং সমন্বিত রাজনৈতিক শক্তি যুক্তফ্রন্টের বিপুল বিজয়ের পেছনের কারণটি হলো রাজনৈতিক কর্মসূচী ২১ দফা। ॥ ৩ ॥ আমরা যদি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস দেখি তাহলেও দেখব ছাত্রসমাজের সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত সংগ্রামী রূপ পরিগ্রহ করেছিল প্রথম ১৯৬৬ সালের ৬ দফা রাজনৈতিক কর্মসূচীতে। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজের কর্মসূচী ১১ দফাকে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত দূরদর্শিতার সঙ্গে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানকে রাজনৈতিক লড়াইয়ে পরিণত করতে পেরেছিল বলেই দলটির নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। ’৯০-এর ঐতিহাসিক স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশে গণতন্ত্রবিরোধী সামরিকতন্ত্রের পুনরাবির্ভাব প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছিল। অর্থাৎ সামগ্রিক বিবেচনায় আলোড়ন যত স্বতঃস্ফূর্তই হোক এবং আবেগ যত তীব্রই হোক না কেন যতক্ষণ পর্যন্ত তা রাজনৈতিক দর্শন এবং ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বাধীনে পরিচালিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তা সফল পরিণতির দিকে যাবে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এ ধরনের আলোড়নের ফসল ভুল এবং অনাকাক্সিক্ষত শক্তির গোলায় চলে যায়। গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তারা এই জায়গায় গুরুতর ভুল করেছেন। যে সময় রাশ টানার প্রয়োজন ছিল সেটি তাঁদের দৃষ্টির অন্তরালে থাকার কারণে অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। ফলে তাঁদের চলার সঙ্কট দ্রুত ভুল ঠিকানায় ধাবিত হতে হতে উষর মরুভূমিতে পথভ্রষ্ট হয়েছে। আর তার সুযোগ গ্রহণ করেছে ধর্মান্ধ ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। আমি অবশ্যই গণজাগরণ মঞ্চের উত্থানকে ব্যর্থ মনে করি না। কারণ ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির জাগরণ এই জাতিকে বেশ কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন উপহার দিয়েছে। যেমনÑ এক. নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক সচেতনতা স¤পর্কে সাধারণ ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। দুই. মুক্তিযুদ্ধের সেøাগানগুলো নতুনভাবে এবং নতুন প্রেক্ষাপটে মানুষের কাছে ফেরত এসেছে। তিন. তরুণ শক্তির প্রতি মানুষের আস্থার পুনর্বাসন ঘটেছে। চার. আন্দোলনের বিস্তার কেবলমাত্র একটি অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত থাকেনি বরং তা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তেও গিয়ে পৌঁছেছে। পাঁচ. তরুণ শক্তির হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শিশু কিশোর স্তরকেও উজ্জীবিত করেছে। ছয়. স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিচরণের স্থানগুলোও প্রকাশিত ও প্রচারিত হতে পেরেছে। সাত. মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর বিভ্রান্তকর তথ্য ও তত্ত্ব এর ফলে প্রচ- ধাক্কা খেয়েছে এবং আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম অনেকখানি অনুকূল আচরণ করছে। এটা হচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন কিংবা আলোড়নের একটা দিক। অন্যদিকটা অবশ্যই চিন্তিত হওয়ার মতো। যেমনÑ এক. আলোড়ন যখন আন্দোলনে পরিণত হওয়ার প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিল তখন উচিত ছিল উপযুক্ত সময় বিবেচনা করে এটাকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক নেতৃত্বের নিকট সমর্পণ করা। গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বের অপরিপক্বতাজনিত ভুল ছিল এই কাজটি না করা। দুই. ইমরান এইচ সরকার তাঁর ‘দ্রোহে-প্রতিবাদে-অর্জনে গণজাগরণ মঞ্চের এক বছর’ শীর্ষক নিবন্ধের এক স্থানে বলেছেন, ‘...১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারের সুযোগ, ভিক্টিমদের আপিলের সুযোগ এবং ৬০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির কথা উল্লেখ করে আইন সংশোধন করা হয়। এই আইন সংশোধন ছিল আমাদের এই আন্দোলনের এক মাইলস্টোন বিজয়।’ আমার মনে আছে ঐ ১৭ ফেব্রুয়ারিতেই শাহবাগের পিজি হাসপাতালের দোতলার ক্যান্টিনে রাতের বৈঠকে আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলাম এই অর্জনের পর নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক শক্তির হাতে পরবর্তী কর্মসূচী বাস্তবায়নের সুযোগ দিয়ে অবস্থানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা। কিন্তু সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। অথচ এর আগেই রাজীব হত্যার ভেতর দিয়ে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির হামলা চালানোর পূর্বাভাস অনুভূত হচ্ছিল। তিন. আন্দোলনের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি ছিল সরকার এবং সরকারী দল। কিন্তু অরাজনৈতিক ভাবমূর্তি রাখার জন্য সহায়ক রাজনৈতিক শক্তিগুলো এবং সেসব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তরুণ ও যুবশক্তিকে দূরে সরিয়ে রাখার ভেতর দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের অপরিপক্ব নেতৃত্ব যেমন নিজেদের নিঃসঙ্গ করে ফেললেন তেমনি অপরাজনীতির প্রবক্তাদের আঘাত হানার সুযোগটিও অবারিত করে দিলেন। চার. প্রতিপক্ষের উপর্যুপরি প্রচারাভিযান এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ হামলায় গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিরোধহীন হয়ে পড়ছিল। আর মুখে তীব্র আবেগ প্রকাশ করলেও প্রায়শই অবস্থান থেকে পশ্চাদপসরণ করে আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছিল। এটা ছিল আরেকটি ভুল। এই পরিস্থিতিতে দেখা গেল তাঁরা নিজেদের ব্যর্থতা এবং হতাশা ঢাকার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হচ্ছেন। এই কারণে তাঁরা সহায়ক শক্তিকে প্রতিপক্ষ শক্তিতে পরিণত করলেন এবং স্বাধীনতার শত্রুদের নতুন নতুন আক্রমণ পরিকল্পনার সুযোগ দিয়ে ফেললেন। আন্দোলনকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করতে গিয়ে তাঁরা সমগ্র উত্থানকে বিতর্কিত, আশ্রয়হীন, হতাশাগ্রস্ত, লক্ষ্যভ্রষ্ট ও খর্বকায় করে ফেললেন। এটা ছিল প্রচ- রকমের ভুল। পাঁচ. গণজাগরণ মঞ্চে হতাশাদষ্ট অবস্থার কারণে আত্মবিরোধ ঘটেছে এবং এই আত্মবিরোধ মঞ্চ নেতৃত্বকে কয়েকখ-ে বিভক্ত করেছে। এই বিভক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আশার প্রদীপটিকে কেবল নির্বাপিতই করেনি, রাস্তায় বেরিয়ে আসা লাখো-কোটি আবালবৃদ্ধবণিতাকে আবার পাঠিয়ে দিয়েছে কুসংস্কারের আলো-বায়ুহীন অন্ধপ্রকোষ্ঠে। ॥ ৪ ॥ এত বিশ্লেষণের পরেও শেষ কথাটি এভাবে বলা যায়Ñ গণজাগরণ মঞ্চের আবেদন আপাতত কমে গেছে বটে, কিন্তু গণজাগরণ মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থায়ী আসন রচনা করে ফেলেছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতার শেষদিকে বলেছেন, ‘রাতের সব তারাই থাকে দিনের আলোর গভীরে’। তেমনি গণজাগরণ মঞ্চ অর্জিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ঠিকই অক্ষত আছে বাঙালীর মর্মমূলে। একদিন প্রয়োজনের মুহূর্তে তা ফুটে বেরুবেই।
×