ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমদানি নিষিদ্ধ ২৫ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ জাহাজ গভীর সমুদ্রে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৭ অক্টোবর ২০১৪

আমদানি নিষিদ্ধ ২৫ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ জাহাজ গভীর সমুদ্রে

এনওসি বাতিলের পরও আনা হয়েছে কৌশলে মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সরকারী নিয়মকানুন উপেক্ষা করে চট্টগ্রামের একটি শিপ ব্রেকিং প্রতিষ্ঠান দেশে কাটার জন্য নিষিদ্ধ ২৫ কোটি টাকা মূল্যের এসবেস্টস ও বর্জ্য বহনকারী এমন একটি স্ক্র্যাপ জাহাজ অবৈধ পথে আমদানি করে নিয়ে এসেছে। জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরের বাইরে গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করেছে গত শুক্রবার রাতে। জাহাজটি পোর্ট লিমিটের বাইরে থাকায় এটি এখনও চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষমাণ তালিকায় আসেনি। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষীয় সূত্রও জানিয়েছে, তাদের কাছে এ ধরনের জাহাজের কোন কাগজপত্র এখনও জমা পড়েনি। তবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ইয়াসমিন সুলতানা শনিবার চট্টগ্রামে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং এ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিএ) কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন। তাগিদ দিয়েছেন যেন সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত এমন কোন শিপ ব্রেকাররা আমদানি না করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে শিপ রিসাইক্লিং রুলস ২০১১ অনুযায়ী যে কোন ধরনের যুদ্ধ জাহাজ ও প্যাসেঞ্জার জাহাজ স্ক্র্যাপ হিসেবে আমদানি করা, কাটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরও একশ্রেণীর অসাধু শিপ ব্রেকার বিভিন্ন সময়ে ঘোষণা না দিয়ে স্ক্র্যাপ জাহাজ এনে তা কাটার নজির রয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০১১ সালে পানামার পতাকাবাহী সুইফট ক্রো নামের প্রায় ২৭ কোটি টাকা মূল্যের ৯ হাজার মেট্রিক টন ওজনের একটি স্ক্র্যাপ জাহাজ মালিকানা ঘোষণাবিহীন বহির্নোঙ্গরে আসার পর সেটি সীতাকু-ের একটি শিপইয়ার্ডে লোহা পাচারকারীদের কবলে পড়ে। কাস্টমসের অনুমতি ব্যতিরেকে জাহাজটি অত্যন্ত কৌশলে সীতাকু- উপকূলে নোঙ্গর করানোর পর চোরের দল এটির ওপর হানা দিয়ে প্রতিনিয়ত কেটে নিঃশেষ করতে থাকে। এখনও এর কিছু অংশ নিয়ে জাহাজটির অবস্থান রয়েছে। গত শুক্রবার বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত যে স্ক্র্যাপ জাহাজটি এসেছে এটি আনা হয়েছে মূল নাম পাল্টিয়ে। ইন্দোনেশিয়ার পতাকাবাহী এ জাহাজটি একটি প্যাসেঞ্জার ভেসেল। এটির আসল নাম ছিল ‘এমভি কেরিঞ্চি’। নাম পাল্টিয়ে এটির নতুন নাম দেয়া হয়েছে ‘এমভি এআরকে’। ৭ হাজার ৬শ’ টন ওজনের জাহাজটিকে রো-রো ভেসেল হিসেবে দেখানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে সুচতুর আমদানিকারক। জাহাজটিকে কৌশলে বহির্নোঙ্গরে পোর্ট লিমিটের বাইরে রাখা হয়েছে। কৌশলে এটির ডিক্লারেশন দিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজপত্র জমা দিয়ে দফারফা করে তা সীতাকু-ে বিচিং করিয়ে কাটার অপপ্রয়াসে লিপ্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এনওসি নেয়ার বিধান রয়েছে। গত ১৯ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আসল তথ্য-উপাত্ত গোপন করে এমভি এআর নামের জাহাজটির ছাড়পত্রও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গত ২১ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্ক্র্যাপ জাহাজটির ছাড়পত্র বাতিল করে। বাতিল করার অনুলিপি বিএসবিএ’র কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। শনিবার বিএসবিএ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠককালে যুগ্ম সচিব ইয়াসমিন সুলতানা বিষয়টি সবার সামনে ফাঁস করে দেন। সূত্র জানায়, এসবেস্টস ও বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ থাকার কারণে বাংলাদেশে সব ধরনের স্ক্র্যাপ যুদ্ধ জাহাজ ও প্যাসেঞ্জার জাহাজ আমদানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ জাহাজটিও ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানার ছিল। সে দেশের ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি পেলনি (পেলাইয়ারান ন্যাশনাল ইন্দোনেশিয়া) কর্তৃপক্ষ আসল তথ্য গোপন করে জাহাজটি আন্তর্জাতিক স্ক্র্যাপ জাহাজ মার্কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। চট্টগ্রামের এক শিপ ব্রেকার সম্প্রতি জাহাজটি ক্রয় করেছে এবং তা কৌশলে সীতাকু- উপকূলে এনে ভাঙ্গার পরিকল্পনায় রয়েছে। বিএসবিএ’র একটি সূত্র জানায়, এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এ ধরনের নিষিদ্ধ জাহাজ না আনার জন্য তারা আইনী অধিকারী যেমন নয় তেমনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধও। তারপরও কোন শিপ ব্রেকার এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হলে তা তার নিজ দায়িত্বে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্ট্রোল রুম সূত্র রবিবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে জানায়, তাদের কাছে এ নামের কোন স্ক্র্যাপ জাহাজের ডিক্লারেশন এখনও আসেনি। উল্লেখ্য, পোর্ট লিমিটের আওতায় আসার পর বিদেশী যে কোন জাহাজের ডিক্লারেশন দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মাসুদ সাদিক জনকণ্ঠকে জানান, তাদের কাছে এখনও এ ধরনের কোন তথ্য আসেনি। বিষয়টি তিনি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জনকণ্ঠকে জানান। উল্লেখ্য, অবৈধপথে আসা বা আমদানি নিষিদ্ধ এমন যে কোন জাহাজ বাংলাদেশের সামুদ্রিক সীমানায় এলে তা এরেস্ট করার বিধান রয়েছে।
×