ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপরাধী সন্ত্রাসীদের দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না

প্রকাশিত: ২৩:০১, ১১ আগস্ট ২০২০

অপরাধী সন্ত্রাসীদের দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন অভিযোগ থাকলে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাও ছাড় পাচ্ছে না দাবি করে বিএনপি সমর্থিত কেউ গ্রেফতার হলে অভিযোগ উঠে কেন তা জানতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সোমবার মন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ময়মনসিংহ সড়ক জোন, বিআরটিএ ও বিআরটিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেছেন, তাদের দলের নেতা-কর্মীদের নাকি গ্রেফতার-হয়রানি করা হচ্ছে। আমি আগেও বলেছি, রাজনৈতিক কারণে কাকে-কোথায় গেস্খফতার-হয়রানি করা হয়েছে, বলুন। তাই বলে কী অপরাধীদের ধরা হবে না? অপরাধী-সন্ত্রাসীর কোন দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। সরকার বিভিন্ন অপরাধে নিজের দলের লোকদেরও ছাড় দিচ্ছে না। আর বিএনপিসমর্থিত কোন অপরাধী গ্রেফতার হলে অভিযোগ কেন? রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না দাবি করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, যারা চট্টগ্রামের চিহ্নিত অপহরণকারী বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি, তাদের মুখে এসব কথা মানায় না। অগাস্ট মাস এলেই আতঙ্ক বেড়ে যায় মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ দেশের মাটি বীরের বীরত্ব গাথায় উর্বর, আবার বিশ্বাসঘাতকতার নিকৃষ্ট নজিরও এখানে আছে। এখানে দেশগ্রেমের যেমন বিরল দৃষ্টান্ত আছে তেমনি ষড়যন্ত্রের গন্ধও আছে। এদেশে ঘটনার আগে কিছু বোঝা যায় না। হঠাৎ করে চোখের পলকে ১৫ আগস্ট ঘটানো হয়েছিল। ২১ আগস্টের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল কারা? কারা তখন ক্ষমতায় ছিল, বিএনপিই ছিল মাস্টারমাইন্ড। যারা জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে ঘটনাকে ভিন্ন দিকে ঘোরানোর অপচেষ্টা করেছিল তাদের মুখে হত্যার বিচার চাওয়া কি শোভা পায়? অভিভাবকদেও ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনাভাইরাসের এ সময়ে দীর্ঘদিন স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকা এবং বাসা-বাড়িতে অবস্থান করায় শিশু-কিশোর এবং তরুণদের মানসিক চাপ বেড়েছে। সরকার সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। ইতোমধ্যে অনলাইনে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সরকার যথাসময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেবে। আমি অভিভাবকদেও ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, কোথাও কোথাও গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি এবং মালিক-শ্রমিকদের প্রতিশ্রুতি-সমন্বয় করা ভাড়া মানছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, যা প্রত্যাশিত নয়। পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠন এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেও ভাড়া আদায় এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালানোয় কেন তারা ব্যর্থ হচ্ছেন? পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিআরটিএকে যেসব পরিবহন সরকারী নির্দেশনা প্রতিপালনে ব্যর্থ হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। সতর্কতার সঙ্গে ঈদের পর গাড়ি চালানোর অনুরোধ করা হলেও তারা তা মানেননি। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণেই ঘটছে দুর্ঘটনা। জনগণকে আর কতদিন এ প্রশ্নের জবাব দিতে হবে? ঈদের সময় অনেক পরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেনি। অর্ধেক আসন খালি রাখার কথা থাকলেও অনেক পরিবহন তা মানেনি। এমনকি এখনও সমন্বয় করা ভাড়া না মানার অভিযোগ আছে। মন্ত্রী বলেন, গণপরিবহন, বাস টার্মিনাল, ফেরিঘাটসহ শপিংমল এবং অন্যান্য স্থানে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি অনেকের উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। অনেকে সংক্রমণের লক্ষণ লুকিয়ে চলাফেরা করছে। আপনারা দেখছেন, নমুনা পরীক্ষার তুলনায় আক্রান্তের হার শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগের মধ্যে অবস্থান করছে। কিছুদিন ধরে আবার বিশ্বের কোন কোন দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় তরঙ্গ আঘাত হানছে। এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের উদাসীনতা ভয়ানক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। নিজের, পরিবারের এবং প্রতিবেশীর সুরক্ষায় আসুন সচেতন হই। আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরিধান করি। একটাই জীবন আমাদের, তাই এ জীবন নিয়ে হেলাফেলা না করি। সর্বোচ্চ সতর্ক থাকি। ওবায়দুল কাদের বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসের কলঙ্কময় হত্যাকাণ- ১৫ আগস্টের হত্যাকা-। এই হত্যাকা-ের বিচার বন্ধে কারা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল? কারা কলঙ্কিত করেছিল সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে খুনীদের বিচার বন্ধ করে? তাই আগস্ট এলেই আমরা আতঙ্কে থাকি। কারণ ষড়যন্ত্রকারীদের, বিশ্বাসঘাতকদের প্রেতাত্মারা এখনও আছে। আছে তাদের ষড়যন্ত্রের নক্সা। যারা এদেশের রাজনীতিতে রক্তপাত, হত্যা আর প্রতিহিংসা ছড়িয়েছে তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বললে আরেক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে জনগণ মনে করে। সড়ক নির্মাণে গুণগতমান বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার আগে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায় ঠিকাদার এবং প্রকৌশলীকে নিতে হবে। তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে প্রকৌশলীদের তদারকি আরও নিবিড় হতে হবে। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের অপচয় কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না। পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং ক্যাপাসিটি এবং কর্মদক্ষতা বিবেচনায় আনা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করতে হবে। অহেতুক বিলম্ব নির্মাণকাজের খরচ বাড়িয়ে তোলে। যে সকল ঠিকাদার সময়মতো কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এ সময় মন্ত্রী হাওড় এলাকা বিশেষ করে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে বিশেষ ধরনের সড়ক নির্মাণে সফলতার জন্য সড়ক প্রকৌশলীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে হাওড় এলাকার অর্থনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যেতে শুরু করেছে। ভিডিও কনফারেন্সে অন্যান্যর মাঝে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চন্দন কুমার দে, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শাহারিয়ার হোসেন, ময়মনসিংহ সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসানসহ বিভিন্ন সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং বিআরটিএ ও বিআরটিসির কর্মকর্তাগণ সংযুক্ত ছিলেন।
×