ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাধ্যমিকের ফল মোবাইলে

প্রকাশিত: ০৮:১৫, ১১ এপ্রিল ২০২০

 মাধ্যমিকের ফল মোবাইলে

করোনাভাইরাসের সর্বগ্রাসী সংক্রমণে বিশ্বসহ বাংলাদেশ স্থবিরতার কঠিন বেড়াজালে। সামাজিক দূরত্বকে সমধিক গুরুত্ব দিতে গিয়ে মানুষের সঙ্গে অন্য যে কারও মেলামেশাকে এক প্রকার নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে সামগ্রিক সামাজিক বলয়ের গতিহীনতায় এখন নাজেহাল অবস্থা। সেখান থেকে বেরুনোর কোন নির্দেশনা দিতে কারও পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। বিপাকে পড়া দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা আজ চরম সঙ্কটে। নির্ধারিত সময়ে শ্রেণী পাঠদান থেকে শুরু করে ছাত্রদের প্রথম সাময়িকী পরীক্ষা, একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা এমনকি এইচএসসির পর্বটিও আজ অনিশ্চয়তার ঘোরতর দুর্বিপাকে। শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষার ফল কিভাবে সুচারুরূপে প্রকাশ করা হবে তা শিক্ষা অধিদফতরের পেশাগত দায়বদ্ধতা। আর তেমন কর্তব্যনিষ্ঠার এসএসসির ফল বের করাকেও অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে ভাবা হচ্ছে ফলাফল প্রকাশ করাও অত্যন্ত জরুরী। আর সেটা অবশ্যই সামাজিক নিরাপত্তার বলয়েই করতে হবে। প্রথম পদক্ষেপটি আসে যশোর শিক্ষাবোর্ডের কার্যক্রমের ভিত্তিতে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ফলাফল সরাসরি চলে যাবে অভিভাবকদের মোবাইল নম্বরে। এমন প্রয়োজনীয় কর্মবিধির ওপর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিও জারি করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ড। এই বিজ্ঞপ্তিতে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে অভিভাবকদের মোবাইল নম্বর পাঠাতে বলা হয় ৩০ এপ্রিলের মধ্যে। শুধু করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে নয়, শিক্ষাব্যবস্থায় কোন প্রকার ঝুঁকি এমনকি ফলাফল দ্রুততম পর্যায়ে পৌঁছে দিয়ে ভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যেই এমন উপস্থিত উদ্যোগ নেয়া হয় বলে যশোর শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এমন সিদ্ধান্ত নিলেও বোর্ডের চেয়ারম্যান সে ব্যাপারে একমত হতে প্রত্যয়ী। যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আশা প্রকাশ করেন, প্রতি বছর এপ্রিলের শেষ অথবা মের প্রথম দিকে যেভাবে পরীক্ষার্থীরা তাদের ফলাফল পেয়ে যেত এবারও সময় অপচয় না করে তেমন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারছে না সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা যারা ইতোমধ্যে খাতা মূল্যায়ন করে শেষ পর্বে পৌঁছে গেছেন। কারণ গণপরিবহন বন্ধ থাকায় খাতা এখন পর্যন্ত বোর্ডে আসতে পারেনি। ফলে কিছুটা পেছাতে পারে ফলাফল প্রকাশের সময়। স্বাভাবিক অবস্থা ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষাও করতে হতে পারে। তবে এসএসসির ফল মোবাইলে অভিভাবকের কাছে চলে যাওয়া সেটা একেবারে করোনা দুর্ভোগের বাইরে। তবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কোন ধরনের ভোগান্তি যাতে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে না পারে। এতে যথানিয়মে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে ফলাফল চলে যাবে এবং তা অভিভাবকরা মোবাইলে দেখতেও পাবেন। এতে আর্থিক খরচ বাড়লেও ছাত্রছাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজ সম্পন্ন হলে তা অভিভাবকদের মোবাইলে চলে আসবে। তবে এ ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান। তার মতে করোনাভাইরাসকে এড়াতে গেলে গণজমায়েত ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যসম্মত বিধি। ফলাফল প্রকাশে তেমন নিয়ম লঙ্ঘিত হতে পারে বলে চেয়ারম্যান আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সঙ্গত কারণে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফল পাঠানোকে তিনি যৌক্তিক হিসেবেও মনে করেন। এছাড়া বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করা এবং পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পরামর্শ দেয় পরীক্ষা নিলেও মূল্যায়নে একটু অপেক্ষা করা সঙ্গত। এই পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাপনার চরম অচলাবস্থা শুধু সংসদ টিভি এবং অনলাইনের মাধ্যমে কতখানি সুরাহা হবে তার জন্য সময়ের কাছে অপেক্ষা করতে হবে। এতদিন মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের সংসদ টিভির মাধ্যমে শ্রেণীপাঠ দান কর্মসূচী শুরু করলেও এখন তা প্রাথমিক পর্বের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
×