ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর খুনী মাজেদ

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ১১ এপ্রিল ২০২০

বঙ্গবন্ধুর খুনী মাজেদ

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী আবদুল মাজেদের দন্ড কার্যকর করার সুযোগলাভ এই করোনাকালে জাতির জন্যে স্বস্তিকর সংবাদ। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায়ে এই খুনীকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন মহামান্য আদালত। কিন্তু এতদিন সে পলাতক অবস্থায় বিদেশে অবস্থান নিয়েছিল। ইতিহাসের নির্মম বিচারে এই জঘন্য খুনীর শেষ রক্ষা হলো না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের যে জঘন্য হত্যাযজ্ঞটি আজও ইতিহাসের কালো অধ্যায় হয়ে নৃশংসতার চরম নিদর্শন হিসেবে ধিক্কৃত হচ্ছে। সেই ১৫ আগস্টের ভয়াল রাতের নিষ্ঠুরতায় নববধূ থেকে আরম্ভ করে গর্ভবতী সুলতানা কামাল এমন কি শিশু রাসেলকেও বাঁচতে দেয়নি পাষন্ডরা। সেই বীভৎস ঘাতকদের একজন এই তৎকালীন ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ। যার সদম্ভ ও নিষ্ঠুর সাহসিকতার জন্য তৎকালীন সামরিক জেনারেল জিয়াউর রহমান এই আত্মস্বীকৃত খুনীকে পুরস্কৃতও করেন। বিদেশী দূতাবাসে চাকরি দেয়া থেকে সচিব পর্যায়ে উন্নীত করে এই পাষন্ড অমানবিক হন্তাকে সম্মানিত করেছিলেন। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম বিচারের সব কিছু শোধবোধও হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করা যাবে না- এমন নির্দেশকে বিবেচনায় নিয়ে সংবিধানের পাস করা হয় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। এমন কলঙ্কিত সাংবিধানিক বিধি বলবত থাকে সুদীর্ঘ ২১ বছর অবধি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার অধিষ্ঠিত হলে এই কলঙ্কিত আইনকে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে নির্মূল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সঙ্গত কারণে বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক হত্যার বিচারের পথটি উন্মুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নয়, যথার্থ আইনী প্রক্রিয়ায় বিচারিক দন্ড শেষ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। ন্যক্কারজনক এই বীভৎসতার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের করা হয় কলঙ্কিত আইনটি বাতিলের পর পরই। সেই থেকে টানা কয়েক বছর এই হত্যাযজ্ঞের বিচার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ২৪ জনকে আসামি করে দায়েরকৃত মামলায় তাদের বিচারকার্য শুরু হয়। ইতোমধ্যে বিদেশে পলাতক ২ আসামিকে গ্রেফতার করে কনডেম সেলে আটক করা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নবেম্বর বিচারিক আদালত মামলার ১৫ জন আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেন। তবে রায়ের বিরুদ্ধে আপীল হলে মহামান্য আদালত তা খারিজ করে দন্ডপ্রাপ্তদের সাজা বহাল রাখেন। আর এই রায় কার্যকর হয় ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনীকে দন্ডাদেশের মাধ্যমে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো হয়। আবার অভিযুক্ত দন্ডিতদের মধ্যে একজন মারা যায় আর ছয়জন পলাতক ছিল। বিদেশে পালিয়ে বেড়ানো, আত্মগোপন করা ছয়জন আসামির একজন এই আবদুল মাজেদ। আটক হওয়ার পর আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলে, ২৩ বছর সে ভারতের কলকাতায় আত্মগোপন করেছিল। ৭২ বছর বয়সী এই খুনী মাজেদ তার জবানবন্দীতে কলকাতায় তার পালিয়ে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে। এমনকি পাকিস্তানে অবস্থান করে বলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। গত সোমবার গভীর রাতে তাকে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এই আত্মস্বীকৃত ঘাতকের ফাঁসির দন্ড গলায় পরা ছাড়া নিজ পক্ষ সমর্থনের অন্য কোন সুযোগ এখন আর নেই। মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করার প্রক্রিয়ায় নিজেকে বাঁচাতে কোন আইনী সহায়তা নেয়া তার পক্ষে একেবারেই শূন্য। তাই এই দন্ডাদেশ কার্যক্রমকে ক্রমান্বয়ে বিধি মোতাবেক প্রয়োগ করা হবে বলে আইনমন্ত্রী জানান। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, মুজিববর্ষের এই সময়ে খুনী মাজেদকে আটক করাই জন্মশত বর্ষের সেরা উপহার। এই রায় কার্যকর করে সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাসে সংক্রমণে আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন খুনী মাজেদকে কারাগারে রাখার ব্যাপারেও তেমন সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। খুনী মাজেদের রায় কার্যকর এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। এ ছাড়াও পলাতক বাকি ৫ খুনীকেও ক্রমান্বয়ে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরে পদক্ষেপ নেয়া হবে। বলাবাহুল্য, নির্মম, পাষন্ড হত্যাকারীরা কোন ধরনের মানবিক আবেদনের লেশমাত্র সুযোগও রাখেন না। জাতি প্রত্যেক খুনীর রায় কার্যকরের প্রতীক্ষায়।
×