ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিটিআরসি পদক্ষেপ নিচ্ছে

গুজব রোধে ৫০ সোশ্যাল মিডিয়া এ্যাকাউন্ট বন্ধের সুপারিশ

প্রকাশিত: ১১:১৫, ৯ এপ্রিল ২০২০

গুজব রোধে ৫০ সোশ্যাল মিডিয়া এ্যাকাউন্ট বন্ধের সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা চালাচ্ছে। গুজব ছড়ানোর দায়ে ৫০ সোশ্যাল মিডিয়া এ্যাকাউন্ট বন্ধ করার জন্য বিটিআরসির কাছে অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দেয়া তালিকা অনুযায়ী বিটিআরসি সোশ্যাল মিডিয়ার সাইটগুলো বন্ধ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত আরও ৮২ সোশ্যাল মিডিয়া এ্যাকাউন্ট চিহ্নিত হয়েছে। ১৫০টি পেজ ও সাইটের ওপর পুলিশ নজর রাখছে। পুলিশ এসব মিডিয়ার আইডি খুঁজে বের করার কাজ করে যাচ্ছে। তাদের আইডি খুঁজে পেলেও এগুলো বন্ধ করার জন্য তালিকা দেয়া হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তাদের খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে। গত দুই সপ্তাহে সারাদেশে গুজব ছড়ানো ২০ ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের নাম। এমন শিরোনাম দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের পোস্ট পড়ে সমাজের মানুষ চরমভাবে ভীতিতে দিন কাটাচ্ছেন। চারদিকে আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ ধরনের ৫০টি আইডির বিস্তারিত তথ্য পুলিশ অনুসন্ধান করে বের করেছে। এই ৫০টি আইডির সব তথ্য বিটিআরসির কাছে দিয়েছে পুলিশ। এমনিতেই সারাদেশের মানুষ করোনা আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে এ ধরনের পোস্ট সমাজে আরও আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই সময়েও সক্রিয় হয়ে উঠেছে গুজবকারী চক্র। সরকারবিরোধী- দেশবিরোধী চক্রটি তাদের রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য এসব পোস্ট দিচ্ছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে, ইমুসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব বন্ধে তৎপর পুলিশ। যে সব ফেসবুক আইডি, ইউটিউব চ্যানেল, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে এমন ৮২ জনকে খুঁজছে পুলিশ। ৫০টি ফেসবুক পেজ, সেই সঙ্গে ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করতে ইতোমধ্যে বিটিআরসিকে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। চিঠি পেয়ে বিটিআরসি আইডিগুলো বন্ধ করার কাজ শুরু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে গত দুই সপ্তাহে ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। করোনাভাইরাস আতঙ্কে আছে সব শ্রেণীর মানুষ। এর মধ্য অসাধুচক্র ফেসবুক পেজে ইউটিউব, ইমুতে গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের গ্রেফতার করতে মাঠে নেমেছে সাইবার সিকিউরিটি ক্রাইম ইউনিট। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এক ডাক্তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, করোনা কিন্তু খুব বাজেভাবে ছড়াচ্ছে, সরকার ইনফরমেশন হাইড করছে। আমি জানি না। এমন গুজবকারীকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। পাবনায় আরেক গুজবকারী ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, থানকুনি পাতা, চা পান, আদা অথবা রসুন দিয়ে গরম পানি খেলে করোনা থেকে মুক্তি মিলবে। এমন গুজবকারীকে গ্রেফতার করা হয়। এসব গুজবে কান না দিয়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে অবস্থান করার অনুরোধ জানিয়েছে সরকার। বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে সশস্রবাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে। যাতে করোনাভারাইস থেকে মানুষ মুক্ত থাকতে পারেন। ফেসবুকে নানা ধরনের টোটকা চিকিৎসার কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, করোনা নিয়ে নানা রকমের গুজব ছড়ানো হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। একটি চক্র করোনাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে। নানা ধরনের মিথ্যাচার ও গুজব রটিয়ে সাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। এটা প্রতিরোধে পুলিশের সাইবার টিম কাজ করছে। চক্রের সদস্য সোশ্যাল মিডিয়া, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে গুজব ছড়াচ্ছে। বেশ কয়েক দিন ধরে পুলিশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজর রাখতে প্রথমেই তারা ৫০টি আইডির সন্ধান পায়। এরপর আরও ৮২টি আইডি থেকেও একই কাজ করা হচ্ছে বলে তারা মনিটর করে পেয়েছেন। এর বাইরে ১৫০টি আইডিকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া চেষ্টা চলছে। পুলিশের অনুরোধে বিটিআরসির মাধ্যমে রাজধানীসহ সারাদেশে ৫০টি ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দেয়ার কার্যক্রম চলছে। এসব আইডির মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই সাইটগুলোর একান্ত এডমিনের দায়িত্ব যারা রয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কেউ যেন করোনাভাইরাস নিয়ে কোন ধরনের মিথ্যা তথ্য প্রচার না করেন। এরপরেও এ ধরনের পোস্ট পাওয়া যাচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, এ ধরনের তথ্য সত্যতার জন্য ৯৯৯‘র সহযোগিতা নিন। নিকটস্থ থানায় যে কোন পুলিশের সহযোগিতা নেয়া যাবে। থানা পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে। পুলিশের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে এসব অপপ্রচার না করতে। এরপরও গুজব বন্ধ হয়নি। যারা গুজব ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন, তাদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক যোগাযোগমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেন, চারদিকে যাতে গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। দেশের সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে এক শ্রেণীর মতলববাজ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জনগণ যাতে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়, সে জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচী নিতে দলের নেতাকর্মীদের সর্বদা সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। এই সঙ্কট সন্ধিক্ষণেও একটি মহল সক্রিয় গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে চরিত্র হনন ফেসবুকে অপপ্রচার করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার অশুভ পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে। এই মহলটি দেশের সঙ্কটেও অসভ্য খেলায় মেতে উঠেছে। পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহে ৪০টি সাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নজরদারিতে ১৫০টি আইডি আছে। গুজব ছড়াচ্ছে অযথা মিথ্য তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। সরকারকে বিপদে ফেলতে তথ্য বিশ্ব জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। তারা অনলাইনের বড় ভাইরাস। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাতজনকে সাইবার ক্রাইম ইউনিটে ডেকে সতর্ক করে তাদের পোস্ট সংশোধন করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অভিযানে সারাদেশ থেকে ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
×