ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আইজিপি বেনজীর, আব্দুল্লাহ মামুন র‌্যাব ডিজি

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৯ এপ্রিল ২০২০

আইজিপি বেনজীর, আব্দুল্লাহ মামুন র‌্যাব ডিজি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ পুলিশের নতুন আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পেলেন র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা ড. বেনজীর আহমেদ। আর র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেলেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ও সিআইডির প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ মামুন। এদিকে বিদায়ী পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিদায় বেলায় সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখার প্রজ্ঞাপন মোতাবেক ড. বেনজীর আহমেদকে পুলিশের আইজিপি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। চলতি বছরের আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। এতে করে তিনি বর্তমান ইন্সপেক্টর জেনারেল বাংলাদেশ পুলিশ ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) এর স্থলাভিষিক্ত হবেন। সপ্তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ক্যাডার হিসেবে যোগ দিয়ে কর্মজীবনের শুরু থেকেই পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধি নিয়ে কাজ করেছেন বেনজীর আহমেদ। বাংলাদেশ পুলিশে বেনজীর আহমেদ একজন দক্ষ, পেশাদার, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনষ্ক পুলিশ অফিসার হিসেবে পরিচিত। চাকরি জীবনে র‌্যাবের মহাপরিচালক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার, পুলিশ সদর দফতরে ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) ও ডিআইজি (ফিন্যান্স এ্যান্ড বাজেট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এছাড়া বেনজীর আহমেদ পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিএমপি কমিশনার হিসেবে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন অত্যন্ত সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেন। এছাড়াও তিনি ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের অগ্নি ও বোমা সন্ত্রাস পেশাদারিত্বের সঙ্গে দমন করেন। বিশেষ করে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাস ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ অগ্নিসন্ত্রাস, বোমা সন্ত্রাস ও পুলিশকে টার্গেট করে আক্রমণ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে দমন করেন। নগরবাসীর জন্য ফরমালিনমুক্ত খাদ্যদ্রব্য নিশ্চিতের লক্ষে ভেজালবিরোধী আন্দোলন শুরু করে তিনি সফলতা পান। পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) হিসেবে তিনি প্রথম পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কাঠামোগত সংস্কার শুরু করেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বর্তমান পুলিশ ইন্টার্নাল ওভারসাইট (পিআইও) ইউনিটটি তার হাত ধরেই যাত্রা শুরু করে। পিআইও ইউনিট সৃষ্টির পর পুলিশ সদস্যদের বেশিরভাগ কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের আওতায় এসেছে। ফলে পুলিশের সামগ্রিক কাজে অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক কার্যক্রমে গতি আসে, যা পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ২০১০-২০১৫ মেয়াদে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেনজীর আহমেদ। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি ডিএমপিতে ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কার শুরু করেন। তিনি ডিএমপির প্রায় সবক্ষেত্রেই ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া সূচনা ও সম্পন্ন করেন। তন্মধ্যে ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন সিস্টেম, পে-রোল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার সিস্টেম, রেশন স্টোর সফটওয়্যার সিস্টেম, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, সাসপেক্ট আইডেন্টিফিকেশন এ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও এ সময়ে ডিএমপির অবকাঠামো উন্নয়নে এক নতুন যুগের সূত্রপাত হয়। মিরপুর পিওএমের সামগ্রিক আধুনিকায়ন, ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ, রাজারবাগের প্রশাসনিক ভবন সম্প্রসারণ, আধুনিক মিডিয়া সেন্টার স্থাপন, মোবাইল কমান্ড সেন্টার, মোবাইল ওয়াচ টাওয়ার, ডগ স্কোয়াড ও আটটি নতুন থানা স্থাপন অন্যতম। তিনিই প্রথম সরকারী কোন অফিসে মিডিয়া সেন্টার স্থাপনের নজির স্থাপন করেন। জনগণকে পুলিশী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার লক্ষে তিনি প্রথম মহানগরীতে বিট পুলিশিং ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। এছাড়াও জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য তিনি চালু করেন ডিএমপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ডিএমপি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ডিএমপির অফিসিয়াল ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল। নগরবাসী ডিএমপির এসব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এখন তাদের হাতের মুঠোয় পাচ্ছেন প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্বপালন করে তিনি সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত করেন। যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বহু বছরের আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত ছিল। নারায়ণগঞ্জ জেলার সাত হত্যা মামলাসহ কতিপয় ঘটনায় যখন র‌্যাবের ভূমিকা ও ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ তখন তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে সেই নাজুক পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। তিনি সদস্যদের মনোবল চাঙ্গা করার পাশাপাশি জনসম্মুখে র‌্যাবের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলা মোকাবেলায় তিনি অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা রাখেন। তিনিই প্রথম মিডিয়াতে কৌশলী ও সাহসী বক্তব্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানান। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মিডিয়া তাদের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে। যা পরবর্তী সময়ে অপারেশন পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনতে তিনি কার্যকর ও যুগোপযোগী ভূমিকা পালন করেন। ফলে বর্তমানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তার নেতৃত্বে মাদকবিরোধী অভিযানে র‌্যাব সফলতা অর্জন করেছে। র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক বড় বড় মাদকব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে, আবার অনেকে অভিযানের সময় গুলি বিনিময়ে নিহত হয়েছেন। বেনজীর আহমেদ জাতিসংঘ শান্তিকরক্ষা মিশনেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত ¡পালন করেছেন। উপমহাদেশে তিনিই প্রথম নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশন্সের অধীন মিশন ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড সাপোর্ট সেকশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি কসোভো মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত জীবন ॥ বেনজীর আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি এলএলবি ও এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টি থেকে ডক্টর অব বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ একাডেমিতে পেশাগত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে তিনি রেক্টরস মেডেল অর্জন করেন। এছাড়াও চাকরি জীবনে তিনি বিভিন্ন সময়ে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রেকর্ডসংখ্যক সর্বোচ্চ ছয়বার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) অর্জন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের তিনবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ১৯৬৩ সালে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিন কন্যা সন্তানের জনক। এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ও সিআইডির প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মামুন ৮ম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরাসরি সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। এদিকে গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিদায়ী আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। বুধবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বহুমাত্রিক উদ্ভাবনী উপায়ে নির্ভীকভাবে নাগরিকদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারী নির্দেশনার সঙ্গে সমন্বয় রেখে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স কর্তৃক প্রণীত সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি বৈশ্বিক এ সঙ্কট মোকাবেলায় পুলিশের নানাবিধ উদ্যোগ সম্মানিত নাগরিকদের আশান্বিত করেছে, বাড়িয়েছে তাদের মনোবল। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী এ সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশের ইতিবাচক কার্যক্রমসমূহ ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমে প্রচারে সহযাত্রী হয়েছে মিডিয়া হাউজগুলো, একান্তক সহযোগী হিসেবে পাশে ছিলেন নিবেদিত প্রাণ অকৃত্রিম বন্ধু, একান্ত সুহৃদ সাংবাদিকরা। তাদের সার্বিক কর্মকুশলতার ফলেই সম্ভব হয়েছে করোনা সংক্রান্ত গুজব মোকাবেলা। একইসঙ্গে অনুপ্রাণীত ও উদ্দীপ্ত হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা, যারা প্রতিনিয়ত জনগণের পাশে থেকে তাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করছেন। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, করোনা সংক্রমণের এই দুর্যোগে বাংলাদেশ পুলিশের পাশে থেকে জনসেবায় সহযোগিতা করার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সব মিডিয়ার সাংবাদিক ও কলাকুশলী বন্ধুদের। বাংলাদেশ পুলিশ এও আশা করে, শুধু করোনাভাইরাস নয়, দেশের যেকোন প্রয়োজনে, কল্যাণ ও সঙ্কটে পারস্পরিক এ সহযোগিতা আগামীতেও অবারিত থাকবে। দেশমাতৃকার কল্যাণে সম্মানিত নাগরিকদের পাশে সর্বদাই রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
×