ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘সাহায্যের নামে আত্মপ্রচারকে ধিক্কার জানাই’

করোনা প্রসঙ্গে বললেন এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত

প্রকাশিত: ০৯:২১, ৯ এপ্রিল ২০২০

করোনা প্রসঙ্গে বললেন এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত

রুমেল খান ॥ ‘খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগের বাসায় আছি। এখন মিরপুরের ফ্ল্যাটে যাওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণটা নিশ্চয়ই জানেন। ঢাকার মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে মিরপুরেই। তাছাড়া মিরপুর থেকে এনএসসিতে অনুশীলনের জন্য আসতে ভয়াবহ জ্যামের বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। তবে মেট্রোরেল চালু হলে এবং করোনা-পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই মিরপুরের ফ্ল্যাটে চলে যাব।’ কথাগুলো মাবিয়া আক্তার সীমান্তর। ২০১৬ ও ২০১৯ এসএ গেমসে মেয়েদের ভারোত্তোলনে স্বর্ণপদক জিতে ইতিহাস গড়েছেন। শূটার কাজী শাহানা পারভীনের পর বাংলাদেশের নারী এ্যাথলেটদের মধ্যে এসএ গেমসের টানা দুই আসরে স্বর্ণজয়ের কৃতিত্ব সীমান্তর। বাবা খিলগাঁওয়ে মুদির দোকানি। চালাতেন সিএনজি অটোরিক্সাও। আর্থিক প্রতিকূলতায় একসময় বন্ধ হয়ে যায় সীমান্তর লেখাপড়া। মামা বক্সিং কোচ শাহাদাত কাজী জোর করেই ভাগ্নিকে ভারোত্তোলন অনুশীলন করাতে শুরু করেন। সেই ভারোত্তোলন পাল্টে দিয়েছে সীমান্তর জীবন। সেই খেলার কারণেই আজ তারকাখ্যাতি পেয়েছেন তিনি। গত জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ট্রেনিংয়ের মধ্যেই ছিলেন সীমান্ত। কিন্তু তারপর তো দেশের খেলাধুলাই বন্ধ হয়ে গেল। বাসায় থেকে অবশ্য ইয়োগা করে ফিটনেস ধরে রাখতে পারতেন, কিন্তু দেশের যা অবস্থা, তাতে ওসব করার মানসিকতা নেই তার। তাছাড়া অনুশীলন করার জন্য তার বাসায় পর্যাপ্ত জায়গাও নেই। বাসায় একেবারেই গৃহবন্দী সীমান্ত। গত সোমবার অবশ্য টাকা উঠাতে ব্যাংকে গিয়েছিলেন। তখন অবশ্যই মাস্ক পরেছিলেন। এছাড়া বাসায় ২০ মিনিট পর পর নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছেন, সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকছেন। প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাধ্যমেই দেশে করোনা ছড়িয়েছে উল্লেখ করে সীমান্ত বলেন, ‘তারা দেশে ফিরে যা করেছেন, তা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। দশ বছর ধরে বিদেশে যদি থাকতে পারেন, তাহলে তারা দেশে ফিরে মাত্র ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারেন না? এটা তো রীতিমতো বোকামি! এতে তারা দেশের ও মানুষের চরম ক্ষতি করেছেন। আসলে আমরা অতি আবেগী জাতি, তাই এই সমস্যা!’ করোনা থেকে রক্ষা পেতে ভারতে ও বাংলাদেশে অনেকেই যথাক্রমে গোমূত্র ও থানকুনি পাতা খাচ্ছেন, ‘ওসব পাতা খাই না। তবে ছোটবেলায় খেয়েছি, তাতে শরীর ভাল থাকে। তবে এর সঙ্গে করোনার কোন সম্পর্ক নেই। অঘোষিত লকডাউনে খাদ্যসঙ্কটে পড়া নি¤œ আয়ের দরিদ্রদের সাহায্য করার নামে যারা ছবি তুলে ফটোসেশন ও ভিডিও করেন, তাদের এমন আত্মপ্রচারকে ধিক্কার জানান সীমান্ত, ‘এতে অসহায়দের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণœ হয়। সাহায্য করা উচিত গোপনে। সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের অসহায়দের জন্য এগিয়ে আসা উচিত। আমিও গরিব-অসহায়দের পাশে আছি। কেননা আমিও একসময় গরিব ছিলাম, ফলে তাদের কষ্টটা বুঝি!’ করোনা-সন্দেহে হাসপাতালে গেলে ডাক্তারদের চিকিৎসা দিতে অস্বীকার ও করোনার হাসপাতাল নির্মাণে বাধা দেয়া প্রসঙ্গে সীমান্তর ভাষ্য, ‘এটা আমাদের মানসিক সমস্যা। ভালো কাজে বাধা দেয়া খুবই দুঃখজনক।’ দশ দিনের ছুটি পেয়ে অসংখ্য মানুষের গ্রামে চলে যাওয়া প্রসঙ্গে সীমান্তর প্রতিক্রিয়া, ‘এটা মোটেও যুক্তিযুক্ত কাজ হয়নি। কারণ এটা ঈদের ছুটি নয়। তাদের বাসায় থাকতে এই ছুটি দেয়া হয়েছিল। গ্রামে যাবার জন্য নয়। গ্রামে যাওয়াতে এখন করোনায় আক্রান্তর ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে গেল। আসলে আমরাও শিক্ষিত বলদ!’ সোশ্যাল মিডিয়ায়, মুভি দেখে, রান্নাবান্না করে ও পরিবারের সাথে গল্প করে সময় কাটাচ্ছেন সীমান্ত। সাত বছর পরে পরিবারের সঙ্গে এতটা সময় কাটাতে পারছেন তিনি।
×