ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রোগীদের চিকিৎসা না পাওয়ার খবরে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ

কঠিন সময়ে চিকিৎসক মানবতা বোধ হারাবেন কেন?

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ৮ এপ্রিল ২০২০

কঠিন সময়ে চিকিৎসক মানবতা বোধ হারাবেন কেন?

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশে চলমান করোনাভাইরাস জনিত দুঃসময়ে মানবিকতা ছেড়ে দূরে সরে থাকা চিকিৎসকদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কঠিন এ সময়ে যেসব চিকিৎসক প্রত্যক্ষভাবে জনগণের সেবা নিশ্চিতে এগিয়ে আসেননি তাদের আচরণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়া চিকিৎসকদের দায়িত্ব। সেই চিকিৎসকরা মানবতাবোধ হারাবে কেন? যেসব চিকিৎসক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না, ভবিষ্যতে তারা ডাক্তারী করতে পারবে কি না, সেটাও চিন্তা করতে হবে। বাস্তবে এদের ডাক্তারী ও চাকরি করার মতো সক্ষমতা নেই। মঙ্গলবার গণভবন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৩ জেলার জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সংসদ সদস্য, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, চিকিৎসক, নার্সসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময়কালে অনেক হাসপাতাল থেকে রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত আসার সংবাদে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর এই মতবিনিময় অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ (চিকিৎসক) যদি মনে করেন, আমাদেরকে শর্ত দেন যে, আমাদেরকে সেটা (প্রণোদনা) দিলে আমরা আসব। আমি বলব যে, সেটা (প্রণোদনা) নিতে হলে আগামীতে কীভাবে কাজ করেন, এই দুঃসময় যারা চিকিৎসাসেবা দেবে তা আমরা পর্যবেক্ষণে রাখব। অন্তত এই তিন মাস তাদের কাজ দেখব। সেখানে দেখব কেউ সত্যিকারভাবে মানুষের সেবা দেন কি না। তারপরে তাদের কথা আমরা চিন্তা করব। কিন্তু শর্ত দিয়ে কাউকে আমি কাজে আনব না। যদি বাংলাদেশে এমন দুর্দিন আসে, প্রয়োজনে আমরা বাইরে থেকে ডাক্তার নিয়ে আসব, বাইরে থেকে নার্স নিয়ে আসব। কিন্তু এই ধরনের দুর্বল মানসিকতাদের (চিকিৎসক) দিয়ে আমাদের কাজ হবে না, এটাই হলো বাস্তবতা। বিভিন্ন হাসপাতালে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না, এমন খবর পাওয়ার কথা তুলে তিনি বলেন, যেসব চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন না, ভবিষ্যতে তারা চাকরি করতে পারবেন কি না, তা ভেবে দেখা হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুমন চাকমা নামের এক ছাত্রের কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি হতে না পেরে বাড়িতে মারা যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র কেন মারা যাবে? এই রোগী যখন যেখানে (হাসপাতাল) যেখানে গিয়েছে, সেখানে কোন কোন ডাক্তারের দায়িত্ব ছিল, আমি তাদের নামটাও জানতে চাই। তাদের ডাক্তারী করবার মতো বা চাকরি করার মতো সক্ষমতা নেই। তাদের বের করে দেয়া উচিত চাকরি থেকে, এটা আমি মনে করি। দুঃসময়ে কাজ না করা চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (চিকিৎসক) এখন যতই মিটিং করুক, শর্ত দিক, ওই শর্ত আমার কিছু আসে যায় না। বরং ভবিষ্যতে তারা ডাক্তারী করতে পারবে কি না সেটাই চিন্তা করতে হবে। ডাক্তার আমাদের প্রয়োজন আছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই মানসিকতা থাকবে কেন? মানবতাবোধ হারাবে কেন? তিনি বলেন, একজন রোগী আসলে তার চিকিৎসা করতে হবে। তার জন্য নিজেকে সুরক্ষিত করা যায়। এপ্রোন পরে নেন, মুখে মাস্ক লাগান, হাতে গ্লাভস দেন, অথবা স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন, হাত ধুয়ে ফেলুন, রোগী দেখেন। রোগী কেন ফেরত যাবে? আর একজন রোগী দৌড়াদৌড়ি করে, ঘুরে সেই রোগী কেন মারা যাবে? সারাবিশ্বে নোভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়ানোর প্রাসঙ্গিকতা স্বীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই ভয় পাবে, এটা মানি আমি। কিন্তু একজন ডাক্তার, তার একটা দায়িত্ব থাকে। আর তাদের সুরক্ষার জন্য যা যা দরকার আমরা তো দিয়ে যাচ্ছি, ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। লাগলে আমরা আরও করব, সেখানে তো আমরা কোন কার্পণ্য করছি না। আমরা দেশে তৈরি করছি (সুরক্ষা উপকরণ), বিদেশ থেকে নিয়ে আসছি। যত রকম, যা দরকার, আমরা সব রকম চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারণ এটা বিশ্বব্যাপী সমস্যা।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ চলছে, তার সম্মুখভাগে থেকে সরকারী বেশিরভাগ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছেন। আমাদের সরকারী চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, যারা করোনা সেবায় অবদান রেখেছেন, তাদের সকলকে আমি আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কারণ আমি দেখেছি, সরকারী হাসপাতালগুলোতে যারা কাজ করেন, তারাই কিন্তু এখানে এগিয়ে এসেছেন এবং তারা কোন গাফিলতি করেননি, নিজেদের ঝুঁকি জেনেও তারা কাজ করে চলেছেন।
×