ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গাড়ি নেই, ফাঁকা সড়ক, ভুতুড়ে নগরী

কঠোর পদক্ষেপে ঘরে ফিরেছে মানুষ

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ৮ এপ্রিল ২০২০

কঠোর পদক্ষেপে ঘরে ফিরেছে মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লোকসমাগম ও যানবাহন কমেছে নগরীর রাস্তায়। দু’একটি রিক্সা ছাড়া সাধারণ মানুষের চলাচলের কোন বাহন আর পথে নেই। শহরজুড়ে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর চারটি প্রবেশদ্বারে চলছে রাতদিনের তল্লাশি। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাজধানীতে প্রবেশ বা বের হতে পারছেন না। কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হলেই করা হচ্ছে জরিমানা। বেড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিও। করোনা প্রতিরোধে মহল্লায় মহল্লায় চলছে ঘরে থাকার মাইকিং। সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে রাজধানীর কাঁচাবাজার ও সুপার শপসহ সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে ওষুধের দোকানসহ জরুরী সার্ভিসগুলো এ নির্দেশনার আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায় অবস্থিত নিত্যপণ্যের দোকানগুলো সকাল ছয়টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সোমবার পুলিশের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা জারির পর থেকেই তা বেশ জোরেশোরেই কার্যকর শুরু হয়েছে। যার প্রভাব বোঝা গেছে মঙ্গলবার দিনভর। পুলিশের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা জারির পর থেকেই সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনা প্রতিরোধে জরুরী অবস্থা, কার্ফুও অথবা দেশজুড়ে আনুষ্ঠানিক লকডাউনের গুজব ছড়িয়ে যায়। বিশে^র বিভিন্ন দেশ করোনা ঠেকাতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই গুজব একেবারেই উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। অনেকে তা বিশ^াসও করেছিলেন। তার প্রভাব দেখা গেছে সকালে বিভিন্ন কাঁচা বাজারে। অনুমোদনহীন কাঁচাবাজার ইতোমধ্যে বন্ধ করেছে পুলিশ। অন্যান্য বাজারে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভিড়। যে যার সাধ্যমতো পর্যাপ্ত নিত্যপণ্য কিনতে দেখা গেছে। কোন কোন বাজারে বিলম্বে গিয়ে কেউ কেউ মাছ, ডাল না পেলে খলি হাতে বাড়ি ফিরেছেন। দোকানে দোকানে ঘুরে স্যানিটাইজার, সিভিট, ডেটল, স্যাভলনও মেলাতে পারেননি অনেকে। করোনা প্রতিরোধে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। তিন দফা ছুটি বাড়িয়ে এখন ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। ছুটি দেয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্ধ গণপরিবহন। এই প্রেক্ষাপটে সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু সরকারের এই নির্দেশ যথাযথ কার্যকর হচ্ছিল না। ঢাকার রাস্তায় যানবাহন ও সাধারণ মানুষের অকারণে ঘোরাফেরা যথেষ্ট বেড়েছিল। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল করোনা রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যাও। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও বারবার বলা হচ্ছে, প্রাণঘাতী এই ভাইরাস মোকাবেলার একমাত্র পথ হলো ঘরে থাকা। যে দেশের মানুষ এ নির্দেশ পালন করছে সেখানে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসছে। প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে ডব্লিউএইচওর পক্ষ থেকে। মঙ্গলবার সরকারের নির্দেশ মতো রাজধানীর বাজার ও অলিগলির দোকানপাট বন্ধ করে দেয় পুলিশ। দুপুর ২টার পরই এসব বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যদের এ সময় মোটরসাইকেলে দোকান বন্ধের নির্দেশ দিতে দেখা যায়। এছাড়া গলির মোড়ের সবজি, ফল ও অন্য ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। দোকানিরা জানিয়েছেন দুইটার আগেই বন্ধের নির্দেশ দিয়ে গেছে। টহলরত পুলিশ সদস্যরা বলছেন, গলির মোড়গুলোতেই বেশি আড্ডা হয়। তাই এগুলোই বন্ধে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। রাজধানীর বাসাবো, আহাম্মদবাগ, সিপাহীবাগ, মালিবাগ, মগবাজার, ইস্কাটন, ফার্মগেট, কাকরাইল, নয়াটোলা, মানিকনগর, মুগদা, শাহজাদপুর, নতুন বাজার, বাড্ডা, কুড়িলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়। মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে খিলগাঁও বাজারে দিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ দোকান বন্ধের তোড়জোড় চলছে। আশপাশের এলাকা থেকে টহল দিয়ে ফিরছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অনেক দোকানে ক্রেতার ভিড় থাকায় দ্রুত পণ্য দিয়ে বিদায় করছেন। অনেক সবজির দোকান বন্ধ হয়ে গেছে আগেই। কিছু খোলা থাকলেও তা বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। দুইটার পর মুগদা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দোকানপাট বন্ধ। ভ্রাম্যমাণ সবজির দোকানগুলো পুলিশের ভয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। মগবাজার রেলগেট সংলগ্ন বাজারে বিকেল তিনটায় গিয়ে দেখা গেছে, রীতিমতো ভীতিকর পরিবেশ। কেউ নেই। সুনসান নীরব পুরো বাজার।
×