ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারে আশা জাগানিয়া খবর

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ৮ এপ্রিল ২০২০

করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারে আশা জাগানিয়া খবর

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বিশ্বের ২০৫টির বেশি দেশ এখন প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ থাবার শিকার। এই প্রেক্ষাপটে গোটা দুনিয়া এখন প্রতিষেধক আবিষ্কারের দিকে। চলছে রাতদিন গবেষণার কাজ। আসছে নতুন নতুন খবর। ৭০টির বেশি দেশ টিকা তৈরির কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। প্রায় ৪০টি ওষুধ নিয়ে চলছে ল্যাবে ল্যাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ। করোনায় আক্রান্ত মানুষ কিংবা প্রাণীদেহে ইতোমধ্যে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। অস্ট্র্রেলিয়া, চীন, আমেরিকাসহ শক্তিধর দেশগুলো রীতিমতো ভাল খবরের জন্য মরিয়া। করোনার ভয়ে থরথর করে কাপতে থাকা সময়েও ওষুধের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রীতিমতো ভারতকে হুমকি দিয়েছেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনা ধ্বংস অস্ট্রেলিয়ান গবেষক দলের এমন চমক লাগা খবরে গোটা দুনিয়াজুড়ে রীতিমতো হইচই চলছে। প্রতিদিন বিশ্বের সামনে হাজির হচ্ছে প্রতিষেধক আবিষ্কারের আশাজাগানিয়া অনেক খবরই। তবে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত প্রতিষেধক আবিষ্কারের খবরটি তৈরি হয়নি। তবে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। যে কোন সময় মিলবে সুখবর। ৪৮ ঘণ্টায় করোনা ধ্বংস ॥ নোভেল করোনা আতঙ্কে বিশ্ব পরিস্থিতি যখন একেবারেই টালমাটাল ঠিক তখন অনেকটা আশার খবর নিয়ে হাজির হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক। দলটি বলছে, তাদের গবেষণায় আবিষ্কার করা ওষুধে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনা ধ্বংস হবে ! আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরে বলা হয়েছে, উকুন মারার ওষুধ কাজে লাগিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনার জীবাণু ধ্বংস করা যাচ্ছে। অবিশ্বাস্য হলেও এমনই দাবি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের একদল গবেষক। প্রতিষেধক তৈরির জন্য দিনরাত এক করে কাজ করছেন বহু দেশের গবেষকরা। তবে এরইমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের এমন দাবি ঘিরে হইচই পড়েছে গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে। মানুষের মাথার উকুন মারার ওষুধ দিয়েই নাকি করোনাভাইরাস ঠেকানো সম্ভব হবে ! আর সেই বিজ্ঞানীরা সেটা পরীক্ষা করেও দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উকুন মারার ওষুধের ব্যবহারে করোনার জীবাণু মেরে ফেলা সম্ভব হচ্ছে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায়। আইভারমেক্টিন। বহু বছর ধরেই এ্যান্টি প্যারাসিটিক এই ওষুধ উকুন মারার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ওষুধের উচ্চমাত্রার ব্যবহার মানুষের কোষে বাড়তে থাকা করোনাভাইরাসের বৃদ্ধি থামাতে পারে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। তবে এই ওষুধ মানুষের শরীরে বাসা বাঁধা করোনার ওপর পুরো মাত্রায় কার্যকর কিনা এবং কতটা পরিমাণ প্রয়োগ নিরাপদ, তা এখনও গবেষকেরা নির্ণয় করতে পারেননি। সঠিকভাবে প্রয়োগ ও পরিমাণ নির্ধারণ করা নিয়ে এখনও বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করবেন বলে তারা জানিয়েছেন। মোনাশ বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইনস্টিটিউট ও পিটার দোর্টি ইনস্টিটিউট অব ইনফেকশন এ্যান্ড ইমিউনিটিড়র গবেষকরা যৌথভাবে এই গবেষণা চালাচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় রয়েছে আইভারমেক্টিন। এখনও পর্যন্ত করোনা রোধে এই ওষুধের কার্যকারিতায় আশার আলো দেখছেন গবেষকরা। করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হতে এখনও সময় লাগবে। তার আগে এই মরণ ভাইরাসের বিস্তার আটকাতে আইভারমেক্টিন ব্যবহার করা যায় কি না সেটাই এখন পরীক্ষা করে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। এইচআইভি, ডেঙ্গু ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিরুদ্ধেও আইভারমেক্টিন কার্যকর বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা। আমেরিকার দ্বিতীয় ওষুধ ॥ ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া হল পেনসিলভেনিয়ার ছোট্ট একটি বায়োটেক সংস্থাকে। তাদের তৈরি করোনার প্রতিষেধক তারা পরীক্ষামূলকভাবে দিতে পারবেন স্বেচ্ছাসেবক রোগীর শরীরে। তারপর সেটি সফল হলে পরবর্তীতে এটি ব্যবহার করা হবে করোনা মোকাবেলায়। আগামী সোমবার প্রথম কোন মানুষের শরীরে এই প্রতিষেধক প্রয়োগ করে দেখা হবে বলা জানিয়েছে একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম। এই প্রতিষেধকটি তৈরি করেছে ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালস নামে একটি ছোট্ট সংস্থা। আর সংস্থার এই কাজে আর্থিক সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। এই প্রতিষেধকের নাম দেয়া হয়েছে আইএনও-৪৮০০। আমেরিকায় এই নিয়ে দ্বিতীয় একটি সম্ভাব্য প্রতিষেধক এটি, যেটি ব্যবহার করা হবে মানুষের শরীরের ওপরে। এর আগে, মার্চ মাসে ম্যাসাচুটেসসের একটি সংস্থা পরীক্ষামূলকভাবে এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু করেছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কম করে এক বছর লাগবে এই ওষুধগুলো মানুষের শরীরে কেমন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে, সেটি বুঝে দেখার জন্য। মানুষের জন্য আদৌ সেগুলো যথেষ্ট নিরাপদ কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে এই সময়ের মধ্যেই। দুই ওষুধের নাম প্রকাশ ট্রাম্পের ॥ বিশ্ব জোড়া করোনা সংক্রমণের ফলে এখন প্রতিটি দেশ রোগের প্রতিষেধক খুঁজে চলেছে। দিবারাত্র কাজ করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। সামান্য আশার আলো দেখা দিলেও প্রতিষেধক বাজারে আসতে এখনও অনেকটা সময় লাগবে। তাই দ্রুত প্রাথমিক কাজ সেরে ফেলতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় সম্ভাব্য দুটি ওষুধের নাম উল্লেখ করেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প ক্লোরোকুইন ও রিমাদেসিভির নামের দুটি পুরনো ওষুধের কথা জানান। তবে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ সংস্থা (এফডিএ) বলছে, বড় ধরনের পরীক্ষার আগে এ নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। ট্রাম্প ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত পুরনো একটি ওষুধ ক্লোরোকুইন-এর নাম উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এটি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাথমিক পর্যায়ে ভাল ফলাফল দিয়েছে। আমরা প্রেসক্রিপশন দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ওষুধটি সরবরাহ করতে পারব। ইবোলা ও মারবার্গ ভাইরাল সংক্রমণের জন্য চিকিৎসায় ব্যবহৃত রিমাদেসিভিরও করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানান ট্রাম্প। তবে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ সংস্থা (এফডিএ) এখনই কোন উপসংহার টানতে নারাজ। আর মানুষ ও দেশকে রক্ষা করতে ক্লোরোকুইন চেয়ে ভারতকে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় হালে পানি পাচ্ছেন না বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। এহেন পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপ রুখতে ওষুধ চেয়ে ভারতকে কার্যত হুমকি দিয়েছেন তিনি। কূটনীতির দফারফা করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাফ বলছেন যে, আমেরিকাকে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ না দিলে আমেরিকা পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তিনি (নরেন্দ্র মোদি) এই ওষুধ সরবরাহ না করলে আমি আশ্চর্য হব। আপনারা জানেন আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুবই ভাল। এ নিয়ে রবিবার মোদির সঙ্গে ফোনে আমার কথাও হয়েছে। আমি তার কাছে ওষুধ রফতানি করার আরজিও জানিয়েছি। তবে মোদি যদি ওষুধ না দেন তাহলে আমরাও পাল্টা পদক্ষেপ নেব। মারণ এই ভাইরাসের দাওয়াইয়ের হদিশ এখনও মেলেনি। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যবহার হচ্ছে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন। সেই দাওয়াই বিপুল পরিমাণে রফতানি করে ভারত। কিন্তু করোনার জেরে আপাতত বিদেশে রফতানি বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র সরকার। তা ফের চালু করার আবেদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রবিবার রাতে দু’জনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথাও হয়। টুইট করে সে কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীই। এদিকে বাংলাদেশে পরীক্ষা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও। দেশে এক দিনেই ৪১ জনের মধ্যে নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে বেড়ে ১৬৪ হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, তাতে দেশে কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭ জন। এক মাস আগে দেশে প্রথমবারের মতো কারও দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ার পর একদিনে মৃত্যু ও আক্রান্তের এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে মোট ৩৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এদিকে বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৩ লাখের বেশি। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুই লাখ ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ। মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার।
×