ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দূতাবাসে চাকরি ছাড়াও হয়েছিল সচিব

‘সাহসী’ ভূমিকার জন্য মাজেদকে পুরস্কৃত করেছিলেন জিয়া

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ৮ এপ্রিল ২০২০

‘সাহসী’ ভূমিকার জন্য মাজেদকে পুরস্কৃত করেছিলেন জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের খুনের ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। হত্যাকা-ের সময় লেফটেন্যান্ট থাকা আবদুল মাজেদ একজন জুনিয়র অফিসার হয়েও বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যায় অংশ নেয়ার ঘটনার নেপথ্য সাহস জুগিয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমান। তাই তো তাকে পুরস্কৃত করেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমান। দিয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ দূতাবাসে চাকরি। সচিবও করা হয়েছিল খুনী মাজেদকে। বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামির মধ্যে অন্যতম এই আবদুল মাজেদ। সে সরাসরি বঙ্গবন্ধু তার পরিবারকে হত্যায় অংশ নিয়েছিল। হত্যার মূল দায়িত্ব পালন করেছিল পলাতক কর্নেল শাহরিয়ার রশীদ ও মুসলেহউদ্দিন ও আবদুল মাজেদ। এই তিনজন সরাসরি হত্যায় অংশ নেয়। আবদুল মাজেদ জেলহত্যায়ও অংশ নিয়েছিল। এছাড়া সে শেখ রাসেল হত্যায়ও সরাসরি অংশ নিয়েছিল বলে জানা যায়। বঙ্গবন্ধুর এই খুনীর পিতার নাম মৃত আলী মিয়া চৌধুরী। মায়ের নাম মৃত মেহেরজান বেগম। বাড়ি ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন থানাধীন বাটামার গ্রামে। আবদুল মাজেদের স্ত্রী সালেহা বেগম। আবদুল মাজেদ চার কন্যা ও এক ছেলের পিতা। পরিবারটি ঢাকার মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের ১০/এ নম্বরের বাড়িতে বসবাস করে। ইতিহাসের জঘন্যতম কালো দিবস সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সময় ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে সরাসরি অংশ নিয়েছিল। হত্যাকাণ্ড শেষে মাজেদ বঙ্গবন্ধু হত্যার অপর আসামি মেজর শাহরিয়ার এবং হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সেনা সদস্যদের সঙ্গে রেডিও স্টেশনে দায়িত্ব পালন করে। এছাড়াও মাজেদ ক্যু করা অফিসারদের সঙ্গে বঙ্গভবনে দেশত্যাগ করার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে। হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাপ্টেন মাজেদকে পুরস্কার হিসেবে তৎকালীন সেনাপ্রধান সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমান সেনেগাল দূতাবাসে বদলির আদেশ দেন। ১৯৮০ সালের ২৬ মার্চ মাজেদকে বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি দেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এরপর সেখান থেকে মাজেদকে পদোন্নতি দিয়ে সচিব করা হয়। পরবর্তীতে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সাবেক ও তৎকালীন সেনাপ্রধান রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নির্দেশনায় মাজেদ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য অফিসারদের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে ব্যাঙ্কক হয়ে লিবিয়ায় চলে যায়। সেখানে মাজেদ ক্যু করা অফিসারদের সঙ্গে প্রায় তিন মাস বসবাস করে। ওই সময় তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ক্যু করা অফিসারদের হত্যাকাণ্ডের পুরস্কার স্বরূপ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে বৈদেশিক বদলি প্রদান করা হয়। তারই অংশ হিসেবে ক্যাপ্টেন মাজেদকে পুরস্কার হিসেবে সেনেগাল দূতাবাসে বদলির আদেশ দেয়া হয়। পরে ১৯৮০ সালের ২৬ মার্চ তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকার ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে বিআইডব্লিউটিতে চাকরি দেন। এবং উপসচিব পদে যোগদানের সুবিধার্থে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করে। পরে আবদুল মাজেদকে সচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। এরপর মাজেদকে মিনিস্ট্রি অব ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টের ডাইরেক্টর পদের জন্য আবেদন করতে বলে তৎকালীন জিয়াউর রহমানের সরকার। যথারীতি আবদুল মাজেদ আবেদন করে। ওকে সরকার নিয়োগ দেয়। মাজেদ পরিচালক পগে যোগ দেয়। এই পদ থেকেই মাজেদকে ডাইরেক্টর এ্যান্ড হেড অব ন্যাশনাল সেভিংস ডিপার্টমেন্টে বদলি করা হয়। হত্যাকা-ে অংশ নেয়ার সময় মাজেদ লেফটেন্যান্ট পদে কর্মরত ছিল। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা লাভের পর আবদুল মাজেদ আত্মগোপন করে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুনের পরদিন এই মাজেদ তোফায়েল আহমেদের এপিএসকে অত্যাচার করে মেরে বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়। লাশও পাওয়া যায়নি তার। পরে মাজেদ ও শাহরিয়ার মিলে তোফায়েল আহমেদকে আটক করে নির্যাতন করেছে বলে গণমাধ্যমে দাবি করেছেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব, সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, আবদুল মাজেদ গত ২৫ বছর ধরে ভারতে পালিয়ে ছিল। করোনাভাইরাস আতঙ্কে সেখান থেকে গত ২৬ মার্চ ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তিনি। দেশে ফেরার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ভারতের কলকাতায় আবদুল মাজেদ নিজেকে আবদুল মজিদ পরিচয় নিয়ে আত্মগোপনে ছিল। এর আগে তিনি লিবিয়া ও পাকিস্তানে আত্মগোপনে ছিল। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে আবদুল মাজেদ প্রথমে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে লিবিয়ায় যায়। সেখান থেকে পাকিস্তানে যায়। লিবিয়া ও পাকিস্তানে সুবিধা করতে না পেরে আবারও ভারতে ফিরে আসে। বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করার পর গত ৩/৪ বছর ধরে কলকাতায় অবস্থান করছিল মাজেদ।
×