ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

খুনী মাজেদের আদালতে আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণের সুযোগ নেই

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ৮ এপ্রিল ২০২০

খুনী মাজেদের আদালতে আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণের সুযোগ নেই

বিকাশ দত্ত ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারবর্গ হত্যাকা-ের দায়ে গ্রেফতারকৃত ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদের পক্ষে উচ্চ আদালতে আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। একটি মাত্র পথ খোলা আছে- রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করা। সেই আবেদন গ্রহণ করার মতো কোন গ্রাউন্ডও নেই। রাষ্ট্রপতি প্রাণ ভিক্ষার আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে তার দ- কার্যকর করতে কোন বাধা নেই। মামলা নিষ্পত্তি হবার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সে আপীল করেনি বা তার কোন ব্যাখ্যাও দেয়নি। আপীলের তো একটা সময়সীমা দেয়া থাকে। সে সময় শেষ। এখন সেই সুযোগও নেই। এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদসহ আইন বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, খুনী মাজেদের আপীল বা রিভিউয়ের কোন সুযোগ নেই। উচ্চ আদালতের রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। তারা আশা প্রকাশ করে আরও বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর বাকি খুনীদেরও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী বলেছেন, আসামি যদি আইনগত প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে চায় তা হলে পারবে। আর যদি অংশগ্রহণ করতে না চায় তাহলে দণ্ড কার্যকর করতে কোন বাধা থাকবে না। ২০০৯ সালের ১৯ নবেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সকল আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ৫ জনের দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মঙ্গলবার আব্দুল মাজেদ গ্রেফতার হয়েছে। অন্যদিকে আরও ৫ জন পলাতক রয়েছে। যারা পলাতক আছে তারা হলোÑ নুর চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, আব্দুর রশিদ, রাশেদ চৌধুরী। আর আজিজ পাশা ২০০২ সালে জিম্বাবুইয়েতে মারা যায়। বঙ্গবন্ধুর খুনী ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদকে মঙ্গলবার ভোর তিনটায় মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তোলা হলে বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি মাজেদের গ্রেফতার দেশবাসীর জন্য মুজিববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, রায় কার্যকরের ব্যবস্থা করা হবে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, খুনী মাজেদের আপীল করার সুযোগ নেই। এমনকি রিভিউ করতেও পারবে না। আপীলের তো একটা সময়সীমা দেয়া থাকে। সে সময় শেষ। এখন সেই সুযোগও নেই। এক মাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করতে পারবে, তারও গ্রাউন্ড নেই। রাষ্ট্রপতি আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে দণ্ড কার্যকর করতে কোন অসুবিধা নেই। এ অবস্থায় কিভাবে দণ্ড কার্যকর করা যায় তা সরকার ঠিক করবে। সে ক্ষেত্রে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি ঠিক করবে। তিনি আরও বলেন, আমি আশা করি এখন আরও চার খুনী পলাতক আছে তাদেরও ফিরিয়ে আনা হবে। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, এ ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করব না। তবে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনী মাজেদের আপীল বা রিভিউ করার কোন সুযোগ নেই। একমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারে। রাষ্ট্রপতি তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে দণ্ড কার্যকর করতে কোন বাধা নেই। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে এ মামলার শুনানি হয়েছে। যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। রায় ঘোষণার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আব্দুল মাজেদ আপীল করেনি বা তার কোন ব্যাখ্যাও দেয়নি। কাজেই এখন তার কোন আবেদন গ্রাহ্য হবে না। অন্যদিকে সরকারের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনী মাজেদ দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল। অবশেষে মঙ্গলবার গ্রেফতার হলো। তার পক্ষে কোন আইনী সুযোগ নেই। আপীল কিংবা রিভিউ করতে পারবে না। একমাত্র পথ খোলা আছে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করা। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি আবেদন প্রত্যাখ্যান করার পর তার দ- কার্যকর করার জন্য সরকার প্রস্তুতি নেবে। এদিকে এ মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদল্লাহ-আল-মামুন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনী আবদুল মাজেদকে মাত্র গ্রেফতার করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় অব্যাহতি চেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এখন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে আবেদন করতে পারবে। আবেদনে মাজেদ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করতে এবং বলতে পারে যে এই মামলায় কোন আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত ও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিষয়ে কিছুই জানে না। আবদুল মাজেদকে অবশ্যই তার প্রার্থনার সমর্থনে আবেদনে যুক্তিযুক্ত সমস্ত কারণ উল্লেখ করতে হবে। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ তার আবেদনটি মেনে নিতে পারে এবং হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মাজেদকে এই আদালতে আবেদন করার জন্য তাকে লিভ টু আপীল করার অনুমতি দিতে পারে। আর পিটিশন যদি খারিজ করে দেয় তাহলে লিভ টু আপীল করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করতে পারবে। সেটাও প্রত্যাখ্যান হলে দণ্ড কার্যকর করতে কোন অসুবিধা নেই। দীর্ঘ বিলম্বের ব্যাখ্যা দিয়ে সে আবেদন করতে পারে।
×